আমাদের অস্তিত্ব, আত্মপরিচয়ে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই: উষাতন তালুকদার
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
আমাদের দুঃখময় জীবনের মাঝেও আমি নিজেকেও দেখছি আমার মাঝে আনন্দ লাগছে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সকল জাতিগোষ্ঠী আদিবাসী দিবস পালনে জড়ো হয়েছেন। আমাদের অস্তিত্ব, আত্মপরিচয়, সাংবিধানিক স্বীকৃতির অধিকার ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনের সামিল হওয়া সংহতি প্রকাশ করার জন্য সংগ্রামে একীভূত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবো। কিন্তু নির্বাচন ও রাজনৈতিক যে পরিবেশ তাতে পুরো বাংলাদেশ এখন খেলার পুতুল হিসেবে পরিণত হয়েছে। শনিবার (৯আগষ্ট) আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার এ কথা বলেন।
সকালে রাঙ্গামাটি পৌরসভা মাঠ প্রাঙ্গনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি উপ-সবিচ (অব:) প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, উদ্বোধক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কবি শিশির কান্তি চাকমা, সাবেক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান, বাংলাদেশ তংচঙ্গ্যা কল্যান সংস্থার সভাপতি বিশ্বজিৎ তঞ্চঙ্গ্যা, থুয়াইপ্রু খিয়াং। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের (পার্বত্য অঞ্চল) এর সাধাণ সম্পাদক ইন্টু মনি তালুকদার।
উষাতন তালুকদার বলেছেন, আমাদের জীবন এখন নিরানন্দময়, দু:খময়। আমরা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চাই। এ স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি এখন সরকারের ব্যাপার। বৃহত্তর বাঙালী জনগোষ্ঠীর ব্যাপার। আপনারা বড় জাতি হিসেবে আপনাদের কতটুকু মানবতা আছে সেটি প্রমাণ করবে আমাদের পাহাড়িদের কতটুকু আপন হিসেবে নিবেন এবং অধিকার দেবেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে জড়িয়ে ধরে নেন, আমাদেরকে দূরে ঠেলে দিবেন না। আমরাওতো বাংলাদেশের নাগরিক, আমরা ভিন দেশী নই। তাই আমরা সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করি। কোন দেশের কোন জাতি-গোষ্ঠীকে পিছনে রেখে দেশের উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া যায়না। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের শত্রু ভেবে কিংবা সে রকম আচরণ করা হলে এটা কখনও এ দেশের জন্য মঙ্গল হবেনা।
জাতীয় নির্বাচনের ইস্যু টেনে ঊষাতন তালুকদা আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রশ্ন রয়ে গেছে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা। আমেরিকা রাশিয়া এরা এখন পরাশক্তি। এদের এখন দৃষ্টি পড়েছে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে আর মায়ানমারের দিকে। তাইতো ওরাও আমাদের বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্ঠা সিইসিকে চিঠি লিখেছেন ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু চিঠি লিখলেও মানুষের মনে প্রশ্ন রয়ে গেছে আদৌ নির্বাচন হবে কি-না। কেন না আমেরিকা কি চায় সেটার উপর নির্ভর করছে আগামী। তবে ভারতেরও তো খেয়াল ও ইচ্ছা রয়েছে, তারাও ভিতরে ভিতরে পরাশক্তি। তাদের উপর এখন আমাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। তাই মনে হচ্ছে পুরো বাংলাদেশ এখন খেলার পুতুল হিসেবে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ আজো নিপিড়িন নির্যাতনের মধ্যদিয়ে রয়েছে। তারুন্যের জয়গানের মধ্যদিয়ে নতুন বাংলাদেশ রচিত হলেও পাহাড়ের আদিবাসী জনগোষ্ঠী এখনো শোষণ বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে। অবিলম্বে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করারও আহ্বান জানান। বর্তমান সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের আদিবাসীরা যদি তাদের অধিকারসহ আদিবাসী স্বীকৃতি না পায় তাহলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন।
আলোচনা সভা শেষে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। হাজার হাজার পাহাড়ী জনগোষ্ঠী তাদের অধিকার আদায়ের এ দিবস পালনের সামিল হন তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে। পরে র্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।