[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
লামায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসিতে মোবাইল কোর্ট এর জরিমানাচলতি ডিসেম্বরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে ই-লার্নিং স্কুল চালু করা হবে- পার্বত্য উপদেষ্টাতথ্য অফিসের আয়োজনে বাঙ্গালহালিয়ায় নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিতকাপ্তাইয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক টাইফয়েড টিকাদানে উঠান বৈঠকরাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা মানববন্ধনে, শিক্ষার্থীরা খেলার মাঠেঅনেক প্রকার শাক সবজি এক সাথে রান্না করলে সুষম পুষ্টি বজায় থাকে১০আর.ই ব্যাটালিয়ন কর্তৃক শিক্ষার্থীদেও মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণদীঘিনালায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে ফায়ার সার্ভিসের মহড়াখাগড়াছড়ির রামগড়ে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিতরাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় যাত্রা করলো রাজস্থলীর গবাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়

॥ মোঃ আজগর আলী খান, রাজস্থলী ॥
রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের গবাইছড়ি পাড়ায় বসবাসকারী পিছিয়ে পড়া স্থানীয় শিশুদের মাঝে এখন ছড়িয়ে পড়বে শিক্ষার আলো। দুর্গম এই এলাকাটিতে ৬৫ পরিবারের ৩৭০ জন সদস্য বসবাস করছে যাদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ জন রয়েছে শিশু। পাড়ায় কোন প্রাথমিক বা প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিশুরা দীর্ঘদিন বঞ্চিত হয়ে আসছিল প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহনের মৌলিক অধিকার থেকে। এখন তাদের এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় গবাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলো। আর পিছিয়ে নয় এখন এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে স্বপ্নর পুরণ হবে।

পাড়াটির গ্রাম্য প্রধান (কারবারি) জানান, দেশ স্বাধীনের পূর্বে পূর্ব পাকিস্তান আমলে সরকারি ভাবে এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও ১৯৮০ সালে অভ্যন্তরীণ স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারের কারনে বিদ্যালয় সহ মানুষজনকে পার্শ্ববর্তী স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মানুষজন আবারো এই এলাকায় বসবাস শুরু করে। তিনি আরো বলেন, পূর্বে আমাদের এলাকার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা অ-আ-ক-খ লিখতে পারতো না, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক এই এলাকায় বিদ্যালয় নির্মাণ করায় বর্তমানে শিক্ষার্থীরা সহ আমরা আজ অনেক খুশি। যেখানে দারিদ্রতার মাঝে এই দুর্গম এলাকায় নিজেদের দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হয় সেখানে নিজেদের শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে দীর্ঘপথ পায়ে হেটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যার কারনে পাড়ার শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা থেকে দীর্ঘ সময় ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছিলো। তিনি আরো বলেন, ফারুয়ার প্রত্যন্ত গবাইছড়ির পাহাড় ঘেঁষে রাইংক্ষ্যং খাল প্রবাহিত হওয়ায় এই এলাকাটি একটি বিচ্ছিন্ন জনপদে পরিনত হয়। পরবর্তীতে এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন কর্তৃক গবাইছড়ি ব্রীজ নির্মাণ এর মাধ্যমে রাইংক্ষ্যং খাল এর দুইপ্রান্তে সংযোগ স্থাপন করা হয় এবং এই এলাকার সাথে পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক দিনের অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন নিশ্চিত করা হয়।

এদিকে এ গ্রামের পিছিয়ে পড়াদের শিক্ষায় এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড কর্তৃক গবাইছড়ি পাড়ার শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি বিদ্যালয় নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড এর দিকনির্দেশনায় এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের নিরলস প্রচেষ্টায় গত ০২ ফেব্রয়ারী ২০২৫ তারিখ গবাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। অবশেষে দীর্ঘ তিন মাসের মধ্যে অর্তাৎ গত ০৪ মে ২০২৫ তারিখ ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড কর্তৃক “গবাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় উদ্ধোধন করা হয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীতে মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে। “গবাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়” এর দপ্তরী বিদ্যালয়ের ঘন্টা বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মূখী হওয়ার আহবান জানাচ্ছে। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর দিনে স্থানীয় জনসাধারণের উষ্ণ অভ্যর্থনা শেষ না হতেই তখন দুর্গম ঐ এলাকায় স্থাপিত নিজেদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরুর আগেই লাল সবুজের জাতীয় পতাকা সামনে রেখে সবার কানে শিশুদের কোমল কন্ঠে ভেসে আসছে “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”। নিজেদের জাতীয় সংগীত মন খুলে গাইতে পারার আনন্দ ভাসছে যেন প্রতিটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক সহ স্থানীয় হেডম্যান কারবারি সহ অন্যান্য সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দদের মাঝেও।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, এই এলাকার শিশুদের শুক্কুরছড়ি, ফারুয়া বা বিলাইছড়ি শহরে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে পড়ালেখা করা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে দীর্ঘদিন পর এই পাড়ায় আমাদের অনেক প্রতিক্ষিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে দেওয়ার জন্য। শিক্ষার্থীদের একজন অভিভাবক বলেন, আমি অনেক দূরে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছি, যাতায়াতের অসুবিধার কারনে পড়ালেখা শেষ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক গবাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, ফলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে জ্ঞান লাভের সুযোগ পাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় খুশি সকল শ্রেনীর শিক্ষাথীরা। আমরা সরকারের নিকট দাবী জানাচ্ছি যেন বিদ্যালয়টি দ্রুত জাতীয়করণ করা হয়।

দুর্গম এ এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলার সীমান্ত সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এই অঞ্চলের প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, গবাইছড়ি এলাকাটি খুবই দুর্গম হওয়ার কারনে এখানকার ছেলে মেয়েরা শিক্ষা গ্রহনের মৌলিক চাহিদা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল। পরবর্তীতে পাড়াবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় এবং অধিনায়ক, ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এর দিকনির্দেশনা ও এই ইউনিটের সকল সদস্যের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে “গবাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় “ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হয়। তিনি বলেন, আমি আনন্দিত বাংলাদেশের পতাকা এখানে স্ব-গৌরবে দাঁড়িয়ে আছে এবং কোমলমতি শিশুরা প্রতিদিন এখানে জাতীয় সংগীত গাইছে, এটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে আমাদের সবাইকে গর্বিত করে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনার সমস্ত ব্যয়ভার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বহন করা হচ্ছে এবং পরিচালনার সুবিধার্থে এই এলাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা হতে তিনজন শিক্ষক, দুইজন শিক্ষিকা ও একজন দপ্তরী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা তাদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছে।

শিক্ষার্থীদের বই ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিমাসের বেতন সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড কর্তৃক প্রদান করা হচ্ছে। এ এলাকার স্থানীয়রা জানান, সেনাবাহিনী তাদের অকল্পনীয় একটি আশা পূরণ করেছে। বর্তমানে তাদের একটাই দাবী বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা।