[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
রামগড়ে কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি জসিম, সম্পাদক দেলোয়ারযুবদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে: কাজল তালুকদারজীবিকা ও উন্নয়নের সংগ্রামে আত্মনির্ভরতার ছবি পাহাড়ের অনেক নারীখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপনমাটিরাঙ্গায় নানা কর্মসূচিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপনরামগড়ে বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের সাথে ব্যবসায়ীদের মতবিনিময়মাটিরাঙ্গা জোনের অভিযানে ৯২.৭ লাখ টাকার অবৈধ কাঠ জব্দ৭দিন পর বন্ধ করা হল কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাটরাঙ্গামাটিতে বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিষয়ে পৌরকর্তৃপক্ষের সাথে সনাকের অ্যাডভোকেসি সভারামগড়ে টাওয়ার কাজ করছে না নেটওয়ার্ক বন্ধ, চাঁদা না পওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি!
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

জীবিকা ও উন্নয়নের সংগ্রামে আত্মনির্ভরতার ছবি পাহাড়ের অনেক নারী

॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥
পাহাড়ের বুক চিরে ঝুম চাষ আর বনজ সম্পদে ভরপুর গ্রামীণ জনপদ। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথ পেরিয়ে সকাল বেলায় ঝুড়ি কাঁধে মাথায় বা হাতে দেশীয় ফলমূল ও পাহাড়ি তাজা শাকসবজি। জীবিকার প্রয়োজনে তারা প্রতিদিনই হাঁটেন কাঁটাভরা পথ তবু ক্লান্তি নেই চোখেমুখে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় সাপ্তাহিক হাটবারে এমন দৃশ্য প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে স্থানীয় পাহাড়ি নারীরা ছোট ছোট পলিথিন বা বাঁশের ঝুড়িতে করে বুনো শাক, লাউ, চাল কুমড়া, ঝিঙে, ঢেঁড়স, বনআলু, বাঁশ কোঁড়ল, কচুপাতা, কলমিশাক, পাহাড়ি শসা, পুদিনা পাতা, কচু শাক, কচুর লতি, আদা, হলুদ, ব্যঙ, শামুক, ঝিনুক সহ নানা ধরনের শাকসবজি বিক্রি করেন। এসব সবজি হয় তাদের নিজেদের জুমচাষ বা আশেপাশের বনজ এলাকা থেকে সংগ্রহ করা।

শনিবার সকালে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের পাহাড়ি নারীরা তাজা শাক সবজি নিয়ে বসে আছেন ক্রেতায় অপেক্ষায় যদিও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না তাদের। ঘণ্টার মধ্যেই পুরো বাজারে বেচা বিক্রি শেষ। তবে বয়স্ক নারী দের অনেককে দেখা যায় শবজি নিয়ে বসে আছেন। সবাই বলে উপজাতিরা বাজারে না আসলে বাজার জমে না। যেহেতু মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর সেহেতু এখানে প্রতি বাজার বারের দিন সকল স্তরের লোকজন তাজা শাক সবজি কিনেন। এই সবজিগুলো একদিকে যেমন পুষ্টিসমৃদ্ধ, অন্যদিকে তেমনি বাজারে জনপ্রিয়। স্থানীয়দের কাছে পাহাড়ী নারীদের এসব জৈব ও টাটকা পণ্যগুলোর চাহিদাও বেশি। বাজারে আনা মাত্রই বিক্রি হয়ে যায় বসে থাকতে হয় না।

অর্থনৈতিক ভূমিকা: পাহাড়ি নারীদের এই শ্রম শুধু তাঁদের পরিবারের উপার্জনের পথই নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক চক্রের অংশ। এই কাজে নিয়োজিত নারীদলের অনেকে এখন নিজেদের আয় দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন, সংসারের ব্যয়ভার বহন করছেন। এমন অনেকে আছেন সাপ্তাহিক বাজারের দিন যা বিক্রি করবেন তা দিয়ে পুরো সাপ্তাহের জীবিকা নির্বাহ করেন।

টেকসই উন্নয়নে অবদান: এভাবে স্থানীয় কৃষিভিত্তিক ফসল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে তারা সমাজে একটি শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছেন। জলবায়ু সহনশীল প্রাকৃতিক কৃষিকাজ এবং রাসায়নিকমুক্ত সবজি বাজারজাতের মাধ্যমে তারা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অবদান রাখছেন। এসব তাজা শাক সবজি স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক বা স্বাস্থ্যসম্মত বলেই সকলে ক্রয় করেন।

একজন শবজি বিক্রেতা নারীর অভিব্যক্তি: মাটিরাঙ্গা বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা এক পাহাড়ি নারী শিউলি ত্রিপুরা বলেন, জুমে কাজ করি, সবজি এনে বিক্রি করি। এখন নিজের টাকায় চাল, ডাল কিনতে পারি, বাচ্চার খরচও দেই। আগে শুধু স্বামীর উপর নির্ভর করতাম, এখন নিজের উপার্জনেই গর্ব হয়।

ক্রেতার অভিব্যক্তি: জামাল নামে এক ক্রেতা বলেন, পাহাড়ি নারীদের এই সংগ্রামী জীবন কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের গল্পই নয়, এটি আত্মমর্যাদা, পরিশ্রম এবং নারী ক্ষমতায়নের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এদের কার্যক্রম সমাজে নারী ভূমিকার ইতিবাচক রূপ তুলে ধরে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। তাজা শাক-সবজি কিনতে আসা মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আমি প্রতি শনিবার নিজ হাতে তাজা শাক-সবজি কিনে নিয়ে যাই। পাহাড়ে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজিগুলোর প্রতি সবারই আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। আজ আমি জুমের মারফা, মরিচ, ঢেঁকি শাক ও কচুর লতি কিনেছি। এখানে লতি কেটে দেওয়া হয় বলে বাসায় কুটার ঝামেলা থাকে না এটাই সবচেয়ে ভালো লাগে।

মাটিরাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সভাপতির অভিব্যাক্তি: মাটিরাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জয়নাল বলেন, কেবল অর্থ উপার্জনের জন্যই নয়, পাহাড়ি নারীদের এই বাজারমুখী কার্যক্রম তাঁদের আত্মনির্ভরতা, কর্মনিষ্ঠা ও সাহসিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সংসারের চাকা ঘোরাতে তাঁরা সমানতালে কাজ করে চলেছেন পুরুষদের সঙ্গে। তাঁদের এই শ্রম, সংগ্রাম ও সাফল্য পাহাড়ি সমাজে নারীর শক্ত অবস্থান এবং উন্নয়নমূলক ভূমিকারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ।