রুমা সহ অন্যান্য উপজেলায় যে কোন সময় পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে
বান্দরবানে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কেএনএফে’র বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি সচেতন নাগরিক সমাজ
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
শান্তি কমিটি করার পর আবারো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট(কেএনএফ)র অত্যাচারে এবার ফুলে ফেঁসে উঠছে রুমা সহ অন্যান্য উপজেলার সাধারণ মানুষ। সাধারনের বক্তব্য আর নয়, অনেক সম্মান করা হয়েছে তাদেরকে এবার প্রতিরোধের পালা। আমরা ভয় আর কষ্ট নিয়ে বাঁচতে চাই না। সচেতন মহল এটাও বলছেন তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট নাগরিক সমাজ এখন রুখে দাঁড়াবে। বিগত সময়ে সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করছেন পার্বত্য চুক্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে নতুন করে শান্তি কমিটি করায়। এখন পরিস্থিতি যা হচ্ছে তাতে যে কোন সময় ভয়াবহ হতে পারে রুমা সহ অন্যান্য উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার।
এদিকে মঙ্গলবার (১৩ফেব্রুয়ারী) দুপুরে রুমা বাজারে আয়োজিত এক মানববন্ধনের বক্তব্যে সচেতন নাগরিক সমাজ নেতৃবৃন্দরা বলেছেন, রুমা উপজেলাতে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কেএনএফ সংগঠনকে অনেক সম্মান দেওয়ার প্রেচেষ্টায় ছিলাম। এরপরও সাধারণ মানুষদের মেরে ফেলার হুমকি, হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা। আজ সকালেও এক যুবককে গুলি করে গুরুতর আহত করেছে। যার ফলে নানান অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের জাতিগোষ্ঠীরদের। তাই এই ধরনের ভয় আর কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। এবারে দেখা হবে রাজপথে। নিজেদের জাতি রক্ষার্থে ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কেএনএফ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্যে তারা বলেন, রুমার রিজুক পাড়ার এক যুবককে কেএনএফ সদস্যরা গুলি করে হত্যার চেষ্টা ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রুমা শহরে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাজারে এসে শেষ হয়। এসময় এ প্রতিবাদে অংশ নেন রুমা উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। বক্তারা বলেন, রুমার যে গ্রামে যাচ্ছি সে গ্রাম ও পাড়াগুলোতে শোনা যায় শুধু কেএনএফ আর কেএনএফ এর অত্যাচার। তাছাড়া গ্রামের পাশে শুধু শোনা যায় গোলাগুলি। কেএনএফ মারমা জাতিকে হয়রানি ও অত্যাচার চালাচ্ছে সেটি অবাক করার বিষয়। তাই আগের মতো দু’মুঠো ভাত খেয়ে ঘরে বসে থাকার সময় আর নেই। আজ থেকে সবাই মিলে কেএনএফ এর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, রুমা উপজেলাতে আগে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সকলে শান্তিভাবে বসবাস করে আসছি। তবে কয়েক বছর ধরে একটি নতুন সংগঠন কেএনএফ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে সকলের শান্তি নষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই সকল জাতিকে নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে। কোন জাতির উপর জোর জুলুম চালিয়ে বসবাস করতে নয়। শান্তিপূর্ণ ভাবে থাকার জন্য কেএনএফকে অনেক সম্মান দিয়েছি। কিন্তু তারা যখন রাখছেনা তখন সম্মান দেওয়ার সময় আর নাই। মারমা জাতিরাও কাল থেকে দেখাবে বম থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়ে কুকি-চিনদের সহযোগিতা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা একশন নিব। রুমা উপজেলাতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কেএনএফ এর বিরুদ্ধে কঠোরভাবে দাঁড়াবে সচেতন নাগরিক সমাজ।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুম্রাউ মারমা, ২নং রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা শৈবং, পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা, মারমা ওয়েলফেয়ারের সভাপতি উথোয়াইচিং মারমা,সচেতন নাগরিক যুব সমাজের প্রতিনিধি অংচোওয়ং মারমাসহ রুমা সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শান্তির জন্য বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লাকে সভাপতি করে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে সদস্য করে শান্তি কমিটি করা হলেও এর ফলাফল কোন উপকারে আসছেনা সাধারণ মানুষের। নিত্য অত্যাচারের শিকার হয়ে আর প্রান ভয় নিয়ে বেঁচে থাকতে হচেছ। মঙ্গলবার সকালেও কেএনএফ এর অস্ত্রধারী ১৫ সদস্যের একটি দল গ্রামে ঢুকে চাঁদা না পেয়ে রিজুক পাড়ার বাসিন্দা উহ্লাচিং মারমাকে (৩৭) গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে কেএনএফ এর অস্ত্রধারী সদস্যরা। এ সময় এলোপাতারি গুলি চালালে স্থানীয় বাসিন্দারা দিক্বিদিক্ ছুটোছুটি করতে থাকে। এ ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থি হলে পরে নাগরিক সমাজ একত্রিত হয়ে মানববন্ধনে অংশ গ্রহন করেন।
অন্যদিকে বান্দরবানের রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করেন, শান্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করা হয়েছে। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের শান্তি ও উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে নতুন করে কমিটি করাতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর কঠোর হওয়ার দরকার ছিল। বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার লক্ষন দেখা যাচ্ছে তাতে বান্দরবানের রুমা সহ অন্যান্য উপজেলার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যেতে পারে। কেননা নিজেদের জাতি রক্ষার্থে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কেএনএফ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর হুশিয়ারি দিয়েছে নাগরিক সমাজ। তাই যে কোন সময় পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, না হলে অশান্তির জন্য অন্য কেউ সুযোগ নিতে পারে।