[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
বান্দরবানে ভিক্ষু ড. এফ দীপংকর মহাথের হত্যা, বৌদ্ধরা কি অসহায় ?পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র মানবিক কর্মকান্ডে অসহায়রা সেখানেই সুখের খোঁজাখুজি করেপাহাড়ের সময় এর মানবিক প্রতিষ্ঠান পিছিয়েপড়া অসহায়, দরিদ্রদের শিক্ষা, সাংস্কৃতির কল্যাণ সরসী “তেঁতুলপাতা”জনসেবার মানসিকতা ছাড়া সরকারি চাকরি অর্থহীন: সুপ্রদীপ চাকমাআমরা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতিতে শরিক হতে চাই- পার্বত্য উপদেষ্টারাঙ্গামাটিতে শিক্ষার মানোন্নয়নে অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি) গঠিতপার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নকৃত পানছড়ি বাস টার্মিনাল অব্যবহৃতবাঘাইহাটে বিজিবি কর্তৃক ‘‘মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫ উদযাপনরামগড় উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিত সভা অনুষ্ঠিতরাবিপ্রবিতে শিক্ষকদের রিচার্জ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র মানবিক কর্মকান্ডে অসহায়রা সেখানেই সুখের খোঁজাখুজি করে

॥ মিলটন বড়ুয়া ॥
“জীবনের সব ক’টা জানালা খোলা রেখে, হে সূর্য সন্তান, তোমরা এগিয়ে যাবে অনাগত সম্ভাবনার কালে”। দেশের বৃহৎ পাহাড়ি অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রাম মানে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। শত শত ছোট বড় পাহাড়, বন বনানীতে ঘেরা পাহাড়ি গ্রাম অঞ্চল, নির্মল বাতাসে জীবনের তরঙ্গে কঠিন পথ চলা। এভাবেই পাহাড়ী অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠী সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। আজকের সহজ লভ্য ও ডিজিটালের দুনিয়াতে এখনও অনেকে কঠিনে কঠিনে রয়েছে জীবন জিবীকার স্ব স্ব গন্তব্যে। কেননা পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ী দূর্গম এলাকার মানুষগুলোর জীবন জিবীকা এতই কঠিন তাতে প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে না গেলে তা বোঝাই যাবে না যে সেসব প্রত্যন্ত এবং অনুন্নত পাহাড়ী এলাকাতেও মানুষ নিশ্চিন্তে বসবাস করছে। এমনও আছে বনজঙ্গলের ফলমূল খেয়েও জীবন ধারণ করছে তাই তারাও সহযোগীতা চায়, মনুষত্ব এবং মানবিকতাকে কাছে পেতে চায়। যার কিছু কিছু কাছে পাইয়ে দিচ্ছে, কাছে টেনে নিচ্ছে, বিপদে ঝাঁপিয়েও পড়ছে, তাই সহযোগীতা চাওয়া, মনুষত্ব ও মানবিকতাকে কাছে পেতে চাওয়াদের চাহিদা পূরণে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাবাহিনী, বিজিবি’র সদস্যরাও তা দিচ্ছে।

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো অসহায় ও দরিদ্র মানুষ এ অধিকার থেকে কোন না কোনভাবে বঞ্চিত বা অপূর্ণই থাকছে। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি দেশী বিদেশী এনজিও প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে। তারমধ্যে জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো মাঝে মধ্যে কোন ব্যক্তি বা সন্তান কতৃক কৃতিত্বের আবার কোন কোন সময় অসহায়ের পাশে থাকতে দেখা যায়। তাদের অংশ গ্রহনগুলোর প্রাপ্তির কিছু আশা থাকে এবং থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু কারো কারো আবার সেই একক আশাতেও থাকে না, থাকে সার্বজনীন আশা। তাই মানবিক দিক গুলো কারো কাছে গুরুত্বের আবার কারো কাছে দায়িত্বের কিন্তু কারো কাছে গুরুত্ব, দায়িত্ব না হয়ে গুরুকর্তব্য বলেও মনে হচ্ছে। তাই দেখা যায় তিন পার্বত্য জেলা সহ উপজেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে সরকারের নির্বাহী প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিকদল বা সমাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাৎক্ষনিক বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে বা সমাজের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না সেখানে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সকল জোন প্রতিষ্ঠান এবং এর কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এছাড়াও নিজেদের আয়ত্তের মধ্যে থাকা অসহায় মানুষের সাহার্য্যে এগিয়ে যাচ্ছেন নৌ-বাহিনী এবং কদাচিৎ আনসার ব্যাটালিয়নও।

