খাগড়াছড়ির পানছড়িতে প্রশিক্ষণের আড়ালে প্রতারণার ঘটনায় গ্রেপ্তার- ৩
॥ মোঃ ইসমাইল, পানছড়ি ॥
দর্জি কাজের প্রশিক্ষনের আড়ালে অভিনব প্রতারণা। লক্ষ্য ছিলো গ্রামের সহজ-সরল নারীদের সেলাই প্রশিক্ষন প্রদানের নাম করে হাতিয়ে নিবে মোটা অংকের টাকা। তবে তার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েও লাভমান হতে পারেনি তাঁরা। উদ্দেশ্য ছিলো দুইমাস কোর্সের মধ্যে কিছুদিন কাজ করিয়ে টাকাগুলি নিয়ে উধাও হবে তাঁরা। কিন্তু বুধবার (২৫ জুন) সন্ধ্যার দিকে তাদের আটক করে পুলিশ।
জানা গেছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রেজিষ্ট্রিকৃত (ভুয়া) “সাহস উম্মুক্ত টেক্সিক্যাল ট্রেনিং প্রোগ্রাম” এর নাম করে সূদুর রংপুর থেকে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় আসে দুজন পুরুষ এবং একজন মহিলা। সপ্তাহ খানেক পূর্বের ঘটনা। তাঁরা এসেই প্রথমে বাসা ঠিক করে। তারপর এলাকায় ঘুরে ঘুরে গ্রামের সহজ-সরল মহিলাদের দর্জির কাজ শেখাবে বলে সদস্য সংগ্রহ করে। তাঁরা ইউনিসেফের পাড়াকেন্দ্রগুলিকে বেছে নেয় ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে। যেখানে প্রতিদিন ১ঘন্টা করে কাজ শেখাবে। ভর্তি ফি বাবদ জনপ্রতি নেয়া হয় ১০০ টাকা করে। তার কিছুদিন পর আবারো নেয়া হয় ৪৫০ টাকা করে। বলা হয় কাঁচি সহ সামগ্রী কিনতে হবে। ট্রেইনারদের ভাষ্যমতে সর্বমোট দিতে হবে ১১০০ টাকা। তবে তাঁরা প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেয়নি।
তাঁরা সপ্তাহের মধ্যেই ৩টি ট্রেনিং সেন্টার চালু করে দেয়। যেখানে ৫০ জনের অধিক সদস্যও হয়ে যায়। অন্যদিকে প্রতিটি এলাকাতেও এভাবে কেন্দ্র সিলেক্ট করাও হয়ে যায়। উদ্দেশ্য ছিলো দুইমাস কোর্সের মধ্যে কিছুদিন কাজ করিয়ে টাকাগুলি নিয়ে উধাও হবে তাঁরা। তবে তা আর হয়ে উঠেনি। এলাকার সচেতন যুব সমাজের প্রচেষ্ঠায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পানছড়ি থানা পুলিশ তাদের আটক করে।
বুধবার উপজেলার সদর ইউপির দমদম (মাস্টারটিলা) এলাকার ইউনিসেফ পাড়াকেন্দ্র থেকে এসআই (নিঃ) প্রতীক পাল সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ তাদের হাতেনাতে আটক করে। আটককৃতরা হলো, লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোঃ আলিমুল ইসলাম (২৬), আদিতমারী, লালমনিরহাট এর মোঃ আরিফ মিয়া (২১), ও আদিতমারী, লালমনিরহাট এর মোছাঃ মনিরা বেগম (১৯)। উল্লেখ্য, মনিরা বেগম আমিনুল ইসলামের স্ত্রী।
এসময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নামে ভর্তি ফরম (মোট ৮৩টি), নগদ ৫ হাজার টাকা, একটি পুরাতন মোটরসাইকেল (রেজিঃ নং- লালমনিরহাট-হ-১৩-৫০৭২), একটি ল্যাপটপ, একটি কিবোর্ড, দর্জির সরঞ্জাম (কাঁচি, মাপফিতা, স্কেল, কাপড়), প্রতারণার শিকার ৪৪ জন ভুক্তভোগীর নাম, মোবাইল নম্বর ও টাকার পরিমাণসহ শীট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পানছড়ি থানায় এফআইআর নং-৪, তারিখ ২৬/০৬/২০২৫, জি আর নং-১৯, ধারা ৪০৬/৪২০/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে।
পানছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.জসিম উদ্দীন জানান, আসামীরা বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে দর্জি ট্রেনিং সেন্টার খুলে প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করেছিলো। তারা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট কারো থেকে অনুমতি নেয় নি। তাদের কাগজপত্রও ভুয়া। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আটক করি এবং গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।