॥ নিজস্ব প্রতিবদক ॥
রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার নামে স্থানীয়দের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া সহ বহিরাগতদের নাম তালিকাভুক্ত করা আনসার ভিডিপি’র জমি দখল, চুরি প্রকল্পের অর্থ আতত্মসাৎ সহ নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের মানুষ তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ইতোমধ্যে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে সরেজমিনে গিয়ে লিখিত অভিযোগের উল্লেখে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর নজরুল ইসলাম ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ও টিউবওয়েল দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দরিদ্র ও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। তারা জানান, উল্লেখিত প্রলোভন দেখিয়ে নজুরুল ইসলাম লাইলি বেগমের কাছ থেকে ১৭ হাজার, নারগিছ বেগমের কাছ থেকে ৩ হাজার, আয়েশা বেগমের কাছ থেকে ২ হাজার, রাসেল মিয়ার কাছ থেকে ১০ হাজার সহ একাধিক দরিদ্র পরিবার থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়দের নাম বাদ দিয়ে বহিরাগতদের ভিজিডি কার্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছেন নজরুল। চলতি অর্থবছরেও একই কৌশলে কার্ড বণ্টনের চেষ্টা চলছে বলে তারা জানান। এছাড়া এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত ২ লাখ টাকা কাজ না করেই আত্মসাৎ এবং টিউবওয়েল দেওয়ার নামে ২০-৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
রাসেল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমি ভিজিডি কার্ডের জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। পরে কার্ডের খোঁজ নিতে গেলে উল্টো হুমকি দিয়ে আমাকে জানানো হয়, কার্ড দেওয়া হবে না। নারগিছ বেগমের অভিযোগ, প্রথমে ৩ হাজার পরে আবার ২ হাজার টাকা চেয়েছে বলে জানান। শেষে কার্ড দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও দেয়নি। ভুক্তভোগী নারগিছ বেগম তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, আগে দিসি ৩হাজার পরে আরো ২হাজার চাইসে, এর পরে কয় আরো ২ হাজার দিয়া দাও আমি বাইরে থেইক্যা আইন্যা হইলেও কার্ড দিয়া দিমু। পরে সারাদিন বসাইয়া রাইখ্যা সন্ধ্যেবেলা কয়কি একটা কার্ড দুইজনেরে দিবো। আমি কইছি ঐরহম কার্ড আমার লাগবো না। নারগিছ বেগম আরো বলেন, গত বিশ বছর হইয়া যাইতাছে আমি হের থেইক্যা জায়গাও কিনসি টাকা দিয়া। অহন আমারে আজ দেয় কাইল দেয় পরশু দেয় এই করতে করতে আমার জায়গা অহনো লেইখ্যা দেয় নাই। অপর দিকে আমেনার শ^াশুরি বলেন, ৬ হাজার টাকা দিয়ে আমার বড় ছেলের বউয়ের নামে কার্ড হয়েছে কিন্তু কার্ড পাইনি। মেম্বার বলেছে আমেনার কার্ড হয়নি। কিন্তু লিস্টে তার নাম আছে দেখলাম।
এলাকাবাসীর দাবি, নজরুল ইসলাম আওয়ামীলীগ নেতা এবং উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সুবিধার নামে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। প্রতিবাদ করলে তার অনুসারীরা ভয়ভীতি ও মারধর করে। অভিযোগ আরও রয়েছে, কেংড়াছড়ি বাজারে আনসার ভিডিপি’র জমি দখল, সরকারি ইট চুরি করে দোকান নির্মাণ, বাজার ঘাটের জায়গা দখল ও অন্যের প্লট জোরপূর্বক বিক্রির পাশাপাশি জেলা পরিষদের টেন্ডারে কাজ না করেও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। ২০০৩ সালে সরকারি টিউবওয়েলের পাইপ চুরি এবং ছাগল চুরির অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ভুক্তভোগীরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্থানীয় অসহায় পরিবারের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আওয়ামীলীগ করি এটাই আমার অপরাধ। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।
কেংড়াছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল মারমা জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে কিছু মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে ইউএনও সহ সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করা হয়েছে। জাতীয় মহিলা সংস্থার অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।