॥ মোঃ সোহেল রানা, দীঘিনালা ॥
তামাক চাষের আখড়ায় পরিনত হয়েছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ফসলি জমি, স্কুল, কলেজ ও মাইনী নদীর কুল গেছে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে মারাত্নক ক্ষতিকর তামাক চাষ। সরকার আইন প্রনয়ন করলেও মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ না থাকায় দেশি বিদেশি কোম্পানীগুলো তামাক চাষিদের উদ্ধুদ্ধ করেই চলছে। তামাকচাষ নিরুৎসাহিত করনের জন্য সরকারি বেসরকারি কোন সংস্থা এগিয়েও আসছেনা। তামাক এর বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের সাড়া পড়ছেনা।
এদিকে তামাক কোম্পানীগুলোর সূত্রমতে, পার্বত্য জেলাগুলোর আবহাওয়া মাটি তামাক চাষের জন্য বেশ উপযোগী। অন্যান্য অঞ্চলের অপেক্ষা ফলন বেশি গুনে ও মানে উন্নত। ফলে পার্বত্যাঞ্চলের নদীর চরাঞ্চল ধানীফসলের জমি স্কুল ঘেঁষে এমনকি বাড়ির আঙ্গিনায় তামাক চাষ করা হয়। যার কারনে দেশি বিদেশি তামাক কোম্পানীগুলো পার্বত্যাঞ্চলে ভিড় করে। তামাক ক্ষেতে যেসব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে তা মাটির জন্য ক্ষতিনয় বলেও দাবী করেন। জানা যায়, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় তামাক কোম্পানীগুলো অনুকুলে ৫/৭শতজন চাষী ৪শত৭১ হেক্টর ফসলি জমিতে তামাক চাষ আবাদ করছে। এক সময় তামাকের আখড়া ছিল রংপুর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলগুলোতে। আবাদ ক্রমান্বয়ে বেড়ে পার্বত্যাঞ্চলের আনাচে কানাচে এখন শুধু তামাক আর তামাক। দীঘিনালা উপজেলার মেরুং এলাকা থেকে প্রথমে তামাকের আবাদ আরম্ভ হয়। তামাক চাষের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত না থাকায় এবং নিরুৎসাহিত করার জন্য কেউ এগিয়ে না আসার ফলে কোম্পানীগুলো বিভিন্ন প্রলোভনের জালে কৃষকদের জড়িয়ে শত শত একর ফসলী জমি পরিনত করছে তামাক ক্ষেতে। বিভিন্ন প্রকার রবিশষ্যসহ নানা প্রকার সবজি জাতীয় ফসলের জন্য নাম করা ছিল দীঘিনালা। দামেও ছিল বেশ সস্তা। ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা বিক্রি করেও আনন্দ পেত অপরদিকে ক্রেতারাও ইচ্ছেমত ক্রয় করত। সেইদিন ঠিক হারিয়ে গেছে তামাক চাষের ছোবলে জানান অনেকেই। তামাক চাষিরা বলছে তামাকের বিকল্প অন্য ফসল চাষ করলে বিক্রয়ের নিশ্চতা কম এবং অনেক সময় লোকশান হয়।
আরো জানা যায়, তামাক চাষে গুটি কয়েক লোক লাভবান হলেও সামগ্রীক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এলাকাবাসী দুষিত হচ্ছে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চলেন গাছপালা। দীঘিনাল উপজেলায় তামাক চুল্লি রয়েছে অন্তত ৭শতাধিক। একটি তামাক চুল্লিতে ৭/৮শ টন লাকড়ীর প্রয়োজন হয়। চুল্লিগুলোতে কাঠের যোগান দিতে প্রতিদিন বিভিন্ন যানবাহনে করে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ। তামাক চুল্লির চিমনি দিয়ে বের হয়ে ছড়িযে পড়ছে বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড মিশ্রিত নিকোটিন। বসত বাড়ির কাছাকাছি লোকালয় ও বিদ্যালয়ের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে অনেক বিষাক্ত তামাকের চুল্লি। তামাক চাষ ক্ষতিকর তারপরও লোকজন কেন চাষ করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে জানাযায়, স্ব স্ব কোম্পানীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় চাষীদেরকে প্রয়োজনীয় সার বীজ কীটনাশক জমি অনুপাতে আগাম ঋনের সুবিধা থাকায় চাষীরা আগ্রহী হয়। দীঘিনালা কৃষি অফিস এর দেয়া তথ্যমতে এ বছর দীঘিনালা উপজেলায় প্রায় ৪শত ৭১ হেক্টও জমিতে তামাক চাষ কর হচ্ছে। গত বছর ছিল ৪শত ৩০হেক্টর। গত বছরের তুলনায় ৪১হেক্টর তামাক চাষ বেশি হয়েছে। তবে আরো দূর্গম পাহাড়ী এলাকার তথ্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মেরুং ইউনিয়নের তামাক চাষী মোঃ কামাল হোসেন বলেন, তামাক চাষে কোম্পানি আমাদেরকে অগ্রীম লোন দেয় ও সার বীজ কীটনাশক এবং উপাদন করার পর তারা কিনে নেয়। তাই আমাদের তামাক পাতা বিক্রয়ের নিশ্চয়তা আছে কিন্তু অপরদিকে অন্যান্য কৃষি ফসল যেমন, ভূটা, আখ, সূর্যমূখী ফুল, আলুসহ অন্যান শাক সবজি চাষাবাদ করলে বিক্রয়ের নিশ্চয়তা নাই। আমাদের উৎপাদিত ফসল কম দামে বিক্রয় করতে হয় এতে আমাদের লোকশান হয়। বিক্রয়ের নিশ্চয়তা থাকলে তামাক ছেড়ে অন্যান্য কৃষি ফসল চাষ করব।
দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহদাত হোসেন জানান, সরকারী পর্যায় তামাকের ক্ষতিকর দিক সর্ম্পকে কোন ধরনে প্রচার না থাকলেও উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদেরকে ধারনা দেওয়া হয় যে তামাক চাষ করতে মাটির গভীর থেকে চাষ করায় মাটির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয় এক পর্যায় ফসল উৎপাদন ব্যহত হতে পারে। তামাক চুল্লিতে প্রচুর কাঠ পোড়ানো হয় ফলে বন জংগলের গাছপালা কমে যাচ্ছে যার ফলে যে কোন সময় পরিবেশের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তামাক চাষে কৃষকরা কেন উৎসাহী এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, বিভিন্ন তামাক কোম্পানীগুলো কৃষকদেরকে তামাক চাষ করতে কোম্পানীর কাছে রেজিটেশন করতে হয়, ফলে কৃষকরা অগ্রীম সার কীটনাশক ঔষধ ও দাদনের টাকা পায় ও তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। তামাক পাতা উৎপাদনের পরে স্ব স্ব কোম্পানীর কাছে বিক্রি করতে হয় এবং সার কীটনাশক ও দাদনের টাকা কেটে রাখে। ফলে কৃষকদের তামাক পাতা উৎপাদন করতে বেশি খরচ হয় না প্রচুর লাভবান হয়। তামাক ছাড়া অন্যান্য কৃষি পন্য উৎপাদন করতে প্রচুর পুজি বিনিয়গ করতে হয় কিন্তু অনেক সময় বাজার মন্দা থাকার কারনে কৃষদের উৎপাদিত ফমল বিক্রি করতে পারেনা যদিও করে তাদের প্রচুর লোকশান হয় এইসব কারনে তামাক চাষ করতে আগ্রহী।
দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডাক্তার তনয় তালুকদার বলেন, তামাক চাষ স্বাস্থ্যরজন্য অব্যশই ক্ষতিকর। তামাক চাষীদের দীর্ঘ মেয়াদি রোগ দেখা দিতে পারে। যার ফলে তামাক চাষীদের শ^াসকষ্ট, ক্যান্সার, হজম শাক্তি কমে যায় এছাড়া নানা ধরনে হতে পারে। এসকল রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য তামাক চাষ ছেড়ে দিতে হবে এবং তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সর্ম্পেকে সকলে সচেতন করতে হবে। তামাক চাষ অবশ্যই এড়িয়ে চলতে আমাদের কৃষকদেরই এগিয়ে আসতে হবে।