৭২এর মুজিববাদী সংবিধানে সকল জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি: নাহিদ ইসলাম
॥ আরিফুর রহমান ॥
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে অ-বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে বিরোধ করে রাখা হয়েছে। ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের নামে ইসলামের সাথে অন্য ধর্মের বিরোধ করে রাখা হয়েছে। ৭২এর মুজিববাদী সংবিধানে সকল জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রবিবার (২০ জুলাই) দুপুর ১টায় শহরের বনরূপাস্থ সিএনজি ষ্টেশনে অনুষ্ঠিত জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এনসিপি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি কর্তৃক আয়োজিত এ সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সহ আরো বক্তব্য রাখেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনীম জারা, সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন সহ দলটির কেন্দ্রীয় এবং রূপা তংচঙ্গ্যা সহ জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা। সমাবেশের শুরুতে রাঙ্গামাটি এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারি বিপিন জ্যোতি চাকমা স্বাগত ভাষণ দেন।
সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সকল জাতিগোষ্ঠীকে সমমর্যাদা দিয়ে একটি সংবিধান তৈরি করতে চাই। এমএন লারমা ৭২ এর সংবিধানের বিরোধিতা করেছিলেন। আমরা এ সংবিধানকে বাদ দিয়ে এমন একটি সংবিধান তৈরি করতে চাই যেখানে সবার অধিকার থাকবে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ী জনগোষ্ঠী যেমন ভূমির অধিকার নিয়ে লড়াই করছে, তেমনি বাঙালীরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। উভয় জনগোষ্ঠী এখানে অধিকারহীন আমাদের একসাথে লড়াই করতে হবে।
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম বলেন, পাহাড় পানিশমেন্ট পোস্টিং এর জায়গা হতে পারে না। দূর্নীতিবাজদের আইনের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিমি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে উল্লেখ কওে বলেন, আমাদের ভূল হলে আমরা সংশোধন করে নিবো। কথার সাথে কথার লড়াই হতে পারে তবে মঞ্চ ভেঙে দেয়া, ব্যানার পুড়িয়ে ফেলা, গায়ে হাত দেয়াতো লড়াই হতে পারে না। আমরা সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের রাজনীতি চাই।
এর আগে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা রাঙ্গামাটি পৌঁছলে রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দরা সহ শহরের শিল্পকলা একাডেমি হতে বনরুপা সিএনজি ষ্টেশনে এসে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে এনসিপির সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের করে বনরুপা পৌছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় এনসিপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে দলটির নেতাকর্মীরা।
অপর দিকে এনসিপি’র সমাবেশেকে কেন্দ্র করে প্রশাসন প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিলে পথচারী এবং জনসাধারণ চরম দুইঘন্টার অধিক ভোগান্তিতে পড়ে। চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা ছাত্র-ছাত্রীরা নিজি নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে কষ্টে পড়লে অনেকে পায়ে হেঁটেও যার যার গন্তব্যে যেতে সক্ষম হয়। তবে এসময় অভিভাবকদের মাঝে একটি উৎকন্ঠাও কাজ করেছে যদি কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে কিছু অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন শহরের ষ্টেডিয়াম কিংবা রিজার্ভ বাজার এলাকার মাঠে সমবেশের অনুমতি না দিয়ে প্রশাসন কেন প্রধান সড়কের পাশে এভাবে সমাবেশ করতে অনুমতি দিয়েছেন।
অন্য দিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সচেতন মহল এনসিপির এ সমাবেশ এবং জুলাই পদযাত্রাকে স্বাগত জানিয়েছেন। শান্তিপূর্ন সমাবেশ হওয়াতে সকলের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে তারা গত বছর অর্থাৎ জুলাই অভ্যুত্থানের অংশ হিসেবে রাঙ্গামাটিতে ২০জুলাই অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাবেশের মিছিলকে কেন্দ্র করে সংগঠিত বনরূপায় মসজিদ ও বৌদ্ধ মন্দির এ হামলার ঘটনার বিষয় কেন কিছু বললো না। এছাড়া একে কেন্দ্র করে ছাত্র সমাবেশে অংশগ্রহনকারী কাপ্তাইস্থ কর্ণফুলী কলেজের ছাত্র অনিক চাকমাকে পিটিয়ি হত্যা ঘটনার বিচারের বিষয়টিও কিছু না বলায় তা এড়িয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া অনিক চাকমা হত্যার বিষয়ে কিছু না বলায় ছাত্র অনেকের মাঝেও ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।