[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
রুমা উপজেলা জাতীয় পুস্টি সপ্তাহের র‌্যালি ও আলোচনা সভারামগড় সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলরাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধস ও প্রাণহানির আশঙ্কায় জেলা প্রশাসনের সতর্কতা জারিসড়কে চাঁদাবাজি, গুইমারায় সেনাবাহিনীর অভিযানে আটক দুইগণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভলংগদুতে আলীম পরীক্ষার্থীদের বিদায় ও বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস পালনখাগড়াছড়ি দীঘিনালায় দু:স্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণকুয়েট শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে দীঘিনালায় বিক্ষোভরাঙ্গামাটির নানিয়ারচর-লংগদু সংযোগ সড়ক দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

বান্দরবানের লামায় পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে দিতে হচ্ছে টোল

॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
বিক্রিত পশুর উপর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি টোল দিতে হয় লামা বাজারে পশুর হাটে। এখানে পশুর বিক্রয় মূল্যের উপর ক্রেতাকে ২ শতাংশ এবং বিক্রেতা ২ শতাংশ মোট ৪ শতাংশ টোল দিতে হয়। এতে করে দূর্বিসহ অবস্থায় পড়তে হয় পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে আসা লোকজনকে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও লামা পৌরসভার দ্বৈত টোলের বিষয়ে গত ২ দশক থেকে বলে আসলেও কোন সুরাহা হয়নি। টোলের নামে পকেট কাটা হচ্ছে সাধারণ মানুষের।

লামা বাজারে জেলা পরিষদ কর্তৃক টোল আদায়কারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা পরিষদের ইজারাদার পশু বিক্রির উপর ২ শতাংশ টোল আদায় করেন। একই বাজারে ২০০৪ সাল থেকে টোল আদায় করছে লামা পৌরসভা। লামা পৌরসভার ইজারাদার একই পশুর উপর আরো ২ শতাংশ টোল আদায় করছে। এতে করে একটি পশু বিক্রি করলে ক্রেতা লামা পৌরসভাকে ২ শতাংশ ও বিক্রেতা জেলা পরিষদকে ২ শতাংশ মোট ৪ শতাংশ টোল দিতে হয়। প্রতি লাখে ৪ হাজার টাকা টোল দিতে হয়।

মঙ্গলবার লামা বাজারে আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু বিক্রি করতে আসা শামসুল ইসলাম, মোবারক আলী ও নুরুন্নাহার বেগম সহ অনেকে বলেন, টোলের নামে লামা বাজারে জুলুম করছে। বাংলাদেশের কোথাও এত টোল আদায় হয়না। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও লামা পৌরসভা একই পশুর উপর দুইবার টোল নেয়। এই জুলুম বন্ধ করা উচিত।

এদিকে রপ্তানী পণ্যের উপরও দ্বৈত কর আরোপ করায় দিশেহারা লামা ও আলীকদম উপজেলার কৃষক। একই কৃষিপণ্য থেকে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ পৃথকভাবে তিনবার কর নেয় বলে জানিয়েছেন সাধারণ কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়া পণ্যের উপর ধার্যকৃত টোল এর পরিমাণ অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন তারা। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে দ্বৈত কর ও ধার্যকৃত টোলের হার বেশি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে জনসাধারণ। গত দুই দশক ধরে এ সমস্যা নিয়ে অনেক দেনদরবার হলেও কোন সমাধান হয়নি।

লামার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের শিলেরতুয়া, অংহ্লা পাড়ার কৃষক রমজান আলী, ওসমান গনি ও মোঃ সোহেল বলেন, অনেক কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করতে গেলে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ পরে লামা পৌরসভাকে টোল দিতে হয়। যদি এসব ফসল চকরিয়া বা দেশের অন্যত্র কোথাও নিতে হলে জেলা পরিষদ টোল নেয়। এক পণ্যের উপর তিনবার কর দিতে গিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আলীকদম চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ব্যবসায়ী মমতাজ মিয়া জানান, ইউনিয়ন পরিষদে টোল দেয়ার পরেও রেপারপাড়া বাজারস্থ উপজেলা পরিষদ গেইটে টোল দিতে হয়। এছাড়া আলীকদম থেকে দেশের অন্যত্র মালামাল নিতে গেলে জেলা পরিষদকে টোল দিতে হয়। একাধিকবার টোল দিতে গিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

কৃষকরা অভিযোগ করেন, পণ্যের উপর অতিরিক্ত টোল ধার্য করা হয়েছে। এক ছড়া কলা থেকে ৫ টাকা, প্রতি পিস কাঁঠাল থেকে ৫ টাকা, ১টি পাহাড়ি গরু থেকে ৫০০ টাকা, প্রতি মণ মরিচ ও কাঁচা সবজি থেকে ১৫ টাকা, প্রতি মণ তামাক থেকে ৪৫ টাকা হারে টোল নেয়া হচ্ছে। প্রতিটি পণ্যে থেকে টোল এর নামে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। কৃষি প্রধান দেশ হয়েও কৃষকের উপর এই জুলুম মেনে নেয়া যায়না। বলেও আমরা প্রতিকার পাচ্ছিনা কোথাও।

স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার গত ১৩/১/২০১১ তারিখে সিদ্ধান্ত মতে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহ রপ্তানী পণ্যের টোল আদায় ও ইজারা প্রদান করবেন। সভায় রপ্তানী পণ্যের টোল ও ইজারালব্ধ আয় বন্টনের হিস্যা পুনবন্টন করা হয়। তাতে বলা হয় পৌর এলাকার মধ্যে ইজারালব্ধ আয় বাজার ফান্ড ৪০%, পৌরসভা ৪০% উপজেলা ২০% পাবে। পৌর এলাকার বাহিরে আঞ্চলিক পরিষদ ১০%, অবশিষ্ট ৯০% কে ১০০% ধরে জেলা পরিষদ ৫৫%. উপজেলা পরিষদ ৪৫% বন্টন করা হবে। উপজেলা পরিষদ প্রাপ্ত হিস্যা হতে ইউনিয়ন পরিষদ সমূহে সমন্বয় করার কথা থাকলেও তার করা হয়না বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।

এদিকে দ্বৈত কর আরোপের বিষয়টি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ অবহিত হলে গত ২৭ এপ্রিল ২০২৫ইং তারিখে ২৯.৩৫.০৩০০.০০৩. ৪২.০৫৮.২৫.৭১৯ নং স্মারকের এক পত্রে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই আলীকদম উপজেলা পরিষদের টোল আদায় কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। অফিস আদেশ দিলেও তা মানছেনা আলীকদম উপজেলা পরিষদের রেপারপাড়া বাজারস্থ টোল আদায় পয়েন্টটি।

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রশাসক আলীকদম উপজেলা পরিষদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন বলেন, টোল আদায় কার্যক্রমের বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্দেশনা অনুসরণ করা হবে। পশু ও কৃষি পণ্যের দ্বৈত কর এর বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈন উদ্দিন বলেন, দ্বৈত কর এর বিষয়ে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। টোল নিয়ে খামারী ও কৃষককে হয়রাণী না করতে অনুরোধ করেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।