কুকি-চিন ন্যশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এর হুমকি
বান্দরবানের রুমা ও থানচি সড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য গণপরিবহন চলাচল বন্ধ
॥ উবাসিং মারমা, রুমা ॥
বান্দরবানের রুমা ও থানচি সড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করেছে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)। রবিবার (১ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে দুই উপজেলার সড়কে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। তাদের হুমকিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। এতে দূর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীসহ বেড়াতে আসা পর্যটকরা। শুধু তাই নয় সকালে পাহাড়ে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা রুমা লাইনম্যান লুপ্রু (৫৩) মারমাসহ বেশ কয়েকজনকে মারধরে অভিযোগও পাওয়া গেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ১৩ ফেব্রুয়ারী সকালে কেএনএফের ১৭ জন সদস্য অস্ত্র নিয়ে চাঁদা আদায় করতে রিঝুক পাড়াটিকে ঘেরাও করে। পরে গ্রামের থাকা উহ্লাচিং মারমা (৩৭) নামে এক যুবককে উদ্দ্যশ্যে করে গুলি করে কেএনএফ সদস্যরা। এতে গুলি লেগে ঘটনাস্থলে আহত হন তিনি। এরপরই প্রতিবাদে ক্ষোভ জমে উঠে রুমা উপজেলার মারমা সম্প্রদায়ের সচেতন নাগরিক সমাজ। ঘটনাটি কিছুক্ষণ পর বিক্ষোভ মিছিলে বের হন রুমা উপজেলার সর্বত্র মানুষ। দোষীদের আইনের আওতায় না আনলে কেএনএফ নির্যাতনের প্রতিবাদের কঠোর মানববন্ধনে ডাক দেন সচেতন মহল। পরের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারী সকালে কয়েক হাজারো মানুষ কেএনএফ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের অংশ নেন। এই মানববন্ধনের চলাকালীন দুর্বৃত্তরা বম জনগোষ্ঠীর বাড়িতে আক্রমণ চালায়।
এদিকে গেল ১৪ ফেব্রুয়ারী রুমায় বম জনগোষ্ঠীর উপর হামলায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবীতে তিন উপজেলায় যান চলাচল বন্ধের ঘোষনা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিবৃতি দেয় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।
পরিবহন শ্রমিকরা জানায়, সকালে কেএনএফ সদস্যরা পরিবহন লাইম্যান শ্রমিককে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। এতে গুরুতর আহত হন পরিবহনে শ্রমিক। তাদের হুমকির মুখে পড়ে সকাল থেকে বান্দরবান জেলা সদর থেকে কোন যানবাহন স্টেশন ছেড়ে যায়নি এবং উপজেলা থেকেও কোন বাস স্টেশন ছেড়ে জেলা শহরে প্রবেশ করেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে বান্দরবানের রুমা ও থানছি ষ্টেশন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা সাধারণ যাত্রী ও শতশত পর্যটকদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বাস ছাড়ার আশায় প্রায় কয়েকঘন্টা ধরে বসে আছেন অনেকেই। তবুও দেখা মিলছে না বাস চলাচলের। অনেকেই আবার ভাড়া দ্বিগুন দিয়ে কেউ যাচ্ছে মোটর সাইকেল যোগে আবার কেউ ছুটছে চান্দের গাড়ির সাহায্যে। গাড়ি চলাচল না করায় ভোগান্তির মুখে পড়েছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ যাত্রীরা।
রুমা ও থানচি স্টেশনে কোন গাড়ি না পেয়ে কয়েকঘন্টা ধরে বসে আছে থুইম্রাচিং মারমা ও প্রদীপ তচঙ্গ্যা। তারা জানান, সকাল থেকে বসে আছি স্টেশনে। নিজ গন্তব্য যাবো বলে বিভিন্ন মালামাল আর বাচ্চা নিয়ে স্টেশনে হাজির হয়েছি। শুনেচ্ছি কেএনএফ হুমকি কারণে বাসে মালিক পক্ষ থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। এতে আমাদের চলাচলের ভোগান্তি হচ্ছে।
বান্দরবান-রোয়াংছড়ি-রুমা-থানছি মোটরযান পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুল আলম বলেন, সকালে বান্দরবান থেকে বাঘমারা ও রোয়াংছড়ি বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে। কিন্তু রুমা ও থানছি স্টেশন থেকে সকাল হতে কোন বাস ছেড়ে আসেনি। কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএফ) বাস না চালানোর হুমকি দেওয়ায় বাস চলাচলের বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লা চিং মারমা জানান, তার ছোটভাই লুপ্রু (৫৩) মারমা নামে দীর্ঘদিন ধরে রুমা বাস স্টেশনের লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। আজ সকালে বাড়ি থেকে বাস স্টেশনে যাওয়ার সময় পলিকা পাড়া শ্বশান এলাকায় কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্যরা তার ভাই লুপ্রুকে ধরে নিয়ে হামলা করে আহত করেছে। প্রায় আধা ঘন্টার মারধর করে ছেড়ে দেয়। লুপ্রুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
২নং রুমা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শৈমং মারমা (শৈবং) বলেন, রুমায় এখন রাস্তায় রাস্তায় কুকিচিন আর্মির সদস্যরা টহল দিচ্ছে। মানুষজনকে হুমকী ও মারধর করছে। গাড়ি না চালানোর জন্য হুমকী দিচ্ছে। এ কারনে রুমা থেকে বান্দরবান কোন বাস ও যানবাহন ছাড়েনি।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাহজাহান জানান, রুমা থেকে বান্দরবান সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে শুনেছি। এরপর থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।