॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
পর্যাপ্ত পরিমান পানি না থাকায় এবছর এক সপ্তাহ আগেই কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করণ সেই সাথে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আগামী ২৫এপ্রিল থেকে ৩ মাসের জন্য সকল প্রকার মাছ শিকার বন্ধ ঘোষনা করেছেন জেলা প্রশাসন। সেই সাথে মাছ সংরক্ষণাবেক্ষনের জন্য ব্যবহৃত সকল বরফ কল বন্ধ সহ মাছ ধরার সকল প্রকার নৌযানও হ্রদ থেকে সরিয়ে ফেলারও আদেশ প্রদান করা হয়েছে। এর অমান্য ঘটালে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮এপ্রিল) কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটি এর সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান এ আদেশ প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটি এর সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এ বৈঠকে কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্র এর ব্যবস্থাপক নৌ কমান্ডার মোঃ আশরাফুল আলম ভুঁইয়া, অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জোবাইদা আক্তার, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অধীর চন্দ্র দাশ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও রাঙ্গামাটি নদী উপকেন্দ্র প্রধান মোঃ ইসতিয়াক হায়দার, রাঙ্গামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া সহ অনান্য ব্যবসায়ীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জেলা প্রশাসক বলেছেন, এ বছর কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত কমতে থাকায় পূর্বের নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগেই কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করণ সেই সাথে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২৫এপ্রিল-২৪ইং থেকে আগামী ৩মাস হ্রদে সকল প্রকার মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হলো। পানি অতিরিক্ত কমে যাওয়ার কারণে জেলেদের জালে ছোট ছোট মাছগুলো ধড়া পড়ছে যা প্রাকৃতিক প্রজনন এবং মাছ বৃদ্ধিতে চরমভাবে ভাটা পড়ছে। হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ সময়কালীন মাছ সংরক্ষণাবেক্ষনের জন্য ব্যবহৃত সকল বরফ কল বন্ধ এবং সকল প্রকার নৌযানও হ্রদ থেকে সরিয়ে ফেলারও আদেশ প্রদান করেছেন। প্রশাসনের এ আদেশ অমান্য করা হলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান।
এদিকে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) সুত্র জানিয়েছে, কাপ্তাই হ্রদের উৎপাদিত মাছের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই হলো ছোট মাছ। বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে বৃহৎ এ হ্রদে। হ্রদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন। এ হ্রদের কেচকি, চাপিলা এবং মলা মাছের চাহিদা বেশী স্থানীয় সহ অন্যান্য জেলায়। কর্পোরেশন সুত্র জানায়, বর্তমানে হ্রদ থেকে ৪৪ প্রজাতির মাছ আহরিত হচ্ছে, তার মধ্যে ২৭ প্রজাতি হলো বড় এবং ১৭ প্রজাতি হল ছোট মাছ। অপর দিকে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে এ বৃহৎ হ্রদ মিঠা পানির হওয়ায় মাছের বিরাট এক ভান্ডার বলা যায়। হ্রদের এসব মাছ যথেষ্ট সুস্বাদু হওয়ার জেলা সহ আনান্য জেলাতে এর চাহিদা যথেষ্ট রয়েছে। মাছ শিকার বন্ধ সংক্রান্ত বৃহস্পবিারের বৈঠকে সকল প্রকার মাছ শিকার বন্ধ থাকাকালীন সময় হ্রদে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও জানানো হয়।
রাঙ্গামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, কাপ্তাই হ্রদের মাছ স্থানীয়দের নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে দেশের রাজধানী সহ বিভিন্ন এলাকায় সরবাহ করা হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদ নির্ভির ছোট বড় ব্যবসায়ীরা চাহিদা ভিত্তিক সরবরাহ করছেন সমতলের মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে। তিনি আরো জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সমতলের অনেক ব্যবসায়ী অগ্রীম বিনিয়োগও করে রাখেন যথা সময়ে চাহিদার মাছ পাওয়া যায় মত। তিনি আরো জানান, ব্রহৎ এ হ্রদ নির্ভর ২৬ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। মাছের প্রজননের সময় জেলা প্রশাসন ৩মাসের জন্য যখন মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ঐ তিন মাস সরকারিভাবে জেলেদের জন্য খাবারের চাল প্রদান করা হয়।
অপর দিকে মাছের চাহিদা মিঠাতে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন এর পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প এর আওতায় ক্রীক প্রকল্পের মাধ্যমেও বেসরকারিভাবে তিন পার্বত্য জেলায় মাছ চাষ করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারিভাবে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানায় এসব ক্রীক পাহাড়ি ঢালু এলাকায় বাঁধ সৃষ্টির পর সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে বলে জানান, প্রকল্পের জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, ২০২১ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের মৎস্য খাতের উন্নয়নে এসব ক্রীক প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সরকারি বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।