গৌতম বুদ্ধ ২৫৬০ বছর আগে জগতে আবির্ভূত হয়েছিলেন
॥ আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান ॥
বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম উৎসব। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। এই পবিত্র তিথিতে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। বুদ্ধের ত্রি-স্মৃতি বিজড়িতকে নিয়ে প্রতি বছরই বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসাবে পালন করে আসছেন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা।
এই দিনকে ঘিরে যথাযথ ধর্মীয় ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বান্দরবানে পালিত হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। রবিবার ভোর সকালে রাজগুরু বৌদ্ধ প্রাঙ্গন থেকে বের করা হয় মঙ্গলময় শোভযাত্রা। শোভাযাত্রাটি রাজার মাঠ প্রাঙ্গণ হয়ে শহরে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বোধিবৃক্ষতলে গিয়ে সমবেত হন। এসময় শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের পাত্রে চন্দন জল, ফুল, জামপাতা এবং বৃক্ষ সজ্জিত টাকা নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন দায়ক-দায়িকাসহ বিভিন্ন বয়সের নর-নারী।
শোভযাত্রা শেষে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার বোধিবৃক্ষমূলে সমাবেত হন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনার মুক্তি লাভের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এসময় ধর্মদেশনা দেন রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত কেতু মহাথেরো। ধর্মদেশনা শেষে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার, উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহার, রামজাদী, স্বর্ণ মন্দির বিহারে উপাসকরা বিহারে সমবেত হয়ে পূণ্যলাভের জন্য বোধিবৃক্ষমূলে চন্দন জল ঢালানো হয়।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহাকানুণিক গৌতম বুদ্ধত্ব লাভের জন্য ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেছিলেন। এই দিনে নৈরঞ্জনা নদীর তীরে এক বটবৃক্ষ মূলে ৬ বছর কঠোর তপস্যার পর বুদ্ধত্ব লাভ করেন। গৌতম বুদ্ধ আজ থেকে ২৫৬০ বছর আগে জগতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। মহামানব গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহা পরিনির্বাণ উপলক্ষে প্রতি বছরই বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিকে জাকজমকপূর্ণভাবে বৌদ্ধ পূর্ণিমা পালন করে।
এদিকে দিনটি ঘিরে প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে ভিক্ষু ও উপাসক-উপাসিকাদের ছোয়াইং (আহার) ফলমুল দান করছেন নর নারীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। সন্ধায় প্রতিটি বিহারে হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলনসহ পঞ্চমশীল,অষ্টশীল গ্রহন ও দায়ক-দায়িকাদের মঙ্গল কামনায় ধর্ম দেশনা প্রদান করবে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ ভদন্ত কেতু মহাথেরো ও উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ সূবর্ণ লঙ্কা মহাথেরো।
বোধিবৃক্ষমূলে চন্দন জল ঢালতে আসা শৈখ্যাইনু,উমেসিংসহ কয়েকজন বলেন, গৌতম বুদ্ধের ত্রি-স্মৃতি বিজরিত এই মহা দিনটি আমাদের কাছে অন্যতম দিন। সএ উপলক্ষে নিজেদের ঐতিহ্যের পোশাক পরিধান করে শোভযাত্রা অংশ নেন সকলে। এই ধর্মীয় দিনে বোধিবৃক্ষমূলে চন্দন জল ঢালার মাধ্যমে পাহাড়ের অশান্তি মুছে দিয়ে শান্তি ফিরে আসুক এই প্রত্যাশা করছি।
রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু নাইন্দাছাড়া বলেন, এই পবিত্র তিথিতে বিহারে বিহারে ধর্ম দেশনা, সন্ধ্যায় প্রদীপ পূজা, হাজার প্রদীপ উৎসর্গ ও দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং বিশ্বশান্তি কামনার পাশাপাশি ধর্মদেশনা দিয়ে দেশবাসী ও সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হবে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে জেলা- উপজেলার প্রত্যেকটি বিহারে ধর্মীয় ভাবগাম্ভিয্যে বুদ্ধ পূর্ণীমা পালন করা হয়েছে।