রাঙ্গামাটির আইনকন ঝুলন্ত সেতু ১৫ দিন ধরে ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ১৫ দিন ধরে ডুবন্তু অবস্থায় রয়েছে রাঙ্গামাটির আইকন খ্যাত পর্যটকনের ঝুলন্ত সেতু। সেতুটি পানিতে ডুবে যাওয়ায় পর্যটন কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুর উপর চলাচলের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ কারণে প্রতিদিন অনেক পর্যটক সেতুতে উঠতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। তবে কাপ্তাই হ্রদের পানি আরও ছাড়া হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেতুর পাটাতন ভেসে উঠবে বলে জানিয়েছে পর্যটন কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদে পানি এখনও ভরপুর। যার ফলে পর্যটক কম হওয়ায় পর্যটন ঝুলন্ত সেতু একপাশে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে ট্যুরিষ্ট বোটগুলো। এতে বেকার হয়ে পড়ছে বোট চালকরা। এদিকে সেতুতে উঠতে না পারলেও অনেক পর্যটক সেতুর সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের ক্যামেরা বন্দি করছেন এবং সেতুর ওপারে বোটে করে ঘুরতে যাচ্ছেন।
রাজশাহী থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক রুবিনা ও মাসুদ রানা জানান, অনেক দূর থেকে তারা আশা নিয়ে এসেছেন, ঝুলন্তু সেতু দেখবো বলে। কিন্তু সেতুতে উঠতে বা দেখতে না পারায় একটু খারাপ লাগছে। তারা আরও জানান, তবে রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তাদের মুগ্ধ করেছে। চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক রাহুল জানান, এই ঝুলন্ত সেতুটি টিভি বা ছবিতে দেখেছেন তিনি। মূলত এই সেতুটি দেখার জন্য আসছেন রাঙ্গামাটিতে। যেহেতু বন্যার পানিতে প্রাকৃতিকভাবে সেতুটি তলিয়ে গেছে, সেহেতু কিছুই করার নেই,তবে একটু খারাপ লাগছে।
এদিকে রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যায়। এতে গত ৩০ জুলাই ঝুলন্ত এ সেতু পানিতে ডুবে যায়। বুধবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত সেতুটি ৬ ইঞ্চি পানির নিচে রয়েছে। তবে কাপ্তাই হ্রদের পানি আরও ছাড়া হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেতুর পাটাতন থেকে পানি সরে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা ১০৭ দশমিক ০.৭ ফুট মিনস সি লেভেল। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পাঁচটি ইউনিট এখনো সচল আছে এবং সর্বোচ্চ ২২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটি সিএইচটি ট্যুরিজম অ্যান্ড কালচার রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, রাঙ্গামাটির জেলার আইকন এই সেতু। এই সেতুকে কেন্দ্রে করে মানুষ এখানে ঘুরতে আসে। কিন্তু এই সেতুটি যখন নির্মাণ করা হয়েছে,তখন কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিবেচনা না করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যার ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই সেতুটি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পের উপর নীতিবাচক প্রভাব পড়ে। তিনি আরও জানান, সেতুটি দীর্ঘ বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে, কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুটি। তবে উচিৎ হবে, সেতুটি সংস্কার বা নতুন আরও একটি সেতু নির্মাণে কোনো উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান যেমন পর্যটন করপোরেশন,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা পরিষদ উদ্যোগ নিলে এতে পর্যটকের যে হতাশ তা হবে না বরং পর্যটক বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা জানান, সেতুটি নির্মিত হয়েছে প্রায় ৪০ বছরের উপরে। তবে পর্যটন কর্তৃপক্ষ চাচ্ছেন যে, এখানে আধুনিক একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের জন্য। ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে সেতুটি নির্মাণের জন্য একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। উন্নয়ন বোর্ড যদি সেতু নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করেন,তাহলে আমরা পর্যটকদের বিনোদনের জন্য আধুনিক ও উন্নতমানের একটি সেতু নির্মাণ করতে পারবো ।
উল্লেখ্য,পর্যটন শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে রাঙ্গামাটিতে ঝুলন্ত এ সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি কাপ্তাই হ্রদের উপর অবস্থিত এবং রাঙ্গামাটির পর্যটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন সেতুটি নির্মাণ করেছিল।