[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

বান্দরবানে দুই উপজেলায় তিন ব্যাংকে কেএনএফ এর দুধর্ষ ডাকাতি

সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বেশি: আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন

৯২

॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥
বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির পর এবার থানচি উপজেলার শাখা কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে দিন দুপুরে লুটপাট চালিয়েছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্যরা। এ সময় দুইটি ব্যাংক থেকে ১৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। বুধবার (৩ এপ্রিল) সোয়া বারোটার দিকে দুটি ব্যাংকের লুটপাট ও আক্রমনের ঘটনা ঘটে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মামুন।

বান্দরবানের এই প্রথম পাহাড়ের কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের লুটপাট ঘটনাটির পর পুরো জেলার জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাত উপজেলার প্রত্যেকটি ব্যাংকে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লেনদেন। তাছাড়া জেলা ও উপজেলার জুড়ে পুলিশ সেনাবাহিনী, র‌্যাব, এপিবিএন সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে প্রশাসন। তাদের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্থানীয় সকল সম্প্রদায়ের মানুষও। কেএনএফ এর এই ঔদ্ধত্য আচরণ কোনভাবে মানা যায় না এসব ঘটনার পুঃনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছে। দুদিনের ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় কয়েক কোটি টাকা লুট করেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (২এপ্রিল) রাত আটটার দিকে রুমা উপজেলার জুড়ে বিদ্যুবিহীন হয়ে যায়। এরপর শতাধিক কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ সন্ত্রাসীরা উপজেলার পরিষদ, মসজিদ ও ব্যাংকসহ পুরো এলাকার ঘেরাও করে। এসময় মসজিদে তারাবি নামাজ শেষে মুসল্লীসহ ব্যাংকের কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জিম্মি করে রাখে। এরপরই রাতে সোনালী ব্যাংকে দুধর্ষ লুটপাট চালায়। ব্যাংকের ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুরের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় ব্যাংকে কোন অর্থ না পেয়ে সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তবে ব্যাংকে ভল্ট ভেঙ্গে অর্থ নিয়ে গেছে কীনা সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাটি পুরো এলাকায় জুড়ে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বুধবার দুপুরে দিকে বাকলাই সড়ক দিয়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা দুটি চান্দের গাড়ি করে থানচি শহরে প্রবেশ করে। এসময় উপজেলায় পৌঁছার আগে পাহাড়ের উপর থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। পরবর্তীতে তারা দুটি ব্যাংকে প্রবেশ করে লুটপাটের তান্ডব চালায়। বাংকে থাকা ভল্ট ভাঙ্গার চেষ্টা চালালে তারা ব্যর্থ হয়। এর আগে ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি কক্ষে তালা বদ্ধ করে রাখেন। এসময় লেনদেন অবস্থায় থাকা ১৭ লক্ষ ৫৪ হাজার টাক লুটপাট করে নিয়ে যায় কেএনএফ এর সন্ত্রাসীরা।

অপর দিকে ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপজেলার প্রাঙ্গনে মানববন্ধন করেছে। এসময় তারা হাতে ফেস্টুন নিয়ে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনের মুক্তি দাবি করেন। পাশাপাশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। রুমা উপজেলা পরিষদের মসজিদ ইমাম নুরুল ইসলাম বলেন, রাত ৮টার দিকে তারাবি নামাজ শেষে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ সন্ত্রাসীরা সবাইকে ঘেরাও করে জিম্মি করে রাখে। পরে তারা বাংকে লুটপাট শেষে সবার কাছ থেকে মোবাইলও ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। রুমা শাখা সোনালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার উথোয়াই চিং মারমা বলেন, গতকাল সন্ত্রাসীরা মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পকেট থেকে ভল্টের চাবি নিয়ে নেয়। চাবির সাথে কাছে থাকা টাকা ও মোবাইল ও ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা ব্যাংকের ভল্ট খুলতে না পেরে ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

এদিকে রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকে পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘঘটনাস্থল পরিদর্শন, জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন ও উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামসহ উর্ধতন ককর্মকর্তারা।

অপরদিকে বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রুমা সোনালী ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করে পুলিশ ও আনসারের কাছে থাকা অস্ত্র ও গুলি লুট করে নিয়ে গেছে। একই সাথে ব্যাংক ম্যানেজারকেও অপহরণ করে নিয়ে গেছে তারা। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি আরো জানান, পাহাড়ে সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নাই এটা ভাবার কোন যুক্তি নাই। বরং সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের আরো বেশি সক্ষমতা রয়েছে। পাহাড়ে যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তাছাড়া এই পাহাড়ি অঞ্চলে জঙ্গি বাদ দমনের সাফল্য অর্জন করতে পারব।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক ভাবে যেটি যাচাই বাছাই করেছি সেটি হল ব্যাংকে থাকা ভল্ট ভেঙ্গেছে এবং অর্থ নিয়ে গেছে কীনা সেটা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। সেটি সিআইডি টিম এসে পরিক্ষা নিরিক্ষার পর জানা যাবে। পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন, গতকাল রাতে ব্যাংক লুটপাট করা পর যারা নিরাপত্তার দ্বায়িতে ছিল তাদের কাজ থেকে এসমজি, রাইফেল ১৪টি ও ৪১৫ রাউন্ড গুলি নিয়ে গেছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, গত বছর ৫ নভেম্বর মুনলাই পাড়াতে কেএনএফ এর সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দু’পক্ষে চারটি বিষয় নিয়ে সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। কিন্তু চারটি বিষয়ের মধ্যে দুটি বিষয়ে শর্ত ভঙ্গ করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ সদস্যরা। এরপরই চলতি বছর ৫ মার্চ সকালে দ্বিতীয় বারের মত শান্তি কমিটির বৈঠক হয়। ঐ বৈঠকে আরো তিনটি দাবী জানিয়ে সাতটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। কিন্তু স্বাক্ষরিত এই সমঝোতা বারবার ভঙ্গ করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা আরো উগ্র হয়ে পড়ে। এবার তাদের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্থানীয় সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। কেএনএফ এর এই ঔদ্ধত্য আচরণ কোনভাবে মানা যায় না এসব ঘটনার পুঃনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছে। সেই সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটিকেও জবাবদিহিতার আনা দরকার বলেও তারা জানান।