তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে সকলেরই ধারনা
ড. এফ দীপংকর মহাথের ধূতাঙ্গ ভান্তে (ভিক্ষু) পরলোগত হয়েছেন
॥ আকাশ মারমা মংসিং বান্দরবান ॥
হাজার হাজার ভক্তকে কাঁদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম সাধক ধূতাঙ্গ ভান্তে (ভিক্ষু) ড. এফ দীপংকর মহাথের পরলোগত হয়েছেন। শনিবার (১৩জুলাই) বান্দরবানস্থ আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বিহার এর নিজ কুটির থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এঘটনা বিহার এর ভিক্ষু সংঘ এবং সেবক সেবিকাবৃন্দ ও পুলিশ প্রশাসন নিশ্চিত করেছেন।
বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষু সংঘ এবং উপাসক-উপাসিকা ও সেবক সেবিকারা জানান, এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেন এমন ভিক্ষু তিনি নন। যিনি কিনা হাজার হাজার যন্ত্রনা সহ্য করে স্বধর্ম প্রচার প্রসার এবং দায়ক দায়িকা ও সেবক সেবিকাদের ছাড়াও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ছায়া দিয়ে রেখেছেন তিনি কিনা এভাবে দেহ ত্যাগ করবেন তা আদো সত্য নয়। এ ঘটনা একটি পরিকল্পিত ঘটনা বলে তারা দাবি করেন। সাধারণ তদন্তও নয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। কেননা এ বৌদ্ধ ভিক্ষুর ধ্যান সাধনা এবং উপদেশ কোন একক জাতি গোষ্ঠীর জন্যও ছিল না। তাই যারা এঘটনার জন্ম দিয়েছেন তারা কোন ভাবেই পার পাবে না।
পুলিশ জানিয়েছেন, তিনি (ধুতাঙ্গ ভান্তে)চিরকুট লিখে আর্যগুহা ধুতাংঙ্গ বৌদ্ধ বিহারের ড. এফ দীপঙ্কর মহাথেরো গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানতে পেরে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর কুটির থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে ঘটনাস্থল থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুর হাতে লেখা একটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। তবে শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে রোয়াংছড়ি তারাছাস্থ গোদারপার এলাকার আর্যগুহা ধুতাংঙ্গ বিমুক্তি বিহার এর নিজ কুটির থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি আর্যগুহা ধুতাংঙ্গ বৌদ্ধ বিহারের ধর্মগুরু ছিলেন।
নিহত মহাথেরো ফটিকছড়ি ফরাঙ্গী গ্রামে নান্টু বড়ুয়া ছেলে ড. এফ দীপঙ্কর (৫৩)। তিনি পিএইচডি খ্যাতিপ্রাপ্ত একজন উচ্চ শিক্ষিত বৌদ্ধ ভিক্ষু বলে জানান।
ঘটনা জানার পর উপাসক ও সেবকবৃন্দ, প্রতিদিনের ন্যায় রাতে ধ্যান সাধনা শেষে ঘুমাতে যান বৌদ্ধ ভিক্ষু। সকাল থেকে দুপুরে গড়িয়ে আসলে বিহারটি বন্ধ দেখতে পেয়ে অনান্য ভিক্ষুরা ছুটে গেলে বিহারের ভেতর ঝুলন্ত অবস্থায় বৌদ্ধ ভিক্ষুর মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে এসে বৌদ্ধ ভিক্ষুর মরদেহ উদ্ধার করে। তাছাড়া বৌদ্ধ ভিক্ষুর এই আত্মহত্যা বিষয়টি রহস্যজনক বলে ধারণা করছেন ভিক্ষুর অনুসারীরাও।
বৌদ্ধ বিহারে ভিক্ষুর সেবক ভুটান বড়ুয়া বলেন, বৌদ্ধ ভিক্ষু ওই বিহারে একটি গুহার মধ্যে একাই থাকতেন। কিন্তু গেল বেশ কয়েকদিন ধরে আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বৌদ্ধ বিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষু ড. এফ দীপঙ্কর (৫৩) মহাথেরোকে একটি মহল নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। তবে কে বা কারা এই হুমকি দিয়েছে সেটি জানেন না অনান্য ভিক্ষুরা। তবে গলায় দড়ি দেয়া থাকলেও পা মাটিতে লাগানো অবস্থায় থাকায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে সকলেরই ধারনা বলে জানান তিনি।
এদিকে বৌদ্ধ ভিক্ষুর লাশ উদ্ধারের পর টেবিলের উপর একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। চিরকুটে লেখা ছিল-আমার অনেক ইচ্ছা ছিল বুদ্ধের সদ্ধর্ম প্রচার-প্রসার করার এবং ট্রেনিং দিয়ে আপনাদেরকে দক্ষ করে তুলব। আমি বহু জনের সুখের কারণ হতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারলাম না। আমার পক্ষে ছিল না। আমার কি কি স্বপ্ন ছিল তা আপনারা সবাই জানেন। আমার এই স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য নিম্নোল্লিখিত ভিক্ষুদের উপর দায়িত্ব দিয়ে গেলাম। আপনারা একতাবদ্ধ হয়ে থাকবেন অপ্রমত্ত হয়ে মেয়েদের কাছ থেকে দূরে অবস্থান করে প্রব্রজ্যা জীবনকে সুরক্ষা করবেন এবং বহুজনের হিত সাধন ও সাধক ধূতাঙ্গ ভান্তে (ভিক্ষু) করবেন। এটাই আপনাদের উদ্দেশ্যে আমার শেষ উপদেশ।
রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ আলী জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। কি কারনে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।