[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

মাসের উপস্থিতি দেখিয়ে লাপাত্তা কিন্তু বিল ভাউচারে অর্থ আত্মসাত

বান্দরবানের গ্যালেঙ্গ্যা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাচঁ বছরে ছিলেন মাত্র ১৫দিন

১১৬

॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥
বান্দরবানের রুমায় ৪নং গ্যালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের গ্যালেঙ্গ্যা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপস্থিত না থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বরাদ্ধকৃত স্লিপের উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উটিংশৈ মারমা বিরুদ্ধে। শুধু অর্থ আত্মসাৎ নয় গত পাচঁ বছরের বিদ্যালয়ের উপস্থিত থেকেছেন মাত্র পনেরো (১৫)দিন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ওই এলাকার বাসিন্দা ও অভভিাবকগন। শিক্ষক এত ফাঁকিবাজি করে গেলেও যেন দেখার কেউই ছিলনা।

অভিযোগ আছে, তিনি বিদ্যালয়ের আসার দুরের কথা মাসে একবার এসে পুরো মাসে উপস্থিতির স্বাক্ষর করে পুণরায় লাপাত্তা হয়ে যান। পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা অজুহাত দেখিয়ে বিদ্যালয়ের উপস্থিত না থেকে মাসে মাসে বেতন তুলে নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাছাড়া গত পাঁচ বছরের এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের উপস্থিত ছিলেন মাত্র পনেরোদিন। অনুপস্থিতির পাশাপাশি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত স্লিপের মাধ্যমে বরাদ্ধে অর্থ উত্তোলন করে কোন বাস্তবায়ন না করে দীর্ঘ বছর ধরে আতসাৎ করে এসেছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। যার ফলে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের দুরের কথা শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌছাইনি কোন শিক্ষা সামগ্রী। এই শিক্ষকের অবহেলা ও গাফিলতি কারণে নানা সমস্যায় ভোগ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের।

জানা গেছে, গ্যালেঙ্গ্যা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিনজন। তার মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ১ জন ও সহকারী শিক্ষক রয়েছেন আরো দুইজন। সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১৭ জন। সেই বিদ্যালয়ের ২০১০ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন উটিংশৈ মারমা। কিন্তু সহকারী শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত ক্লাসে আসলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসেন না বিদ্যালয়ের। মাঝে মধ্যে আসলেও সেসময় বিদ্যালয়ের স্লিপ বরাদ্ধ অর্থ উত্তোলন করতে সভাপতির স্বাক্ষর নিতে আসেন এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। শুধু তাই নয় তিনি পারিবারিক ও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজের অজুহাত দেখিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান দীর্ঘ সময় ধরে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রুমা বাজার থেকে ২৬ কিলো দূরে অবস্থিত গ্যালেঙ্গ্যা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নৌ পথে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড়ঘন্টা।এরপর দেখা মিলে প্রত্যন্ত এলাকার অবস্থিত বিদ্যলয়টি। বিদ্যালয়ের চারিপাশে ভরা জঙ্গল। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত শৌচাগার, দোলনাসহ বিভিন্ন খেলাধুলা অকেজো ভাবে পড়ে আছে। শুধু তাই নয় বিদ্যালয়ের সিঁড়ি থেকে ছাদ পর্যন্ত জরাজীর্ন অবস্থায় পড়ে থাকায় যেকোন সময় ঘটতে পারে শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনা। তাছাড়া বছরের পর বছর বিদ্যালয়ের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্ধ হলেও সেসব বরাদ্দের উন্নয়নের দূরের কথা কোন কার্যক্রম দেখা মেলেনি। যার ফলে ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, স্কুলে প্রতিবছরের বিদ্যালয় মেরামত ও গরিব অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য যে সকল বরাদ্দগুলো আসে, সেগুলো কখনো বাস্তবায়ন করতে দেখ্নেনি গ্রামবাসীরা। অথচ বিদ্যালয়ের ছাঁদে নোংরা অগোছালো, শ্রেণি কক্ষে জানালা ভাঙ্গা, বাইরে চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিঁয়ে অর্বজনা ও গাছগাছালি ভরপুর। এ ধরনের দায়িত্ববানরা অবহেলা করলে গ্রামে ছেলেমেয়েরা কিভাবে সু-শিক্ষিত হয়ে উঠবে তা নিয়ে প্রশ্ন অভিভাবকদের। তাছাড়া শিক্ষকদের অবহেলিত ও গাফিলতির কারনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা নিজ সন্তাদের শহরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।সঠিকভাবে প্রতিনিয়ত ক্লাসের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের উন্নয়নের দাবি জানান এলাকাবাসীরা।

গালেংঙ্গ্যা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুঠোফোনে উথোয়াই নু মারমা বলেন, আমি স্কুলে সভাপতি হওয়ার পর তাকে বিদ্যালয়ে মাত্র তিনবার স্কুলে উপস্থিত দেখেছি। তারপর থেকে আর কোন হুদিস পাওয়া যায়নি। তাছাড়া বিভিন্ন বরাদ্দে স্লিপের বরাদ্দ আসলেও কাজের কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। তিনি আরো বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমাকে রুমা বাজারে ডেকে এনে স্বাক্ষর নিয়ে গেছে। কি জন্য স্বাক্ষর নিয়ে গেছে আমি জানি না। এখন তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীরা অভিযোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে পাড়াবাসীরা। ঐ শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন।

গ্যালেঙ্গ্যা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত সহকারি শিক্ষক উশৈমং মারমা মুঠোফোনে বলেন, আমি বিদ্যালয়ের যোগদান করার দুইবছরের মাথায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উটিংশৈ মারমাকে মাত্র চারবার দেখা মিলেছে বিদ্যালয়ে। তাছাড়া স্কুল মেরামতের জন্য দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ এসেছে শুনেছি,তবে কাগজে কলমে ঠিক রাখলেও কাজে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন চিহ্ন দেখা মিলেনি।

গালেংঙ্গ্যা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে মেম্বার ও পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মংসিংনু মারমা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গত পাচঁ বছরের পনেরো দিন উপস্থিত ছিলেন।এরপর থেকে তাকে কোনদিন স্কুলে দেখা যায়নি। তাছাড়া বিদ্যালয়ের সিল্পের বরাদ্দ আসলেও তারা তাদের মতো করে বিল উত্তোলন করে নিজেদের পকেট ভারি করে অথচ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উথোয়াইনু মারমাকে নামে সভাপতি বানিয়ে রেখেছে। বিদ্যালয়ের আসা বরাদ্ধ প্রতিবারে বিল উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাৎত করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

গ্যালেঙ্গ্যা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উটিংশৈ মারমা এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাড়াবাসি যারা অভিযোগ করেছে সবকিছু ষড়যন্ত্র। আর এখন তো স্কুল বন্ধ, তাছাড়া আমার অফিসে বিভিন্ন কাজ থাকার কারণে বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক দাবি করেন তিনি প্রত্যেকদিন স্কুলে যান। অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাবে উত্তর দেন, আমি বান্দরবানে ছেলে, বুঝে নিবেন। একপ্রকারে বান্দরবানে এসে প্রতিবেদককে দেখা করার অফার দেন এই শিক্ষক।

এই বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, এখন রোজার মাসে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে সেহেতু তদন্ত করার সমম্ভ নয়। বিদ্যালয় চালু হোক তখন এই বিষয়ে তদন্ত করা হবে বলে আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।