নারীর জন্য মানসিক শক্তি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হওয়ার সাহস যোগাবে
স্ত্রীকে নির্যাতনের দায়ে চাকমা রাজ দরবারে স্বামীকে সাড়ে ২৩ লাখের অধিক অর্থদন্ড
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
চাকমা সার্কেল চীফ এর চাকমা রাজ দরবারে স্ত্রীকে নির্যাতনের অপরাধে স্বামীকে মোটা অংকের অর্থ দন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। সেই সাথে স্ত্রী’র আমৃত্যু মাসিক ২৫ হাজার টাকা স্বামীকে প্রদান করতে হবে দরবারের বিচারক আদালত চাকমা সার্কেল প্রধান ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় দীর্ঘ ২৩ মাস বিচারিক কার্য সম্পন্ন করে সোমবার (২৫এপ্রিল) বাদী বি-বাদীর উপস্থিতেই এ রায় প্রদান করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার রাজবাড়ী এলাকার বাসিন্দা স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার স্ত্রী বিথীকে শাররীক মানসিক নির্যাতন করছেন স্বামী ত্রিদীব নগরের বাসিন্দা সুপ্রদীপ তালুকদার প্রকাশ জিতু এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে স্ত্রী গত ২০২২ সালের ১জুন চাকমা রাজ দরবারে অভিযোগ দায়ের করেন। নির্যাতিতা স্ত্রী অভিযোগ করেন জিতুর সাথে ১৪ বছর সম্পর্ক থাকায় পরে সামাজিক ভাবেই সুপ্রদীপ ও বিথী চাকমা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্ত বিবাহের ২মাস পরেই স্বামী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনা নিয়ে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য এবং পারিবারিক ঝামেলা লেগেইে থাকত। স্ত্রী প্রতিবাদী হয়ে উঠলে স্বামী সুপ্রদীপ তালুকদার প্রকাশ জিুত তাঁকে শাররীক মানসিক সহ নানাভাবে অত্যার নির্যাতন করে আসছিল। এক পর্যায়ে টানা অপমান, অসম্মান, অবহেলা এবং মানসিক নির্যাতন করতো। পরে তাঁকে ফেলে রেখে কক্সবাজের চলে যায় জিতু। এসব বিষয় জিতুর মা নমিতা জানার পরও ছেলের পক্ষাবলম্বন করেন। জিুত সম্পর্ক বন্ধনে রাজী না হওয়ায় পরে ক্ষতিপূরণ সহ বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়ে চাকমা রাজ দরবারে আবেদন করেন স্ত্রী।
স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগ এর সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় দীর্ঘ ২৩ মাস বিচারিক কার্য ও ৩ দফা শুনানী সম্পন্ন করে রাজ দরবারের বিচারিক আদালত স্বামী সুপ্রদীপ তালুকদার জিতুকে স্ত্রীর প্রতি সমাজ বিরোধী নিষ্ঠুর অমানবিক আচরণের দায়ে ৫০ টাকা জরিমানা করেন। সেই সাথে লাজভার, মনস্তাত্বিক নির্যতনের দায়ে বাদীনী (স্ত্রী’র) সামাজিক এবং পারিবারকি মর্যাদা হানির অপরাধে ১৫ লক্ষ, বিবাহ অনুষ্ঠানের ব্যয় বাবদ ৫ লক্ষ, বাদীনীর গৃহ ত্যাগ হতে মাসিক ২০ হাজার করে মোট ৩ লক্ষ ৬০ হাজার সহ মোট ২৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা প্রদানের আদেশ দেন। ক্ষতিপূরণের অর্থ আগামী ৬ মাসের মধ্যে প্রদান করতে হবে বলেও আদেশ করেন রাজ দরবারে বিচারিক আদালত। সেই সাথে বিবাহ প্রদত্ত সকল সোনা গহনা এবং বাদীনী (স্ত্রী’র) অন্যত্র বিবাহ বা আমৃত্যু মাসিক ২৫ হাজার টাকা স্বামীকে প্রদান করতে হবে। এ অর্থ ব্যাংক অথবা আদালতের মাধ্যমে স্বামী সুপ্রদীপ তালুকদার প্রকাশ জিতুকে প্রদান করতে হবে বলে চাকমা রাজ দরবারের রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এ আদেশ প্রদান করেন। এ সময় বাদী বি-বাদীর উভয়ই উপস্থিত ছিলেন।
অপর দিকে, বিবাদীর মা এ রায়ের অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং তাঁদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে এ রায়ের বিষদ বিভিন্ন গনমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। স্ত্রীকে নির্যাতনের দায়ে চাকমা রাজ দরবারে দায়েরকৃত অভিযোগের রায়ে নারী সমাজ এবং সমাজ সচেতন মহল খুশী হয়েছেন। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অমানবিক আচরণ, নির্যাতন সর্বোপরি পরকিয়া আসক্তদের জন্য একটি যুগপৎ রায়। পাহাড়ী সমাজে বর্তমানে নারীর প্রতি এরকম অনেক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। লোক লজ্জ্যার ভয়ে কেউ কেউ প্রতিকার চাইতেও পারছেন না। রাজ দরবারের এ রায় নির্যাতিতা নারীর জন্য মানসিক শক্তি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হওয়ার সাহস যোগাবে বলে অনেকেই বলিষ্ট মত প্রকাশ করেছেন।