॥ মোঃ আজগর আলী খান, রাজস্থলী ॥
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া বাজারের পাশে বয়ে যাওয়া খাল টি পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের রাঙ্গামাটি জেলার পাহাড়ি এলাকা হতে উৎপত্তি। এটির দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫ মিটার এর চিত্র হলো দেখতে সর্পিলাকার। কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়ন নারানগিরি মতিপাড়া দিয়ে প্রবাহকালে বেশ কয়েকটি ছোট খাল ও ছড়া এই খালের সাথে মিশেছে। খালের জলধারা রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিলিত। মৌসুমি প্রকৃতির এই খালে সারাবছর পানির প্রবাহ থাকে না। শুষ্ক মৌসুমে অনেকটা পানি শূন্য হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে পাহাড়ী ঢলে খালটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী পানির প্রবাহ বেড়ে গিয়ে তলিয়ে যায় ডাক বাংলা পাড়া, বাজার এলাকা সহ আশেপাশের আরো কিছু এলাকা।
জানা গেছে, বাঙ্গালহালিয়ার এ খাল উপজেলার ঐতির্হ্যের নীরব সাক্ষী। এ খালটি প্রকৃত স্বরূপও হারাতে বসেছে। বছরের পর বছর সংস্কারের অভাব, যে যার মতো করে দখল করেই চলেছে। তার মধ্যে বাজারের সকল প্রকার বর্জ্য আর বাসাবাড়ির বর্জ্যগুলো খালে ফেলতে ফেলতে এখন উপজেলার ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দদর্য্যও হারিয়ে ফেলছে। একটি সময় মাছও পরিপূর্ন থাকলেও এখন সেগুলোও নেই বললেই চলে। বর্তমানেও দখল-দূষণে বিপর্যস্ত খালটির স্বরূপ ফেরাতে সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা দাবি জানিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে খালের চিত্র অব্যাহত বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে বহু অংশ ভরাট হয়েছে। কাঁচা বাজারের বর্জ্য, গড়ে উঠা বিভিন্ন প্যাথলজির বর্জ্য তারমধ্যে বসবাসরত মানুষের বর্জ্যতো রয়েছেই। বর্তমানে খালের এলাকার দুর্গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দূর্গন্ধ বাতাসে ছড়াচ্ছে সাথে দেখা দিচ্ছে নানন রোগ বালাই। কোথাও কোথাও খালের জায়গা দখল করে বাসা-বাড়িও করেছে অনেকে। আরো লক্ষ্য করা গেছে, বালু ব্যবসায়ীরা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে চলেছে নিত্য। ফলে কোথাও কোথাও খালের পাড় ভেঙ্গে গিয়ে বাসাবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালত চালিয়ে জরিমানা সহ সতর্ককতা জারি করলেও কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীর যৌথদল এতই বেপরোয়া যে, তারা কাউকে পরোয়াই করছে না।
দেখা হয় বাঙ্গালহালিয়ায় জন্ম ৭০ বছর বয়সী সানুচিং মামার সাথে। তিনি তাঁর শৈশবের স্মৃতি বর্ণনা করে জানালেন, একসময় এই খালের স্রোত ছিল। খালে মাছ ধরে অনেকে জীবন-জীবিকা যেমন চালিয়েছেন তেমনি প্রতিদিনের সকাল বিকালের ভাতের পাতে মাছ ছিল একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু দূষণে বিপর্যস্ত এই খালে এখন মাছের দেখা পাওয়া মুশকিল। খাল না থাকলে জীবন-জীবিকা, জীববৈচিত্র এবং সংস্কৃতি কোনো কিছুই থাকবে না। তাই খালকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে বলে তিনিও দাবি করেন। সচেতন মহল জানিয়েছেন খালের একাধিক অংশে এখন পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এতে নাব্যতা হারিয়ে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, খাল থেকে বালু উত্তোলন করায় দুই তীর ভেঙে যাচ্ছে বিলীন হয়ে যাচ্ছে খালের তীরবর্তী চাষের জমি, বাজার ও ঘর-বাড়ি।
এদিকে পরিবেশবাদীদের দাবি, রাজস্থলী উপজেলার ঙ্গালহালিয়া খালটি ভয়াবহ দূষণের শিকার। খালের স্বাভাবিক নাব্যতা হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া খালের দুই তীর দখল হয়ে খালের স্বরূপও হারিয়ে যাচ্ছে। বাঙ্গালহালিয়া খালকে বাঁচাতে হবে এবং অবিলম্বে পুনঃখননও করতে হবে। দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দখল-দূষণ রোধ করতে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এ বিষয়ে ৩২০ নং কাকড়াছড়ি মৌজার ভারপ্রাপ্ত হেডম্যান চাথোয়াইমং মারমা বলেন, কিছু কিছু দখলদার দীর্ঘদিন ধরে খালের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করে আসছে। পাশাপাশি বালু উত্তোলন করে পরিবেশ নষ্ট করছে। ফলে খালের পানি বর্ষাকালে তীব্র স্রোতে বাজার ও আশপাশের এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। তাই খালের স্বাভাবিকতা ফেরাতে স্থানীয় জনসাধারণ সহ প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে।