রাঙ্গামাটিতে ৩দিন ব্যাপী বিজু অনুষ্ঠান পালন পূর্ব র্যালী
আমাদেরকেও প্রত্যেকের জন্য আশার বাণী শোনাতে হবে: চাকমা রাজা
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
বিজু শুধু খাওয়া দাওয়াই নয় এটি জুম্ম জাতির আত্ম দর্শন, শেঁখড়ের দর্শন। বান্দরবানের পরিস্থিতি যাহাতে এখানে না হয় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। চুক্তির ২৬বছর পরেও কেন বলতে হয় জীবন আমাদের নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাতানো খেলায় কৃত্রিম সংঘাতের নাটক করা হয়। কাপ্তাই বাঁধের কারণে ক্ষতির ঘা এখনো শুকায় নি। বুধবার (১০এপ্রিল) সকালে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু ও চাংক্রান-২০২৪ উদযাপন অনুষ্ঠানের র্যালী পূর্ব আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
পৌরসভা প্রাঙ্গনে সকাল সাড়ে ১০ টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু ও চাংক্রান-২০২৪ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, প্রধান অতিথি ছিলেন, চাকমা সার্কেল প্রধান (চাকমা রাজা) ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, উদ্বোধক ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি আসনের সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার। বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট চঞ্চু চাকমা, অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, কবি ও সাহিত্যিক শিশির চাকমা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার।
র্যালীপূর্ব আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেছেন, বিজুর র্যালী আলোচনায় আমাদের বঞ্চনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদেরকেও প্রত্যেকের জন্য আশার বাণী শোনাতে হবে। এই সামজিক অনুষ্ঠান একটি সম্মেলন। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকের মঙ্গল কামনা করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু পাতানো খেলায় কৃত্রিম সংঘাতের নাটক করা হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
উদ্বোধক জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেছেন, বিজু ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠির সামাজিক প্রানের অনুষ্ঠান। এটি হলো আমাদের আত্ম দর্শন, শেঁখড়ের দর্শন। তাই ভেদাভেদ ভুলে এই সার্বজনীন অনুষ্ঠানকে প্রত্যেকের সম্মান বাজায় রেখে উৎসব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, অপসংস্কৃতিতে আপনারা মজে থাকবেন না। আমাদের দেশীয় এবং ঐতির্হ্যের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে হবে।
বিশেষ অতিথি সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার বলেছেন, ইসরাইলের গোলাগুলিতে ফিলিস্তিনে ৩৪ হাজার মানুষ মারা হলো কিন্তু কেন এই প্রশ্ন এখন বিশ্ববাসীর। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে কাউকে পিছু ফেলে নয়। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আজকে বান্দবানের পরিস্থিতি দেখুন। পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছর পরেও কেন বলতে হয় এ জীবন আমাদের নয়। জুম্মরা দেশের শত্রু নয় বরং পরম পরম বন্ধু।
অতিথি বক্তা কবি ও সাহিত্যিক শিশির চাকমা বলেছেন, কাপ্তাই বাঁধের জন্য যে ঘা এখনো শুকায়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন এবং পর্যটনের নামে অনেক জুম্ম পরিবারকে উচ্ছেদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আর কোন নতুন ঘা এর শিকার নয়। সীমান্ত সড়ক, পর্যটনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিষয়ে আঞ্চলিক পরিষদ এবং চাকমা সার্কেলকে জানানো হয় না। জেলা পরিষদগুলো নির্বাচিত নয় বলে তাদের জবাবদিহি এবং দ্বায়বদ্ধতাও নেই।
শুরুতে অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির যুবক যুবতিরা ঐতির্হ্যরে পোশাকে নৃত্য পরিবেশন করেন। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অধিকার সম্বলিত প্লে-কার্ড ব্যানার সহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির বিভিন্ন জাতির হাজারো নর-নারী র্যালিতে অংশ গ্রহন করেন। র্যালী শহরের প্রধান সড়ক হয়ে রাজবাড়ীস্থ শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। প্রতি বছরের মত এবার বৃহৎ এই র্যালী করা হয়েছে এতে প্রত্যেক উপজেলার মানুষ অংশ গ্রহন করেন। রাঙ্গামাটিতে ৩দিন ব্যাপী বিজু অনুষ্ঠান পালনের লক্ষ্যে প্রতি বছরের মত এবার র্যালী বের করা হয়।