নৃ-গোষ্ঠীর আগে ক্ষুদ্র শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না: জলকেলীতে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ
॥ আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান ॥
নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বান্দরবানে শেষ হয়েছে মারমাদের সম্প্রদায়ের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সামাজিক ও সংস্কৃতি উৎসব মাহাঃ সাংগ্রাই বা রিলংপোয়েঃ। সপ্তাহব্যাপী উৎসবকে ঘিরে ছিল বর্ণাঢ্য শোভযাত্রা,বয়োজৌষ্ঠ পুজা, ছোয়াইং (আহার) দান, বুদ্ধস্নান, পিঠা তৈরীসহ মৈত্রী পানি বর্ষণ রিলং পোয়েঃ। ঐতিহ্যবাহী সামাজিক ও সংস্কৃতি উৎসব মৈত্রী বর্ষণ বা জলকেলী খেলায় মেতে উঠেছিল মারমা তরুণ-তরূণীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। জলকেলী বা মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবের মাধ্যমে দুঃখ গ্লানি মুছে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ।
জেলা শহরে ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠে শেষ দিনে ছিল মৈত্রী বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেষ দিনেও এই উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে জড়ো হয় কয়েক হাজার মানুষ। মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর পাশাপাশি পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ১১টি জাতিগোষ্ঠির শিল্পীরা লোকজ সংগীত, নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে আনন্দ উদ্যাপন করেছে। এতে আনন্দের মাতোয়ারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ।
সাংগ্রাই বা রিলং পোয়েঃ শেষ দিনে আনন্দময় এই উৎসবের প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, উরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার, ইতালিয়ান অ্যাম্বাসেডর আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, নেদারল্যান্ড দূতাবাসের প্রতিনিধি আন্দ্রে কার্স্টেন্স, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই, সেনাবাহিনীর সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএসএম মাহমুদুল হাসান, জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণায়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম, পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছারসহ বিভিন্ন প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিনে মৈত্রী বর্ষণের নৌকা দু’পাশে মারমা তরুন-তরুণীরা নিজেদের ঐতিহ্য পোশাক দাঁড়িয়ে ছিলেন। আগত অতিথিরা তরুণ-তরুনীদের গায়ে পানি ছিটিয়ে মৈত্রী বর্ষণ উদ্বোধন করেন। এসময় অতিথিদের সামনে মারমাদের লোকজ নৃত্য,পাখুং,জ্যা নিজেদের সংস্কৃতি নৃত্য পরিবেশনা করেন। শেষদিনেও কয়েক হাজার মানুষ ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠে এই উৎসবের মেতে উঠেন।
এদিকে রাজার মাঠে সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন- ‘‘নৃ-গোষ্ঠীর আগে আমরা ক্ষুদ্র শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না। সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টাও ক্ষুদ্র শব্দটির ব্যবহার করতে চান না। মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা— যে জাতি হই না কেন, ক্ষুদ্র বা বৃহৎ কিছুই না। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরো বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটক বান্দরবানে আসুক এটা আমাদের প্রত্যাশা। আর ১২টি জাতিগোষ্ঠীর এমন সংমিশ্রণ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সবাইকে মুগ্ধ করে।
পাহাড়ে অশান্ত পরিস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় চাঁদাবাজি বন্ধ করে এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অগ্রগতির মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই সামাজিক অন্যতম উৎসবকে মারমারা বলে সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, চাক, ম্রো, বমরা চাংক্রান নামে প্রতিবছর উদযাপন করেন থাকেন।