সাবেক আইজপির জায়গা দেখাশোনা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি
বান্দরবানে বেনজির এর সহযোগীর বিরুদ্ধেও জায়গা দখলের অভিযোগ
॥ আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান ॥
সমতল পেরিয়ে পাহাড়েও ছাড় দেননি সাবেক আইজিপি বেনজির আহম্মেদ। এবার পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও রয়েছে নামে-বেনামে রয়েছে শত একরের অবৈধ জায়গা। জেলা সদর সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝের পাড়া মাঝড়া ঝিড়ি ও মুরুং ঝিড়ি এলাকায় ২৫ একর লীজের কথা থাকলেও আরো দখলে রয়েছে একশত একরের বেশী জায়গা। তার এই অবৈধ জায়গা দেখাশোনা করতে দ্বায়িত্ব দেয়া হয় তার সহযোগী মংওয়াই চিং নামে বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতিকে। কিন্ত অভিযোগ রয়েছে সেখানেও সুযোগ বুঝে ফায়দা লুটে নিয়েছে স্থানীয় এই পাহাড়াদার নেতা।
সাবেক আইজিপির সহযোগী স্থানীয় নেতা মংওয়াইচিং মারমা বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জায়গা দখলের সন্ধান পাওয়া গেছে। বেনজিরের ক্ষমতার থাকাকালীন সাধারণ মানুষদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে লীজ ছাড়া আরো কয়েক একর জায়গা দখলে নিয়ে গেছে। তাই নয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে অন্যের বাগান থেকে গাছ কেটে বিক্রি ও চলাচলের পথ বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে বেনজিরের সহযোগী মংওয়াইচিং বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশের প্রধান বেনজির আহমেদ ক্ষমতায় থাকা সময়ে প্রতিদিন বাগানে যাতায়াত করতেন তার সহযোগী মং ওয়াই চিং। সেসব জায়গায় সকলের কাছে পরিচিত ছিল এসপি বাগান নামে। কিন্তু জায়গা পরিচালনা থেকে শুরু করে জোরভাবে বেদখলসহ নানা কর্মযজ্ঞ চালাতেন স্থানীয় নেতা মং ওয়াইচিং। বেনজির তার স্ত্রী ও মেয়ে নামে লীজ নেয়া ২৫ একর জায়গা নামে থাকলেও তার সহযোগী জোরপূর্বক ভাবে দখলে নিয়েছেন আরো একশত একরের বেশী। বেনজির পাশপাশি মংওয়াই চিংও নিজের নামে কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ভাবে কয়েক একর জায়গা দখলে নিয়েছেন। শুধু তাই নয় কাটা তারের বেড়া দিয়ে চলাচলের জায়গা বন্ধ করে পথচারীদের হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগ স্থানীয় এই নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মংওয়াই চিং করোনা সময় বেনজির এর ক্ষমতা দেখিয়ে জায়গা দখল করা শুরু করেন। ভুক্তভোগী বাগানে চলাচলের পথ বন্ধ করে অন্যের জায়গা থেকে সেগুন গাছ কেটে বিক্রি, বাগান বাড়ি স্থাপনাসহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা তার কাছ থেকে গাছের ক্ষতিপূরণ টাকাসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির টাকা চাইলে উল্টো পুলিশের কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে মামলার হুমকি-ধুমকি দেন। এছাড়াও ভুক্তভোগী ক্যসিং মং বাগান থেকে জোরভাবে গাছ কেটে জায়গা দখল, চিংশৈনু বাগান থেকে ৫০ থেকে ৭০টি সেগুন গাছ কর্তন, নুম্যাসিং ও মাশৈচিং যুদ্ধ বাগানে চলাচলের পথ বন্ধসহ চোর ফাসানো অভিযোগও আছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগে ও ৩ নম্বর শিটে ২৫ একর জায়গা লিজ নেন। সেটি এসপির জায়গা নামে পরিচিত হলেও অন্যের জায়গা উপর দিয়ে তৈরী করা হয়েছে ইটের সোলিং, ফলজ বাগান,বিদ্যুতের সংযোগ। এসব জমিতে রয়েছে বাগান বাড়িসহ কোটি টাকার সম্পত্তি। একই সালে বেনজির সাথে নোটারী পাবলিক মাধ্যমে দেখাশোনা সহযোগী হিসেবে চুক্তি করেন স্থানীয় সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মংওয়াই চিং। এরপর থেকে শুরু হয় সাধারণ মানুষকে হয়রানি, প্রভাব খাটানো,জায়গা দখলসহ আরো অপরাধের কাজ। দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর কালো চশমা চোখে দিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতি শুরু করেন নির্যাতন। বেনজিরে ক্ষমতা অপব্যবহার করে জেলা শহরে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবণ, রয়েছে বিলাস বহুল গাড়িসহ পেয়েছেন বিভিন্ন পদ-পদবী। এতে তিনি শান্ত হননি সাধারণ মানুষ কাছ থেকে জোরপূর্বক ভাবে জায়গা দখল, গাছ কেটে বিক্রি বাগানে চলাচলে পথ বন্ধ করাসহ ভুক্তভোগীদের কোন ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উল্টো আইনের মামলার হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন এই নেতা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেনজির সে জায়গায় চিংশৈনু মারমা মালিকানাধীন পাহাড় ঘেষে বেধেছেন কাটা তারের বেড়া। অপরদিকে ক্যসিংমং মারমা পাহাড়ের জোরপূর্বকভাবে কেয়ার টেকার ঘর তৈরী করেছেন। এই দুই ব্যাক্তি বাগান থেকে ১শ টির সেগুন গাছ কেটে নিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয় মুরুং ঝিড়ি ঝরনাতে যুদ্ধ বাগানে দুইজনের জায়গা চলাচলে রাস্তা বন্ধ করে সেখানেও জায়গা দখলে নিয়েছেন এই নেতা। যার কারনে বিভিন্ন দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী ক্যসিংমং, চিংশৈনু, নুম্যাসিংসহ বেশ কয়েকজন জানান, মংওয়াই চিং বেনজির প্রভাব দেখিয়ে আমাদের জায়গা থেকে গাছ কেটে নিয়ে গেছে। আমাদের জায়গা উপর রাস্তা ও হুমকি-ধমকি দেখিয়ে কয়েক একর জায়গা দখলে নিয়ে গেছে। নিজেদের বাগানে যাওয়ার রাস্তার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির টাকা খুজতে গেলে উলটো মামলা হুমকি-ধমকি ভয় দেখান মংওয়াই চিং। এখন আমরা খুব অসহায়। আমাদের জায়গা আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি মংওয়াই চিংকে আইনে আওতায় এনে তার কঠোর শাস্তি দাবী জানান।
এব্যাপারে বেনজিরের সহযোগী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং মারমা সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছ থেকে জোরপূর্বক ভাবে জায়গা দখলে নিয়ে থাকি তাহলে তাদেরকে প্রমাণ করতে বলেন।
জেলা প্রশাসক শাহ মোহাজিদ উদ্দিন বলেন, দুদকের নির্দেশনায় বেনজিরে সম্পত্তিসহ কিকি রয়েছে সবকিছু পাঠিয়ে দিয়েছি। যা করা দুদক তদন্ত করবে। ভুক্তভোগীদের সম্পত্তি ফিরিয়ে পাবার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা প্রশাসক শাহ মোহাজিদ উদ্দিন বলেন, এখন কোন কিছু বলতে পারছি না। দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। সেখান থেকে কোন নির্দেশনা আসলে সেটা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে।