[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

নানান রোগ প্রশমনে রয়েছে ঔষুধীগুণ

মাটিরাঙ্গা পাহাড়ের মেঠোপথে শ্বেত-শুভ্রতায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ভাঁট ফুল

৬৫

॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥
বসন্তকে রাঙাতে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে শ্বেত-শুভ্রতায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ভাঁট ফুল। পথ চলতে বুনো এই ফুলটির দেখা মিলে সব স্থানে, পথিকের দৃষ্টি এড়ানো অসম্ভব বলেই অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকার মধ্যে একটা ভীষণ রকমের আনন্দ কাজ করে। নিজেকে তখন প্রেমিক বা কবি ভাবার আনন্দে অনেকটা অতি আবেগে নিয়েই ফুলটি ছিঁড়ে নিয়ে যান অনেকে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন পথে প্রান্তরে শ্বেত-শুভ্রতায় ফুটে থাকা ভাঁট ফুলের কথা। অঞ্চল বিশেষে নামের ভিন্নতা থাকলেও এ উপজেলায় ভাঁট ফুল নামে পরিচিত এই ফুল। এটি গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত বুনো ফুল। এ ফুলে বিমোহিত হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার মুখ কবিতায় লিখেছেন, ভাঁট আশঁ শ্যাওড়া বন বাতাসে কি কথা কয় বুঝি নাকো, বুঝি নাকো চিল কেন কাঁদে, পৃথিবীর কোন পথে দেখি নাই হায়, এমন বিজন পথের ধারে দু প্রান্তে প্রকৃতিকভাবে জন্ম গ্রহন করে থাকে। ভাঁট বা ভাইট ফুল নিয়ে কবির এমন বর্ণনার বাস্তবতায় মাটিরাঙ্গার চড়পাড়ায় দেখা মিলে ভাঁট ফুলের। রাস্তার দুই ধারে, পুকুরপাড়ে, ঝোপঝাড়সহ নানা পরিত্যক্ত জায়গায় ভাঁট ফুল প্রকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ে শ্বেত-শুভ্রতায় ফুটেছে থোকা থোকা ফুল। অনেকটা নীরবে বিলিয়ে দিচ্ছে সৌন্দর্য।

ভাঁট গাছের প্রধান কান্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান। সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয় এ ফুলের গাছ। এ গাছের পাতা দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদন্ডে ফুল ফোঁটে। পাপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশ্রণ আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি ফুল ফোঁটে। এ ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। রাতে বেশ সুঘ্রাণ ছড়ায় এ ফুল। ফুল ফোঁটার পর মৌমাছিরা ভাঁট ফুলের মধু সংগ্রহ করে। ভাঁট উদ্ভিদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি তোতো হওয়ার কারণে ভেষজ গুনাগুন রয়েছে তার। বিষাক্ত কিছু কামড় দিলে ফুলের রস ক্ষত স্থানে দিলে দ্রুত সেরে যায়। তাছাড়া অনেকে কৃমি দুর করার জন্য এ ফুলের রস খেয়ে থাকেন। চর্মরোগে নিয়মিত ফুলের রস মালিশ করলে উপশম মেলে। ওই গাছের পাতার রস গ্যাস নির্মূলসহ ছোটদের মুখে অরুচি, পেট ফাঁপা ও জ্বর সারাতে কার্যকরী। তাছাড়া গরু-ছাগলের গায়ে উকুন হলে ভাইট পাতা বেটে দিলে উকুন মরে যায়। বসন্ত শেষে ভাঁট গাছ কেটে রান্নার জ্বালানির চাহিদা মেটানো হয়।

মাটিরাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক আলাউদ্দিন হেলাল বলেন, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বর্তমান প্রজন্ম এ গাছটির ভেষজ গুনাগুন জানেনা বলেই ঝোপঝাড় মনে করে কেটে ফেলা হচ্ছে ভেষজ ঔষধিগুণ সম্পন্ন এ ফুলগাছ টি। আগে সব জায়গায় ভাইট গাছ দেখা যেত। এখন বসতবাড়িসহ ফসলি জমি বেড়ে যাওয়ায় ঝোপঝাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। তাছাড়া কীটনাশক প্রয়োগ, বন-জঙ্গল পরিষ্কার, ছাড়াও প্রতি বছর রাস্তা-ঘাট সংস্কার করণে কেটে ফেলা হচ্ছে মহামূল্যবান এ গাছ।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আমির হোসেন বলেন, ভাটঁ উদ্ভিদ অবহেলায় ও অযন্তে চাষ ছাড়াই অনেকটা প্রকৃতিকভাবে বেড়ে উঠে। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুম্পক উদ্ভিদ। বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত গাছটিতে ফুল ফুটে। ফুলটির নির্মানশৈলি নানা কারুকাজে ভরা। এ ফুলের পুংকেশর, পাপড়ি, পাতা ও কান্ডকে প্রকৃতি নিখুঁত ভাবে সাজিয়েছে। ফুলের পুংকেশরই এ ফুলের প্রধান সৌন্দর্য।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সবুজ আলী বলেন, ভাঁটফুল বা ঘেটু গুল্মজাতীয় বুনো ফুল গাঁয়ের মাঠে কিংবা রাস্তার ধারে অযত্নে ফুটে থাকে। এই ফুল দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় ভাঁট বা ঘেটু পুজা করে থাকে বলে তাদের কাছে ভাঁটফুলের অনেক কদর রয়েছে। এ গাছের ভেষজ গুণাগুণও রয়েছে। এই উদ্ভিদ প্রকৃতি থেকে উজার হয়ে যাচ্ছে। তাই ওষুধিগুনাগুন ও বুনো সৌন্দর্য উপভোগে ভাইট ফুল রক্ষা করা জরুরি।