॥ আকাশ মার্মা, মংসিং, বান্দরবান ॥
গত তিন মাস ধরে বান্দরবানের লামায় বেড়েছে অপহরনের ঘটনা। অর্থের লোভে মাথা গজিয়ে উঠা পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনের নামে তকমা লাগিয়ে দিনে কিংবা রাতে চলে মানবতাবিরোধী এ কর্মকান্ড। এ অপহরণ কর্মকান্ড করানো হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে। তাদের প্রধান টার্গেট প্রভাবশালীদের। তবে বেশীর ভাগই অপহরণের শিকার হচ্ছে শ্রমিকেরা। ফলে লামা উপজেলায় সাধারণ মানুষের মাঝে বড় ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সংগঠনটি কোন আঞ্চলিক সংগঠন নয়। এটি একটি বিচ্ছিন্ন অর্থ আদায়ের চাঁদাবাজির সংগঠন। এই সংগঠনের মুল টার্গেট কৌশলে অর্থ আদায়। টাকার জন্য তারা যে কাউকে অপহরণের পর পরিবার কিংবা মালিক থেকে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবী করে। চাঁদা পেলে অধহৃতদের ছেড়ে দেয় আর না পেলে চলে নির্মমভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতন। এসব সশস্ত্র সংগঠন টংকাবতী ও সরই ইউনিয়নের লুলাইং এলাকায় অবস্থান করে থাকে। তবে মাথা গজিয়ে উঠা এই সশস্ত্র সংঘঠনের হাতে কারো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। অপহৃতরা মুক্তিপনে ছাড়া পেলেও এই সংগঠনের এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত তিনমাসে লামার সরই ইউনিয়ন সহ সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ৪৯ জন অপহরণে শিকার হয়েছেন। গেল বছরে ১৭ জুলাই সুয়ালক ইউনিয়নে গনেশ পাড়া এলাকায় একটি রিসোর্টের ১ মালিক , চলতি বছরে ১৪ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারী দুই দফায় মোট ১৪ জন রাবার শ্রমিক অপহরনের শিকার হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারী ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ২৬ জন রাবার শ্রমিক ও সর্বশেষ ৮ এপ্রিল সরই ইউনিয়নে খামারবাড়ি থেকে ৮ জনকে অপহরণ করে সশস্ত্র সংগঠনটি। অপহরণে শিকার হওয়া শ্রমিকদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে মুক্তিপণ দেওয়ার পর শ্রমিকদের ছেড়ে দেয়।
এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, লামা উপজেলার সরই ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন থেকে বেশীর ভাগই রাবার শ্রমিক অপহরণের শিকার হচ্ছে। অপহরণের পর চলে মুক্তিপণের বানিজ্য। বর্তমানে সেসব দুর্গম এলাকায় এখন বড় আতঙ্কের নাম অপহরণ ও মুক্তিপণ বানিজ্য। কে, কখন, কবে অপহরণের শিকার হয় সে চিন্তায় আতঙ্ক ভর করে থাকে এলাকাবাসীর। দিনের পর দিন মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের ঘটনা বেড়ে চললেও কোনো স্থায়ী সমাধান পাচ্ছে না তারা। একের পর এক অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। যার কারনে যে কোন সময় সেখানে আইনসৃংখলার অবনতি ঘটতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, লামা সরইয়ের লুলাইং ও লেমুপালং এলাকাগুলো অত্যন্ত দুর্গম। সেখানে নেই কোনো সড়ক যোগাযোগ। বনাঞ্চল ও দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে কিছু স্থানীয় সন্ত্রাসী অপহরণ–বাণিজ্য করে আসছে। এপর্যন্ত বেশীর ভাগ অপহরণের শিকার হয়েছে রাবার শ্রমিক ও তামাক চাষী। রাতে এসে চাঁদা না দিলে অপহরণ করে নিয়ে যায় গজিয়ে উঠা এই সশস্ত্র সংগঠনটি অপহরণে পর লেনদেন করে বিকাশের বা নগদের মাধ্যমে। এছাড়াও অপহরণকারীরা পরিবারের কাছে মুঠোফোনে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবী করে। নতুন নতুন নাম্বার থেকে কল দিয়ে চাঁদা দাবী করে। কখনো নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ব্যবহার করে আঞ্চলিক সংগঠনের নাম। এতে ভুক্তভোগী পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মুক্তির আশায় তাদের বিকাশে বা নগদে একাউন্টে অর্থ পাঠিয়ে দিলে অপহৃতদের ছেড়ে দিয়ে যায় অন্যস্থানে।
সরই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ইদ্রিছ কোম্পানী বলেন, অপহরণকারীরা কোন আঞ্চলিক সংগঠন নয় তারা অর্থ লুটে নেওয়ার সংগঠন। তাদের মুল লক্ষ্যে হল মুক্তিপনের মাধ্যমে টাকা নেয়া। অস্ত্রের মাধ্যমে রাত্রে এসে অপহরণ করে নিয়ে যায় আর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়।
লামা রাবার প্রজেক্টের ডিরেক্টর মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, সশস্ত্র সংগঠটি বেশীর ভাগ অবস্থান করে লুলাইং ও টংকাবতী মধ্যস্থানে। এ পর্যন্ত যেসব রাবার শ্রমিক অপহরণ হয়েছে তাদের মুক্তিপণ হিসেবে ১৮ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। তবে বেশীর ভাগই বিকাশে মাধ্যমে লেনদেন হয়। তারা আঞ্চলিক সংগঠনের নাম বিক্রিত করে এ কর্মকান্ড চালাচ্ছে।
বান্দরবান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম (ক্রাইম এন্ড অপস) বলেন, প্রায় সময় লামা সরই এলাকায় অপহরণ ঘটনা ঘটছে। মুক্তিপনের মাধ্যমে আবার ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। কে বা কারা জড়িত সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত অপহরণকারী কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এসব সশস্ত্র অস্ত্রধারীদের আইনে আওতায় আনতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।