বিগত বছরগুলোতে সেভাবে লক্ষণীয় না হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) তিন পার্বত্য জেলার সদর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের জোন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একনাগারে পাহাড়ী এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোর পাশে থেকে বিভিন্নভাবে সাহার্য্য সহযোগীতা দিয়ে আসছে, যা চোখে পড়াই মতো। এমনকি প্রত্যেক ধর্মালবম্বীদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও (ঈদ, বৈসাবি, পূজাপার্বণ) সাধ্যমত তাঁদের অংশগ্রহণ সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসাও কুড়িয়ে নিচ্ছে নিত্য। আমরা এই নিত্য সাহার্য্য সহযোগীতার লক্ষ্যণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে দেখি নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, আগুনে পুড়ে যাওয়া, অসহায় ও দ্ররিদ্র মানুষের বাসস্থান তৈরীতে টিন প্রদান, আবার একেবারে অসহায়কে ঘর তৈরী করে দেওয়া, স্কুল-কলেজের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে আর্থিক সহ বই-খাতা-কলম, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও খেলাধুলার সামগ্রী প্রদান, বিদ্যুতের জন্য জেনারেটর বা সোলার প্যানেল প্রদান, প্রাকৃতিক দূর্যোগে পড়া মানুষের সাহার্য্যে তাৎক্ষনিক ঝাঁপিয়ে পড়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বিপদে পড়া মানুষগুলো চিকিৎসা সেবা, ঐষধ পায়না তাৎক্ষনিক তার ব্যবস্থা করা, বয়োজেষ্ঠ্য সহ দরিদ্রদের চিকিৎসা এবং ঔষধ প্রদান, যেখানে বিশুদ্ধ পানির অভাব সেখানে জনগনের জন্য পানির ব্যবস্থা করণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডায়রিয়া এবং ম্যালেরিয়া আক্রান্ত মূমূর্ষ রোগীদের বাঁচাতে হেলিকপ্টার যোগে হাসপাতালে প্রেরণ, পাহাড়ের দূর্গম কোন অঞ্চলের মা তাঁর সন্তান প্রসব জনিত বিপদগ্রস্ত হলে সেই ‘মা’কে হেলিকপ্টার যোগেও তাৎক্ষনিক হাসপাতালে নিয়ে সন্তান প্রসবে দ্রুত চিকিৎসা প্রদান। হোক লক্ষ লক্ষ কিংবা কোটি টাকা, সেবা দাতা আর অসহায় গ্রহীতারাতো উভয়ই সুখী, তাই বলা যায় এ মানবিকতা অহংকারের নয় কি? এই অংকার নষ্ট করা যায় কি, যাবে কি ?

পার্বত্য চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগেও স্থায়ীভাবে আস্থার সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই দূর্গমতাকে সহজ করতে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুন্দর দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে। তার মধ্যে আঞ্চলিক সংযোগ সড়ক যে সড়কগুলোকে বর্তমানে সীমান্ত সড়কও বলা হচ্ছে। রাঙ্গামাটির রাজস্থলী হয়ে বিলাইছড়ির প্রত্যন্ত ফারুয়ার বুক চিঁড়ে জুরাইছড়িকে কাঁছে টেনে বরকল উপজেলার সীমান্ত এলাকা ঠেগামূখ পর্যন্ত শত শত মাইল আঁকা বাঁকা সড়ক নির্মাণ মানুষ ভাবতেই পারেনি স্থান ভেদে যেখানে পৌঁছতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময়ের রাস্তা এখন এক ঘন্টার আস্থাতেও ঠেকেছে। ঠিক একই ভাবে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সহজ সড়ক যোগাযোগের প্রানান্ত চেষ্টা অব্যাহতও রয়েছে। ঐসব অঞ্চলের সাধারণ এবং কৃষি নির্ভর গ্রামের মানুষের উৎপাদিত ফল, ফসল, নানান পন্যের পঁচে যাওয়ার বা নষ্ট হওয়ার দিন এখন প্রায়ই শেষ। সড়কগুলো নির্মান হওয়াতে কৃষি ফসলী জমি থেকেই সরাসরি বাজারে উঠে আসছে যার সবগুলোই একেবারে টাটকা। তাই প্রত্যন্ত ঐসব অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিক ভাবেও সচ্ছল হচ্ছেন। যোগাযোগের উন্নতি হওয়াতে অনাবাদি জমিও এখন আবাদে ভরপুর হচ্ছে, পরিত্যক্ত পাহাড়ে বৃক্ষের সংখ্যা বাড়ছে। এলাকা এবং জায়গাগুলোর যেমন কদর বেড়েছে তেমন সেসব স্থানের মানুষগুলোর মুখে সফলতার হাসিও ফুঠেছে। কিন্তু বাঁধ সাধে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক এবং প্রতিহিংসার চিত্রগুলো যখন সামাজিক সহাবস্থান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে ধাওয়া করে। নানান ফর্দে অসহায়, দরিদ্র এবং সাধারণ মানুষগুলোর অধিকার নষ্ট করা এবং পকেট কাটার ফাঁদ পেতে রাখে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি এবং উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীরা যেন সবসময়ই খুঁদ খোঁজে, ষড়যন্ত্রের জালও বুনে।

কোন কোন সময় মনে হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বিনষ্টের ডিরেক্টর-প্রডিউর-এক্টরসরা তালগোল পাকানোর আর ষড়যন্ত্রের ফাঁদেই থাকে। এইসব ফাঁদগুলো পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাঙ্গালি সকল মানুষের সমন্বিত উদ্যোগেই তা বন্ধ করে দিতে হবে। যার যার অবস্থান থেকেই সম্প্রীতিকে অটুট রাখতে কাঁদে কাঁদ মিলিয়েই কাজ করে যেতে হবে। সেনাবাহিনী ও বিজিবি সকল প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে দরিদ্র এবং অসহায়দের সহযোগীতা করতেই হবে এটাকেই প্রাধান্য দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। পাহাড়ি-বাঙ্গালি তাঁদের কাছে তাৎক্ষণিক ভরসার একটি স্থান তৈরী হয়েছে সেটা হলো সেখানের দায়িত্বরত পদস্থ সহ সকল সদস্যগন। জাতীয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসব বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা নিজের পরিবার সন্তান-সন্তুতি সহ সকলকেই দুরে রাখলেও অসহায় মানুষগুলোকে কাছে টেনে নিচ্ছে হাসিখুশিতে যেখানে নিজের সবাইকে পাচ্ছে এই বিশ^াসেও। এই যে অসহায় বা দরিদ্র মানুষের মাঝে তারা যেভাবে যতটুকু সম্ভব সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছে তাতে প্রত্যেকেই যাহাতে পায় তার ব্যবস্থা করায় মানুষও সমভাবেই এবং একসাথেই তা গ্রহন করছে হাঁসিখুশিতে। সমসহযোগীতা দেখায় সকলের মাঝে সামজিক সহাবস্থান তৈরীতেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের একটি চিত্রও ফুঠে ওঠে স্বাভাবিকভাবেই। সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র এসব মানবিক কর্মকান্ডের বিষয়গুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর অসহায়, দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষগুলোকে নানাভাবে যেমন সাহস যোগায় তেমন আস্থা, ভরসা আর বিশ্বাসের প্রতিশ্রুতির প্রতীক বলে তারাও তাদের মতো করে সেখানেই সুখের খোঁজাখুজি করে। তাই কবির ভাষায় যেন ওরাও বলে ‘সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা আশা তার একমাত্র ভেলা’।

লেখক- মিলটন বড়ুয়া, সম্পাদক ও প্রকাশক
সাপ্তাহিক পাহাড়ের সময়
ananno2010@gmail.com