॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥
পবিত্র মাহে রমজানে কলার চাহিদা থাকায় খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় কলার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় কলা পরিপক্ক না হতেই কলা নিয়ে আসেন বাজারে। পাহাড়ে উৎপাদিত কলা ফরমালিনমুক্ত হওয়ার কারনে সারাদেশে এর চাহিদা ব্যাপক। পাহাড়েই কলার উৎপাদন বেশী বিধায় দাম বৃদ্ধির বিষয়টি মানছেন না স্থানীয়রা। ভোক্তা সাধারনের অধিকার রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের বাজার পরিদর্শন সহ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা দরকার।
চিনি চাম্পা কলার তুলানায় দেশি বাংলা কলা অনেক মিষ্টি, সুস্বাদু এবং দেখতে খুব সুন্দর হয় বিধায় এই কলার বেশ চাহিদা রয়েছে। খেজুরের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হওয়াতে ইফতারে চাহিদা বেড়েছে কলার তাই সে সুযোগে দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। তাছাড়া সেহরী এবং ইফতারকে সামনে রেখে বিশুদ্ধ এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার প্রতি মনোযোগ দেয় সকলে। এরই প্রেক্ষিতে খেজুরের পাশাপাশি কলার চাহিদাও বেড়ে যায় অনেক। সারা দেশের খেজুরের চাহিদা পূরণ করতে যেমন বিভিন্ন দেশ থেকে খেজুর আমদানি করতে হয়। তেমনী সারা দেশের কলার চাহিদা পূরণ করতে মাটিরাঙ্গা তথা পার্বত্য অঞ্চলের কলাই প্রধান ভরসা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে বসবাসরত সকলেই সবচেয়ে বেশি কলা চাষ করে থাকেন। সারা বছর উৎপাদনের পাশাপাশি রমজানে কলার চাহিদা পূরণে তারা রমজান মাসকেই বেশি প্রাধান্য দেয় যাতে বেশী লাভেই কলা বিক্রয় করা যায়। রমজানের কলার এই চাহিদা পূরণে ক্রেতারা বেশ চড়া দামেই কৃষকদের নিকট থেকে কলা ক্রয় করে থাকেন। তাছাড়া পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব বৈশাবির কারণেও কলার দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
মাটিরাঙ্গায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি কলার ছড়া ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। চাদের গাড়ি জিপ থেকে নামানো হচ্ছে কলা। দাম বেড়েছে অনেক, প্রতিটি চিনি চাম্পা কলা আগে যার দাম ২শত টাকা ছিল সেটা বেড়ে হচ্ছে ৫শত টাকা। প্রতিটি বাংলা কলার আগে যার দাম ছিল ৬শত টাকা সেটির দাম বেড়ে এখন ১৩শত টাকা বিক্রি করা হয়। তাছাড়া ৫শত টাকার নিচে কোন কলার ছড়াই পাওয়া যাবে না। বড় একটি কলার ছড়া বিক্রি হয় ২/৩হাজার টাকা। তাছাড়া পাকা কলার দাম বেড়েছে তিনগুণ, আগে যে কলা প্রতি টি ৩/৪ টাকা বিক্রি করা হতো সেটি রমজানে বিক্রি হচ্ছে ১০/১২ টাকায়। কলার অতিরিক্ত দামকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন অনেক ব্যবসায়ী দেখা যায় যারা কাঁচা কলা কিনে ঔষধ দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করে।
এদিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার বড় বাজার শনিবার এ দিনে মাটিরাঙ্গায় উৎপাদিত বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর পরিমাণে কলা নিয়ে আসেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে মাটিরাঙ্গার ১০নং, বাইল্যাছড়ি, ওয়াছু, বেলছড়ি, গোমতী, বড়নাল, তবলছড়ি ও তাইন্দং এলাকায় বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঁচু ভূমিতে কলার চাষ হয়। কলা চাষে পরিচর্যা ছাড়া অন্য কোন খরছ নাই বিধায় এ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এসব এলাকার কৃষক নিজেদের টিলা ভূমিতে উৎপাদিত কলা নিয়া আসেন। পাশাপাশি অনেকে আবার কলার বাগান কিনে ওই বাগান থেকে কলা সংগ্রহ করে বাজারে কলা নিয়া আসেন বিক্রি করতে। এসব কলা পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকাসহ সারাদেশে নিয়ে যায়। রমজান ও পহেলা বৈশাখ কে কেন্দ্র করে প্রতিযোগিতামুলক ভাবে বেড়ে যায় কলার দাম। ফলে কলার চাষিরা অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানে কলার দাম কয়েকগুন বেশি দাম পায়।
মাটিরাঙ্গার স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া বলেন, আগের চেয়ে এখন দ্বিগুণ দামে কলা কিনতে হচ্ছে। আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করতে না পারলে লাভ করতে পারব না। অবশ্য, দাম বাড়লেও কলার চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগে যে পরিমাণে কলা বিক্রি হতো, এখন তারচেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে। আরেক ব্যবসায়ী করিম মিয়া বলেন, বাজারে কলার আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে যাতায়াত এবং শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কলার উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ কারণে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলার দামও বেড়েছে। এখন এই ব্যবসায় পুঁজি বেশি লাভ কম। কলা ব্যবসায়ী কাজল মিয়া বলেন, আমি ৫ বছর ধরে নরসিংদী থেকে এখান থেকে কলা ক্রয় করে থাকি। পাহাড়ের কলার চাহিদা বেশি থাকলেও বাজার দখলে রয়েছে অপরিপক্ক কলায়। রমজানে মাসে আমি ১হাজার কলার ছড়ি কিনেছি। তবে শহরে কলার দাম কমতে শুরু করলেও মাটিরাঙ্গায় দাম বেশি। বর্তমানে মাটিরাঙ্গায় কলার উৎপাদন কম জানিয়ে মাটিরাঙ্গার কলার ইজারাদার প্রতিনিধি হজরত আলী বলেন, বানরের আক্রমণ এবং ঝড়ের কারণে কলা গাছের ক্ষতি হয় বেশি মাটিরাঙ্গা থেকে প্রতি কলা ছড়া ৪ টাকা করে টোল নেয়া হয়। সাপ্তাহে ৭টি গাড়ি লোড হয়। প্রতি গাড়িতে গড়ে ৬০০/৭০০ টি কলার ছড়া থাকে।
এদিকে মাটিরাঙ্গায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কলা আবাদকৃত জমির পরিমাণ ৫৩০ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ২৩হাজার ৭শত ৮৩ মেট্রিকটন। মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সবুজ আলী জানান, সমতল বা স্যাঁতস্যাতে মাটিতে কলার ভাল ফলন হয় না। পাহাড়ের মাটিতে এসব কলা আপনা আপনিই বেড়ে ওঠে। তেমন পরিচর্যার ও প্রয়োজন পড়ে না। শুধু কলা চারার আশপাশে জঙ্গল পরিষ্কারসহ মরা পাতা ও অতিরিক্ত চারা কেটে দিলেই হয়। এটি অনেক লাভজনক ফল। এটি চাষে কৃষকের কোন লোকসান গুনতে হয়না। তবে অপরিপক্ক কলা সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।