[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

প্রকল্প অনুমোদন হলেই আমরা কাজ বাস্তবায়ন করব

রাঙ্গামাটির সাপছড়ির বাসিন্দারা পানির সঙ্কটে মানবেতর জীবন পার করছেন

৭১

॥ মনু মার্মা ॥
রাঙ্গামাটি শহরের খুব কাছের বাসিন্দা হয়েও বছরের পর বছর তীব্র পানির সঙ্কট নিয়ে জীবন যাপন করছেন সাপছড়িস্থ যৌথ খামার এলাকার মানুষ। তাঁদের ভাগ্যে সুপেয় পানি তো দূরের কথা নিত্য ব্যবহার্য্য পানিটুকুর সংস্থানও নেই বললেই চলে। পানির অপর নাম জীবন, অথচ সেই জীবন রক্ষাকারি পানির সঙ্কটে এখন স্বাভাভিক জীবন যাপন করাও দুঃসহ হয়ে পড়েছে। এত উন্নয়নের কাজ চলছে অথচ তাদের উন্নয়নে এ মৌলিক অধিকারটুকুর ছোঁয়া পাচ্ছেনা বলে রয়েছে আক্ষেপ আর নানান অভিযোগ।

পানির জন্য আক্ষেপ রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার সাপছড়িস্থ যৌথ খামার এলাকার মানুষগুলোর। বর্ষাকালে যেমন তেমন, শুকনো মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পানির এই সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। কিন্তু জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ কিংবা পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসন কোনো কর্তৃপক্ষই পানির সঙ্কট নিরসনে তাঁদের জন্য কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। অনেকে ক্ষোভ-অভিমানে প্রকাশ করেছেন তাঁরা কি এসব প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিগোচরেরও বাইরে কি না?

সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসীরা জানায়, বহু বছর আগে তারা যখন এই পাহাড়ি গ্রামে বসবাস শুরু করেছিল, তখন পানির এমন সঙ্কট ছিল না। কিন্তু কালের বিবর্তনে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে ছোট ছোট ঝিরি-ঝরণা, ছড়া-খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে তারা দিনে দিনে এমন দুর্বিসহ জীবনে পড়েছেন। এখন শুকনো মওসুমে তিন থেকে ৪শ’ ফুট নীচে গিয়ে কুয়া’র (গর্ত) নিঃসৃত পানি সংগ্রহ করে খাওয়া এবং নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ সামলাতে হচ্ছে।

এলাকাবাসী আরো জানায়, তাদের পানির কষ্ট দেখে অন্তত দুই যুগ আগে স্থানীয় একটি এনজিও জিএফএস (গ্রাভিটিফ্লো সিস্টেম) এর মাধ্যমে ৫টি হাউজে পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। বর্তমানে পানির উৎস মরে যাওয়ায় ৫টির মধ্যে ৪টিই অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এখন স্নান (গোসল) এর পানিতো দূরের কথা পিপাসা মিটানোর পানিটুক্ওু পর্যাপ্ত পরিমাণে মিলছে না। এলাকায় একটি সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয় ও ইউনিসেফ’র বিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন শিক্ষার্থীরা চরম পানির কষ্টে ভোগে। বছরের পর বছর এমন মানবেতর জীবন থেকে বাঁচতে তারা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষে কাছে ধর্ণা ধর্ণা দিয়ে আসছেন, কিন্তু কোনো প্রতিকার মেলেনি বলে উল্লেখ করেন।

যৌথ খাবার এলাকার গৃহিণী নন্দরানী চাকমা বলেন, শুস্ক মৌসুমে পানির জন্য খুবই কষ্ট হয়। পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে পাইপের মাধ্যমে যে পানি পাওয়া যায়, তা দিয়ে কোনো রকমে চলতে হয়। এক কলস পানি নেওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এলাকার আরেক গৃহিণী বলেন, শুস্ক মওসুমে পানির সংকট তীব্র হয়ে ওঠে। এতো বড় একটা গ্রাম, কিন্তু পানি সংগ্রহের জায়গা মাত্র একটি। কাপড়চোপড় ধোয়া তো দুরের কথা নিয়মিত খাবারের পানি, গোসলের পানিও পাওয়া যায় না।

এলাকার কার্বারী রতন চাকমা বলেন, তাঁদের এলাকায় পানির কষ্ট দীর্ঘদিনের, সারা বছরই পানির কষ্টে থাকতে হয়। তাঁদেও পানির জন্য দু:খ ঘোছানোর যেন কেউ নেই। সবাই চায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পানির কষ্ট দূর করতে এগিয়ে আসবেন। অনেকে আক্ষেপ কওে বলেন, তাঁদের কষ্ট দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দ, তাই পানির এ আঁকুতি এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে চায়।

স্থানীয় অভিভাবক কালাচক্কু চাকমা জানান, এই এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। স্কুল খোলা থাকলে শিক্ষার্থীরা চরম কষ্টে বিদ্যালয় পড়ার সময় পার করে। বিদ্যালয়ে তাদের টয়লেট ব্যবহারের কোনো সুযোগ থাকে না। এমনকি তেষ্টাটুকুও মেটাতে পারে না এই শিশুগুলো। তিনিও আক্ষেপ করে প্রশ্ন তোলেন, মরুভূমির মতো জায়গায়ও মানুষ আবহমান কাল থেকে পানির ব্যবস্থা করে আসছে। কিন্তু বিশাল কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাস করেও আমরা পানি পাই না। সরকার, প্রশাসন বা আমাদের নেতাদের চোখে কি আমরা মানুষ নই।

এলাকাবাসী জানায়, বেশ কয়েক বছর আগে এখানে নলকূপ বসাতে গিয়ে গ্যাসের উৎস্য বের হয়। তারপর বন্ধ হয়ে যায় পানির সন্ধান। আরো অনেক জায়গা পড়ে আছে, সেগুলোতে পরীক্ষা করে কেন কূপ খনন করা যায় না আমাদের বোধগম্য নয়। এমনও দিন যায়, এই গরমের দিনেও মা বোনেরা সপ্তাহে একদিন গোসল করতে পারেন। এমন দূর্বিসহ জীবন থেকে বাঁচতে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে চান, কিন্তু তাদের যাবার জায়গাই বা কোথায়।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া জানান, সমগ্র দেশের পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা ইন্ডিভিজ্যুয়াল ওয়াটার পয়েন্ট কমিউনিটি বেইস ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম এবং রুরাল পাইপ নেটওয়ার্ক সাপ্লাই স্কিমের কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এই প্রকল্পের আওতার মধ্যে সাপছড়ি যৌথ খামার এলাকায়ও একটি রুরাল পাইপ নেটওয়ার্ক সাপ্লাই স্কিম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্প পরিচালক দপ্তরে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে, প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই আমরা কাজটি বাস্তবায়ন করব এবং ওই এলাকার পানির সমস্যা দূর করা যাবে বলে মনে করি।