বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করেই চুক্তি হয়েছিল, উৎসবপূর্ব বর্ণাঢ্য র্যালিতে বক্তারা
॥ বিনয় চাকমা ॥
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী ও জুম্ম আদিবাসীসহ সারাদেশের আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির যে আন্দোলন এবং সারাদেশর বাঙালী নাগরিকদের সুশাসনের জন্য যে আন্দোলন সেগুলি যেন সফল হয় সে কামনা করছি। বুধবার (৯এপ্রিল) সকালে রাঙ্গামাটি পৌরসভা মাঠ প্রাঙ্গনে উৎসবপূর্ব বর্ণাঢ্য র্যালিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবশীষ রায় এসব কথা বলেন।
“আদিবাসী জুম্ম জাতির অস্তিত্ব নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের অধিকতর সামিল হই” এই স্লোগানকে সামনে রেখে পাহাড়ের আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রান ও পাতা উৎসবকে কেন্দ্র করে উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা (অব:উপসচিব) এ সভাপতিত্বে উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। বিশেষ বক্তা ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার। এছাড়াও আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ বক্তা পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার বলেন, আদিবাসী জুম্ম জনগণ তাদের যে ঐতিহ্য, ইতিহাস, প্রথারীতি তাদের যে অস্তিত্ব, যে চিন্তাভাবনা দর্শন নিয়ে তারা আলাদাভাবে বেঁচে থাকতে চায়। সেখানে তারা যদি নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব আচার অনুষ্ঠান নিয়ে বেঁচে থাকতে চয়ই তাহলে সেখানে বাংলাদেশের আপামর জনগণের মাথা ব্যাথা হওয়ার কোন কারণ দেখি না। আমরা দেখি বন্ধুরা বাংলা ভাষাভাষী যারা রয়েছেন সারা বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষ রয়েছেন ওনাদের মাঝে আজকের এই পার্বত্য অঞ্চলের তথা সমতলের আদিবাসীদের নিয়ে নতুন করে ভাববার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, কিছু দিন আগে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান উনি একটা মিটিংয়ে বলেছিলেন আদিবাসীদের দোষ নাই, ক্রটি নাই, ক্রটি হলো আমাদের বৃহত্তর গোষ্ঠীর মাঝে অবশ্যই তাদের উদার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসে চিন্তাধার পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি বলেছেন, আদিবাসীরাতো চুক্তি করেছিলো বাংলাদেশ সরকারের সাথে সেখানেতো বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করেই চুক্তি হয়েছিল। এখানে সরকারের বিভিন্ন জন রয়েছেন আপনাদের মধ্য দিয়ে বাংলার ১৭ কোটি মানুষের কাছে আহ্বান রাখতে চাই যা হবার হয়ে গেছে অনেক রক্ত ঝড়েছে পার্বত্য অঞ্চলে, তা আর নয়। আসুন আমাদের সকলের উপলব্ধি হোক সকলের সুভবুদ্ধি উদয় হোক। এরাও বাংলাদেশের নাগরিক সমঅধিকার সমমর্যাদা নিয়ে এদের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।
আলোচনা শেষে এক বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি রাঙ্গামাটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজবাড়ি জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে এসে শেষ হয়।
উল্লেখ্য যে, বিজু উৎসবকে আদিবাসী সম্প্রদায় তাঁদের নিজস্ব ভাষায় বিভিন্ন নামে ডাকে। যেমন: চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়া বিহু, ম্রোরা সাংক্রান, খিয়াং সাংলান এবং সাঁওতাল জনগোষ্ঠী পাতা, বড়ুয়া জনগোষ্ঠীরা বিউ পরব নামে পালন করে। আগামী ১২ থেকে ১৪ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী বিজু উৎসব পালন করা হবে সকলের ঘরে ঘরে।