বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল এসোসিয়েশন রাঙ্গামাটি শাখার আয়োজনে
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা রীতির জনক ডাঃ হ্যানিম্যানের ২৬৯তম জন্ম দিন পালন
॥ দেবদত্ত মুৎসুদ্দী গোপাল ॥
চিকিৎসা বিজ্ঞানে জনপ্রিয় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা রীতির জনক ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেডিক স্যামুয়েল ডাঃ হ্যানিম্যানের ২৬৯ তম জন্ম দিন পালন করেছে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল এসোসিয়েশন রাঙ্গামাটি শাখা। বুধবার (১০ এপ্রিল) বিকালে রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপাস্থ মর্ডান হোমিও ক্লিনিকে এ দিবসটি পালন করা হয়।
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল এসোসিয়েশন রাঙ্গামাটি শাখার উদ্যোগে সভাপতিত্ব করেন ডাঃ রুপম দেওয়ান। সভায় বক্তব্য রাখেন, ডাঃ সুনিল চাকমা, ডাঃ জলহরি দাশ, ডাঃ মোঃ ওয়াহেদ ডাঃ মিতা চাকমা, সাংবাদিক সুশীল প্রসাদ চাকমা প্রমুখ। আলোচনাসভার শুরুতে আগত অতিথিদের ফুলেল শুভেচছা জানানো হয়। সভা পরিচালনা করেন ডাঃ বকুল দেওয়ান।
এ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ডাঃ হ্যানিম্যান ১৭৫৫ সালের ১০ এপ্রিল বর্তমান জার্মানির স্যাক্সনি প্রদেশের এল্ব নদীতীরবর্তি মিসেন নগরে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ক্রিশ্চিয়ান গটফ্রয়েড হ্যানিম্যান জার্মানির মিসেনে মাটির জিনিসপত্র তৈরির কারখানায় চিনামাটির পাত্রে রঙ-তুলির কাজের দক্ষ শিল্পী ছিলেন। তাঁর বাবা তাঁকে ১৭৭৫ সালে তিনি লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিদ্যা পড়ার জন্য ভর্তি করান। পরে সেখান থেকে ১৭৭৭ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার লিওপোল্ডস্ট্যাট জেলার ব্রাদার্স অব মার্সি হাসপাতালে চিকিৎসাবিদ্যা শিখতে চলে যান। সেখানে তিনি হিপোক্র্যাটিস, গ্যালন ও স্টোয়ার্কের লেখাগুলো সম্পর্কে বিশদ ধারণা অর্জন করেন। তাঁর প্রখর চিন্তাশক্তি, অসাধারণ অধ্যাবসায় ও চারিত্রিক সরলতার দ্বারা তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অধ্যাপক ও চিকিৎসক ডাঃ কোয়ারিনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। ছাত্রাবাসে হঠাৎ একদিন হ্যানিম্যানের সব টাকা-পয়সা চুরি হয়ে যায়। এতে তাঁর লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ার উপক্রম হলে তখন ডাঃ জে.ফন কোয়ারিনের সহযোগিতায় তিনি ট্রানসিলভেনিয়ার গভর্নর ব্যারণ এস.ফন ব্রুকেনহলের সঙ্গে হার্মানেস্ট্যাটে চলে যান। এখানে তিনি গভর্নরের মুদ্রা ও চিত্রকর্মের সংগ্রহশালার তত্ত্বাবধায়ক হয়ে লাইব্রেরিতে ব্যাপক পড়াশোনার সুযোগ পান। ১৭৭৯ সালে তিনি এনলার্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে তিনি হোফ্রাথ স্কোবারের কাছে এসে উদ্ভিদবিদ্যার পাঠ নেন। ডিগ্রি লাভের জন্য হ্যানিম্যান আপেক্ষিক রোগের কারণ ও ইহার চিকিৎসা বিষয়ে ২০ পৃষ্ঠার একটি ছাপানো গবেষণাপত্রও পেশ করেছিলেন। পরে ১৭৭৯ সালের ১০ আগস্ট চিকিৎসাবিদ্যায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি ডক্টরেট অব মেডিসিন (এমডি) উপাধি লাভ করেন।
বক্তারা আরো বলেন, ডাঃ হ্যানিম্যান ১০ বছর ধরে তিনি অত্যন্ত প্রতিপত্তির সঙ্গে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিতও ছিলেন। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে তিনি লক্ষ্য করলেন, তৎকালীন চিকিৎসা পদ্ধতি আন্দাজ, অনুমান, ব্যক্তিগত মতামত ও কিছু ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, চিকিৎসার পরও রোগের পুনরাক্রমণ বারবার উপলব্ধি করেন তিনি। এভাবে তিনি ধীরে ধীরে অ্যালোপ্যাথির ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। তিনি রসায়ন শাস্ত্র অনুশীলন এবং এসব বই অনুবাদ করে জীবিকা অর্জন করতেন। সে সময় চিকিৎসা পদ্ধতি দেখে হতাশ হয়ে বললেন সব চিকিৎসা প্রথাই রোগ প্রতিকারের, প্রকৃত ওষুধ কোথায়? এমন দিনে হঠাৎ তার নিজের ঘরেই রোগের ভয়াল আক্রমণ শুরু হলে নিজের ছেলের রোগযন্ত্রণা তাকে নতুন এক চিকিৎসার পদ্ধতি আবিষ্কারের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এভাবে ১৭৯০সালে এডিনবার্গের বিখ্যাত অধ্যাপক, শ্রেষ্ঠ রসায়নবিদ ডা. উইলিয়াম কালেনের লেখা চিকিৎসাবিষয়ক বই জার্মান ভাষায় অনুবাদকালে হোমিওপ্যাথির মূল সূত্র আবিষ্কার করেন। এভাবেই তিনি বিশ্বের কাছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জনক হয়ে উঠেন।
হ্যানিম্যান গভীরভাবে লক্ষ্য করলেন, যে পদার্থ সুস্থ শরীর যন্ত্রকে বিকৃত করে যেসব যন্ত্রণাদায়ক কৃত্রিম লক্ষণ সৃষ্টি করে, সে পদার্থের সূক্ষ্মমাত্রা বা শক্তিকে ওষুধ হিসেবে প্রয়োগ করলে ওই লক্ষণাদি বিদূরিত করে শরীরযন্ত্রকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে পারে। এ পদ্ধতি অন্য চিকিৎসা পদ্ধতির মতো জল্পনা-কল্পনা কিংবা অনুমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। টানা ছয় (৬) বছর এ পদ্ধতিতে তিনি নানা ওষুধ ও বহুবিধ তরল সেবন করে নিজ দেহের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেন। এ কাজে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন তার অনেক হিতৈষী।
এরপর তিনি তৎকালিন প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির নীতিমালার বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিলেন মানুষের ওষুধ একমাত্র মানবদেহেই পরীক্ষিত হতে পারে কিন্তু ইঁদুর, বিড়াল, গিনিপিগ, ঘোড়া, বানর কিংবা কোনো প্রাণীর ওপর নয়। তিনি তার এই বৈপ্লবিক চিকিৎসা পদ্ধতির নাম রাখলেন হোমিওপ্যাথি।