বান্দরবানের লামায় রূপসীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি
॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
বান্দরবানের লামা উপজেলায় এ বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ‘রূপসীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের’ থেকে ১৫ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে, কিন্তু কেউই পাস করেনি। বিদ্যালয়টির নিয়মিত ৭ জন পরীক্ষার্থী গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে এবং অনিয়মিত ৮ জন পরীক্ষার্থী শহীদ আব্দুল হামিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামে পরীক্ষায় অংশ নেয়। বৃহস্পতিবার (১০জুলাই) এসএসসি রেজাল্ট প্রকাশিত হলে সবাই ফেল করায় সমালোচনা মুখে পড়ে বিদ্যালয়টি।
জানা গেছে, লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের সদরে অবস্থিত বিদ্যালয়টি। পাঁকা দোতলা একাডেমি ভবন, আলাদা ছাত্রাবাস এবং বিশাল মাঠ সহ নান্দনিক পরিবেশে অবস্থিত স্কুলটি। বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ ৮ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। আবুল কালাম- প্রধান শিক্ষক, কাজী আলাউদ্দিন- সমাজ বিজ্ঞান, মোঃ সলিমুল্লাহ- ইসলাম ধর্ম, সালাউদ্দিন আল মামুন- গণিত, বিপুল কান্তি নাথ- কৃষি শিক্ষা, আনোয়ার হোসেন- ইংরেজি, মাহাবুব আলম- শারীরিক শিক্ষা ও মহসিন আলী- ভৌত বিজ্ঞান বিভাগে দায়িত্বে রয়েছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এবং বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত। বিদ্যালয়টি ১লা জানুয়ারী ১৯৯০ সালে স্থাপিত হয়।
অভিভাবক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, আমার ছেলে মোঃ সাহেদ আলী এবছর স্কুল থেকে এসএসসি (অনিয়মিত) পরীক্ষা দিয়েছে। সে সহ এ বিদ্যালয়ে এবার কেউ পাস করতে পারেনি। এতে আমাদের এলাকার নাম খারাপ হচ্ছে। স্কুলে লেখাপড়া হয়না বললেই চলে। বিদ্যালয় পাশের বাসিন্দা সাখাওয়াতুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকরা আছে তাদের মানমর্যাদার লড়াই নিয়ে। কেউ প্রধান শিক্ষক, কেউ হেডমাস্টার ও কেউ নিজেকে এনটিআরসি শিক্ষক দাবী করে দ্বন্দে লেগেই থাকে। ঠিকমতো ক্লাস নেন কিনা সেটি সংশ্লিষ্টদের দেখা প্রয়োজন। ইসলাম শিক্ষা বিষয়েও কি বাচ্চারা ফেল করে ?
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের কোনো তদারকি নেই। বিদ্যালয়টির কম্পিউটার ল্যাবের বরাদ্দ এলেও অজ্ঞাত কারণে তা করা হয়নি। বরাদ্দের টাকা তসরুপ করা হয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বেলা সাড়ে ১১টা বা ১২টার আগে স্কুলে আসেননা। সপ্তাহে দুই একদিন স্কুলে আসেন। ছাত্র-ছাত্রীদের হাজিরা খাতা নেই। স্কুলের পাহারাদার, দপ্তরীও নিয়মিত আসেনা। কেউ স্কুল পরিদর্শনে আসলে প্রধান শিক্ষকের আপ্যায়নে তারা সব ভুলে যান !
সহকারী কয়েকজন শিক্ষক বলেন, এবছর কয়জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে ঊনারা জানেননা। বিদ্যালয়ের সবকিছু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়ন্ত্রণ করেন। শিক্ষকদের মূল বেতনের ২৫% পাহাড়ি ভাতা স্কুল থেকে দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়না। স্কুলে পানির ব্যবস্থা নেই। বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে প্রায় ১৫ দিন আগে স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) আনোয়ার হোসেন লিখিত অভিযোগ করেছিল।
বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী নাহিদা সুলতানা আফরিন জানান, দিনে ২/৩ টার বেশি ক্লাস হয়না। তার ক্লাসে কাগজেপত্রে ৪৬ জন শিক্ষার্থী থাকলেও ২০/২৫ জনের বেশি স্কুলে আসেনা। ক্লাস হয়না এসে লাভ কি ? স্কুল ভেঙ্গে একাকার হওয়ায় স্কুল সংষ্কার, ক্লাস না হওয়া এবং শিক্ষকরা অনিয়মিত স্কুলে আসা কারণে গত ফেব্রুয়ারী মাসে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বয়কট করেছিল। তাও কাজ হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) কাজী আলাউদ্দিন বলেন, এ বছর আমাদের স্কুল থেকে ৭ জন নিয়মিত ও ৯ জন অনিয়মিত পরীক্ষা দিয়েছিল। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী পাওয়া যায়না। যে কজন শিক্ষার্থীরা এবছর পরীক্ষা দিয়েছে এরা বাসায় ঠিকমতো পড়াশোনা করে না। যার ফলে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তারা টেস্ট পরীক্ষায়ও ফেল করেছিল, অভিভাবকের জোরাজুরিতে বোর্ড পরীক্ষা দিতে সুযোগ দেয়া হয়েছিল।
রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) শাহ আলম আক্ষেপ করে বলেন, যেখানে নরসিংদী নাসিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল এন্ড হোমস্ এসএসসি পরীক্ষায় ৩২০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩২০ জনই এ-প্লাস আর আমাদের স্কুলে শতভাগ ফেল করে। লজ্জা কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিনা।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি মোঃ মঊন উদ্দিন বলেন, রূপসীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিষয়ে শুনেছি। ১৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও কেউ পাস করতে পারেনি। শিক্ষকদের অবহেলা আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।