[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
বান্দরবানের থানচিতে বালু উত্তোলনের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে জেলা প্রশাসকের সহায়তাবাঘাইছড়িতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিতদৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হলে নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ হবে নাবান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ৮মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিতখাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার লারমা স্কয়ারে ৬মাস মধ্যে আবার অগ্নিকাণ্ডবাঘাইছড়ি সাজেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে জামায়াতের আর্থিক সহায়তাকাপ্তাই হ্রদে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধারমাটিরাঙ্গায় মা-বাবাকে কুপিয়ে জখম করেছে মাদকাসক্ত ছেলেদেশ ও জনগণের সর্বদা পাশে থাকবে সেনাবাহিনী: থানচিতে লে: কর্ণেল জুলকার
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

জুম্ম জনগণ শ্বাসরুদ্বকর অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছে: ঊষাতন তালুকদার

॥ মিলটন বড়ুয়া ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, রাজনৈতিক পার্টি হলো সম্মিলিত জনগণের ইচ্ছাশক্তির ফসল। পার্টি হলো উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জন্ম হয়েছে জনগণের প্রত্যাশা, আকাক্সক্ষার প্রেক্ষিতে জাতীয় মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে। এই পার্টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও নীতি-আদর্শ নিয়ে আজও পর্যন্ত তার রণনীতি ও রণকৌশল সাজিয়ে সংগ্রামে অবতীর্ণ রয়েছে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারী) সকালে সমিতির ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রাঙ্গামাটি শহরের রাজবাড়ি এলাকাস্থ কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে উক্ত গণসমাবেশ ও আলোচনা সভায় সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য গুণেন্দু বিকাশ চাকমার সভাপতিত্বে ও সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সুমন মারমার সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতির সিনিয়র সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য কে এস মং মারমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওর্য়াকের সহ-সভাপতি ভবতোষ দেওয়ান ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা। সমিতির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা এক প্রেস জ্ঞিপ্তিতেও জানান।
ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পরও জুম্মদের ভাগ্য খুলেনি। সরকার পার্বত্য জনগনের চুক্তি বাস্তবায়ন না করে, বরং প্রতারণা করা হয়েছে। জুম্ম জনগণ শ^াসরুদ্ধকর অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছে। আগে ছিল অপারেশন দাবানল, এখন ‘অপারেশন উত্তরণ’ এর নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে অঘোষিত সেনাশাসনের যাঁতাকলে জুম্ম জনগণকে পিষ্ট করানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক পার্টি হলো সম্মিলিত জনগণের ইচ্ছাশক্তির ফসল। পার্টি হলো উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জন্ম হয়েছে জনগণের প্রত্যাশা, আকাক্সক্ষার প্রেক্ষিতে জাতীয় মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে। এই পার্টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও নীতি-আদর্শ নিয়ে আজও পর্যন্ত তার রণনীতি ও রণকৌশল সাজিয়ে সংগ্রামে অবতীর্ণ রয়েছে। জনসংহতি সমিতি হারিয়ে যায়নি। জনসংহতি সমিতি এখনো আন্দোলনরত। আন্দোলনের রূপ পাল্টেছে, ভবিষ্যতেও পাল্টাবে। কাজেই জুম্ম জনগণকে ভয় পেলে চলবে না। সত্য-মিথ্যা যাচাই করে আন্দোলনকে বুকে ধারণ করতে হবে। যেকোনো সময় যে-কোনো প্রকার সংগ্রামের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করুন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলন জোরদার করুন।
উদ্বোধক সাধুরাম ত্রিপুরা বলেন, ব্রিটিশ আমলে জুম্মদের পৃথক শাসনব্যবস্থার জন্যে ১৯০০ সালের রেগুলেশন নামে একটি আইন প্রবর্তিত হয়। কিন্তু পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান সরকার এ আইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা বাতিল করে। ফলে প্রথাগত শাসনকাঠামো বিনষ্ট হয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশকারীদের বৈধতা দেওয়া হয়। এদিকে ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের ফলে এদেশের জুম্ম জনগণকে দেশছাড়া করা হয়। এতে জুম্মদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে যায়। আর স্বাধীন বাংলাদেশে ৭২ এর সংবিধান প্রণয়নকালে জুম্ম জনগণের জাতীয় পরিচয় মুছে দেওয়া হয় এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজাতীয় অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটতে থাকে। জুম্মদের জমি বেদখল হয়, তারা উদ্বাস্তু হয়। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে জুম্ম জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় এদেশের জুম্ম জনগণকে একত্রিত করার জন্য এম এন লারমার নেতৃত্বে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সেসময় থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সুদক্ষ নেতৃত্বে জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই চলমান রয়েছে। সংগ্রামের ফসল হিসেবে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পেয়েছি। এ চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব বর্তমান প্রজন্মকে কাঁধে নিতে হবে।
বিশেষ অতিথি কে এস মং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ যুগ যুগ ধরে শোষিত হয়ে আসছে। পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম জনগণ সামন্ততান্ত্রিক সমাজের নিষ্পেষণ, বিজাতীয় শাসন-শোষণ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভাবনায় নিমজ্জিত ছিল। শোষণ, নিপীড়ন, বঞ্চনা, অত্যাচারের নাগপাশ ছিন্ন করতে জন্ম লাভ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। এম এন লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন শুরু করে। সেসময় এন এন লারমা ৪ দফাবিশিষ্ট একটি দাবিনামা শেখ মুজিবের কাছে জমা দেন। কিন্তু শেখ মুজিব সেই দাবিনামা প্রত্যাখ্যান করে। তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ রুদ্ধ হলে সশস্ত্র সংগাম শুরু করে।
বিশেষ অতিথি ভবতোষ দেওয়ান বলেন, মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ৫৩ বছরের লড়াইয়ের ইতিহাসে আমরা অনেক লড়াকু বীরযোদ্ধাকে হারিয়েছি। রক্তস্নাত পথে জনসংহতি সমিতি শাসকগোষ্ঠী নামক দানবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে জুম্ম জনগণ দীর্ঘ সময় লড়াই করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পেয়েছে।
বিশেষ অতিথি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পার্বত্য অঞ্চলের জনসাধারণ মনে করেছিল এবার তারা বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক একটি স্বাধীন দেশে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই প্রয়োজন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই-সংগ্রামের। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন, অবৈধভাবে ভূমি বেদখল, ধর্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাই জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে জুম্ম জনগণ দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করছে এবং এ লড়াই জারি রাখবে।
সমাবেশ শুরুর আগে জনসংহতি সমিতির অন্যতম সহযোগী সংগঠন ‘গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠী’র শিল্পীবৃন্দ গণসংগীত পরিবেশন করেন। এরপর জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর বেলুন উড়িয়ে গণসমাবেশ ও আলোচনা সভাটি উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সিনিয়র সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা।