বান্দরবানের রোয়াংছড়ি দেবতাখুম ভ্রমনে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত
॥ চিংথোয়াই অং মার্মা, থানচি ॥
পর্যটন শিল্পের দুয়ার খুলছে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলা দেবতাখুম, সেখানে দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমন করতে পারবে। ভ্রমণে থাকছে না কোনো বিধি-নিষেধ। কিন্তু থানচি ও রুমা উপজেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিষেধাজ্ঞা জারি বহালের দুই উপজেলায় পর্যটক ভ্রমনে খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুম পর্যটককেন্দ্রে খুলছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সমন্বয় সংক্রান্ত কোর কমিটির গত ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের সভার সিদ্ধান্ত ও রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের গত ৪ ফেব্রুয়ারি স্মারকমূলে প্রেরিত পত্রের আলোকে রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুম পর্যটন কেন্দ্রটি আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ হতে সব পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলো। জনস্বার্থে এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো।”
স্থানীয়রা জানান, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে জেলার দূর্গম এলাকাগুলোতে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় একই বছরের ১৭ অক্টোবর রুমা-রোয়াংছড়িতে দেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞা কয়েক দফায় বাড়িয়ে রুমা-রোয়াংছড়ি, আলীকদম ও থানচি উপজেলায়ও আরোপ করা হয়। তাঁরা আরো জানান, পরে আলীকদম উপজেলা থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও রুমা-রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় বহাল রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও গত ২০২৪ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতির অভিযোগ ওঠে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এর বিরুদ্ধে। নিরাপত্তার স্বার্থে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা জারি বহাল রাখা হয়। বর্তমানে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক মনে করছে প্রশাসন। এ কারণে চলতি মাসের গত মঙ্গলবার থেকে রোয়াংছড়ির দেবতাখুম পর্যটন কেন্দ্রটি ভ্রমণকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে দীর্ঘদিনের অবসান ঘটিয়ে ব্যবসায় এখন লাভের মুখ দেখবেন বলে প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এদিকে থানচির পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন– দফায় দফায় পর্যটক ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার ফলে যেমন পর্যটন শিল্পের খাতের জড়িত ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরা লোকসান মুখে পড়তে হচ্ছে তেমনি দিন দিন বেকার হচ্ছে ট্যুরিষ্ট গাইডসহ গাড়ি ও নৌকা চালকরা। এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ তুলে নেয়ার দাবি তাদের।
থানচি পর্যটক গাইড সমিতি এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ মামুন রশিদ বলেন, আমাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে দিনমঞ্জুরি, লেবার ও অন্যান্য পেশায় চলে গেছেন। দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা জারি বহাল থাকলে এইপেশার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হবে। তাই প্রশাসনের নিকট আকুল আবেদন, যত দ্রুত সম্ভব পাহাড়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে পর্যটন খুলে দেয়া দাবি জানান তিনি।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন, রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুম পর্যটন খুলে দেওয়া হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় থানচি ও রুমা দুই উপজেলা ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার হয়েছে। থানচি উপজেলা ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিহিত করেছি, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।