[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
বান্দরবানের লামায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০ শতক জায়গা বেদখলবান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে হেডম্যান মংথোয়াইলা এর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগকামাল হোসেন ছিলেন একজন অকুতোভয় নির্ভীক সাংবাদিকবান্দরবানের থানচিতে হেডম্যান পাড়ার কালভার্ট গ্রামবাসীদের মরণফাঁদরাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যস্ত জনগনের মাঝে ক্ষোভকাপ্তাই কর্ণফুলী সরকারি কলেজ এর অধ্যক্ষ আর নেইচট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি রাঙ্গামাটির দুই থানা পরিদর্শনগণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে জাতীয়তাবাদী দলের কোন নেতাকর্মী আর পিছ পা হবে নারাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারাদুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মকে সৎ ও নৈতিক শিক্ষায় গড়ে তোলা জরুরি
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

বান্দরবানের লামায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০ শতক জায়গা বেদখল

॥ লামা উপজেলা প্রতিনিধি ॥
বান্দরবানের লামা উপজেলায় চাম্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় ১৪টি দোকান জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগ নেতার ভগ্নিপতি সহ কয়েকজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থিত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাম্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই জবরদখল করে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ শতক জমি দখলদারদের হাতে। তারা গত ৩৩ বছর ধরে দোকান তৈরি করে তাতে ব্যবসা করছেন। একমাত্র মোঃ কামাল হোসেন বিদ্যালয়কে নিয়মিত ভাড়া দেয়। এছাড়া বাকী ১৩টি দোকানের দখলদারদের তিন-চারজন বিগত সময়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সামান্য ভাড়া দিতেন কিন্তু ৮-৯ বছর ধরে সেটাও দিচ্ছেন না।

প্রায় ১ বছর হলো আওয়ামীলীগ সরকার পালিয়ে গেলেও এখনো তাদের দোসররা এইসব অবৈধ দখল ছেড়ে দেয়নি। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত ও শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানটির জায়গা জবরদখলের বিষয়ে সর্ব মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। জানা যায়, ৩০৭ নং চাম্বি মৌজার ১৮ নং খতিয়ানের দাগ নং ১৯২, ১৯৩ দাগাদির আন্দর ৯৮ শতক জমির উপর তৈরি করা হয়েছিল বিদ্যালয়টি। বর্তমানে প্রায় ৮শত ছাত্রছাত্রী ও ৯ জনের শিক্ষক মন্ডলী নিয়ে চলছে এই বিদ্যালয়। যুগের পরিবর্তনের সাথে তালমিলিয়ে আজ বহুতল ভবনে ভরপুর বিদ্যালয়টি। বহুতল ভবন আর শিক্ষকের পরিবর্তন হলেও বিদ্যালয়ের জমির উপর নির্মিত পাকা, সেমিপাকা জবর-দখলকৃত দোকানঘরগুলো আজও আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের ভগ্নিপতি এইচ এম আবু জাহাঙ্গীর চৌধুরী প্রকাশ (কালা জাহাঙ্গীর) সহ অনেকের দখলে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বিগত সময়ে স্কুলের এসএমসি কমিটির সভাপতি থাকাকালীন নিজের মর্জিমত নামমাত্র ভাড়ায় তার ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীরকে ৪টি দোকান ভাড়া দেখায়। যাতে প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষর করেনি। ভাড়া চুক্তি করলেও সে কখনো স্কুলকে ভাড়া দেয়নি। ৫ আগস্টের পর চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন পলাতক হলেও উদ্ধার হয়নি বিদ্যালয়ের জমি।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৩টি দোকান প্লটের মধ্যে এইচ এম আবু জাহাঙ্গীর ৪টি, জাহানারা বেগম ১টি, যুব উন্নয়ন সমিতি ২টি, মোঃ জাকারিয়া ১টি, আব্দুল লতিফ ২টি, মোঃ নাজিম উদ্দিন ১টি, রফিক আহমদ ১টি এবং বিএনপি কার্যালয় নামে ১টি দোকান জবরদখল করে রেখেছেন। যেসব দোকান তারা উপ-ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে নিয়মিত টাকা নিচ্ছে। জবরদখলকারীরা একসময় স্কুলের জায়গা হিসাবে ভাড়া চুক্তিপত্র করলেও পরে অস্বীকার করে প্রভাব দেখিয়ে ভাড়া দেয়না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্কুলের জায়গায় অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ এবং দখলদারদের উচ্ছেদে সাবেক প্রধান শিক্ষকরা, বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং আমি (বর্তমান প্রধান শিক্ষক) বিদ্যালয়ের এই জায়গা উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ৪২টি চিঠিপত্র প্রেরণ করেছি। কোন সুরাহা পায়নি। বরং দখলদাররা নামে-বেনামে অস্তিত্ব বিহীন অভিযোগ এনে শিক্ষকদের হয়রাণী করছে। অজ্ঞাত কারণে আমাদের আবেদন গুলো তদন্ত হয়না, কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে করা ভুয়া অভিযোগ গুলো বার বার তদন্ত হয়। গত ৭ আগস্ট ২০২৫ইং অস্তিত্ব বিহীন ও সমন্বয়ক পরিচয় দেয়া জনৈক আর সৈয়দ কুরাইশি নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের তদন্ত হওয়ার কথা ছিল। যদিও সে তদন্ত আবারো তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রভাবশালীদের হুমকি আর ভয়ভীতির কাছে আমরা অসহায়। প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন স্কুলের বেদখল হওয়া দোকান প্লট ও জায়গা উদ্ধারের প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন।

অবৈধ দখলদার আব্দুল লতিফ, শাহ আলম (জাহাঙ্গীরের ভাড়াটিয়া), মোতালেব হোসেন (যুব উন্নয়ন সমিতির ভাড়াটিয়া) জানান, এগুলো স্কুলের জায়গা জানি। আমরা দোকান ঘর নির্মাণ বা অন্যের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছি।

লামা উপজেলা শিক্ষা অফিসার দেবাশিষ বিশ্বাস বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে আমার চেয়ে বড় বড় লোক মাথা ঘামাচ্ছে। জেলা পরিষদের মাসিক মিটিংয়েও এই বিষয়টি উঠেছে। এখনো সুরাহা হয়নি। এদিকে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রধান শিক্ষকের লিখিত আবেদনের জেরে লামা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করেন। তিনি বলেন, সরেজমিনে বিদ্যালয়ের জবরদখলের তদন্তকাজ শেষ করেছি। তাতে জবর দখলের সত্যতা মিলেছে। আমি তদন্ত রিপোর্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জমা দিয়েছি।

লামা উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈন উদ্দিন জানান, তদন্ত রিপোর্টে স্কুলের জায়গা জবরদখলের সত্যতা পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে বিধি মোতাবেক জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।