রাঙ্গামাটিতে পানিবন্দী ২৫ হাজার মানুষ, দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করছে প্রশাসন
॥ দেবদত্ত মুৎসুদ্দী ॥
টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রাঙ্গামাটি জেলা সদর উপজেলার কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী এলাকা সহ মোট ছয়টি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। এরমধ্যে নিম্নাঞ্চলে বন্যায় ডুবেছে বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি, বরকল ও বিলাইছড়ি উপজেলা। এতে ব্যাপক ফসলের ক্ষতি এবং মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গামাটি পৌর এলাকার আসামবস্তি, ব্রাহ্মণটিলা, বাস টার্মিনাল এলাকা ও বাঘাইছড়ি উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি বঙ্গলতলী, মারিশ্যা, রূপকারী, খেদারমারা, বাঘাইছড়ি এবং আমতলী ইউনিয়নের অনেক গ্রাম পানি তলিয়ে গেছে। বাঘাইছড়ি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টি ওয়ার্ড পানিতে প্লাবিত হয়ে অভ্যন্তরিণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিলাইছড়ি উপজেলা সদর, ধূপ্পারছড়, বহলতলী, বাঙ্গালকাটা এলাকা ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলেও কাপ্তাই হ্রদের পানি প্রবেশ করেছে। লংগদু উপজেলার মাইনী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝরনা টিলা, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়ন, বগা চত্বর ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া, গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনাগাঁও পাড়া ও মাইনী ইউনিয়নের এফআইডিসি বড় কলোনি প্লাবিত হয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটিতে বন্যায় দুর্গত মানুষের জন্য ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রীত রয়েছে প্রায় ৯ শতাধিক মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার এবং ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। আর জানা যায়, বর্তমানে বন্যায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ শতাধিক, ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৩৯ হেক্টর এবং গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুইশত। তবে কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানির লেভেল ১০৮.৬০ ফুট (এমএসএল) যা বিপদসীমা ১০৯ ফুট (এমএসএল) হতে (০.৪০ফুট) এমএসএল নিচে রয়েছে। টানা বর্ষণ না হলে কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত কমে যাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষরা।
এই প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ জানান, জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত অঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনগণের পাশে প্রশাসন আছে এবং থাকবে। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা মাঠপর্যায়ে থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করছেন। অনেকে নিজে উপস্থিত থেকে ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন, আবার কোথাও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে পানিবন্দী মানুষদের জন্য। প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও দুর্যোগ মোকাবেলায় ভূমিকা রাখছেন।