রাঙ্গামাটিতে সেনাবাহিনীর অভিযানে ২১৮ বস্তা সরকারি চাল জব্দ সহ ব্যবসায়ীদের অর্থদন্ড
॥ মোঃ আলমগীর হোসেন, লংগদু ॥
রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার স্থানীয় বাজার করল্যাছড়িতে সেনা অভিযানে ১৫০ বস্তা এবং কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে পাচার করার সময় আরও ৬৮ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করা হয়েছে। সরকারি এসব চাল কিভাবে এ উপজেলার বাজারে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ করা হলো তার সঠিক কিছু জানা যায় নি। দুই দফায় সব মিলিয়ে ২১৮ বস্তা চাল জব্দ করা হলো। তবে সেনা সুত্রগুলো জানিয়েছেন শুক্রবার (১৩ জুন) গোপন সংবাদোর ভিত্তিতে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ অভিযান চালিয়ে ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এসব চাল জব্দ সহ তিন ব্যবসায়ীকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এ ঘটনার বিষয়ে সেনা সুত্র এবং ব্যবসায়ীরাও নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলায় সরকারি খাদ্য গুদামের এসব চাল করল্যাছড়ি বাজারে ব্যবসায়ীদের দোকানে মজুদের বিষয়ে এসব বৈধ না অবৈধ তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন, গোপন সংবাদ এবং অভিযানের মাধ্যমে জব্দ চালের বস্তাগুলো বৈধভাবে আসার কথাও নয়, তবে কি কোন কারচুপির মাধ্যমে এসব করা হচ্ছে? গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী লংগদু জোন অভিযান পরিচালনা করেন এবং হাতে নাতেই তা জব্দ করা হয়, কেননা ব্যবসায়ীরা বৈধ কোন প্রমানপত্রও দেখাতে পারেনি বলে।
সেনা জোন সুত্র জানায়, শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে করল্যাছড়ি বাজারে সন্দেহজনক বেশ কয়েকটি দোকানে জোন অধিনায়ক লে.কর্নেল মীর মোর্শেদ, এসপিপি.পিএসসি”র নির্দেশনায়, করল্যাছড়ি সাব জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে সেনা সদস্যের একটি দল বাজারে অভিযান চালায়। এসব চাল জব্দ করার পর বিকাল ৪টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কফিল উদ্দিন মাহমুদ সহ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে শামীম স্টোর, ইউসুফ স্টোর এবং বিল্লাল স্টোরের মালিক মোঃ মোরতুর্জার দোকান থেকে মোট আনুমানিক ১৫০ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক তিন ব্যবসায়ীকেই পৃথকভাবে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও অপর অভিযানে কাপ্তাই লেক দিয়ে যাওয়ার সময় নৌযানে অভিযান চালিয়ে আরো ৬৮ বস্তা চাল জব্দ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী লংগদু জোন। মাইনী জোন কর্তৃক জব্দকৃত ৬৮ বস্তা চাল সরকারি কোষাগারে জমাও দেন সেনাবাহিনী।
এদিকে উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, আমাদের এখান থেকে ভিজিএফ, ভিজিডিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের চাল চেয়ারম্যানদের নামে বিতরণ করা হয় প্রকল্প বাস্তবায়নে। তবে তারা কি করে সেটা তাদের ব্যপার এটা আমাদের জানার কথা নয়।
এবিষয়ে জানাতে চাইলে আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অজয় মিত্র চাকমা বলেন, আসলে সরকারি চাল আতব হওয়াতে অনেকে আতব চাল খেতে পারেনা তাই তারা আতব চাল পাল্টিয়ে দোকান থেকে সিদ্ধ চাল নিয়ে যায়। তাছাড়া দোকানদাররা বাহির থেকেও চাল নিয়ে আসে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, প্রকল্পের কাজের নয়ছয় করাই হলো তাদের কাজ। গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে বিভিন্ন সময় নানান অভিযোগ পাওয়া যায়। এমনকি কাজ না করেও প্রকল্পের নামে প্রাপ্ত বরাদ্দ বেহাত হয়ে কেউ কেউ আর্থিকভাবেই লাভবান হয়ে যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিপরীতে দেওয়া ভিজিএফ, ভিজিডি’র খাদশষ্য এর চালতো পাওয়া গেছে কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা সেটাও দেখা দরকার।
এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কফিল উদ্দীন মাহমুদ বলেন, চাল গুলো যাদের কাছে পেয়েছি তাদেরকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে সরকারি মালামাল অবৈধভাবে মজুদ বা বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট দোকান সিলগালা করে দণ্ডবিধি অনুযায়ী কারাদণ্ড প্রদান করা হবে।
অপর দিকে জোন অধিনায়ক বলেন, কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশ ও জাতির সম্পদ রক্ষায় আগামীতেও এধরণের অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে