দীর্ঘ বছরেও সংস্কার করা হয়নি কাঁচা মালামাল পরিবহনের কার্গো ট্রলি
যান্ত্রিক সমস্যার কারনে কোটি কোটি টাকার বাঁশ কাপ্তাই লেকে নষ্ট হচ্ছে
॥ কবির হোসেন, কাপ্তাই ॥
কাপ্তাই হ্রদ থেকে কাঁচামাল পারাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর অধীন কার্গো ট্রলির নানান সমস্যার কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পরিবহন ব্যবসায়ী সহ অন্যান্য সাধারণরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সরকারি খাতে টেক্স দিয়েও সময়মত মালামাল পার করে সরবরাহ করতে না পারায় অর্থনৈতিক ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ কার্গো ট্রলি প্রতিষ্টার দীর্ঘ ৩৮বছর হচ্ছে এর মধ্যে ত্রুটিগুলোর মেরামতে কোন উদ্যোগই নেয়নি। এই ট্রলি নির্ভর ব্যবসায়ীরা এখন টিকে থাকাও কঠিন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬৪ সালে কাপ্তাই বাঁধ দেওয়া হলে পানি পথের নির্ভর বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে চরম বাঁধার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনসাধারণ এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ বছর ধরে সড়ক পথে পার্বত্য অঞ্চলের উৎপাদিত কাঁচামাল পরিবহন করে আসছে। পরে ব্যবসায়ীক সুবিধা এবং কাঁচামাল দ্রুত পরিবহন সুবিধার জন্য সরকারি টেক্স আদায়ের মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কার্গো ট্রলি প্রতিষ্ঠা করে। এটি করার কারনে কাঁচা মালের মধ্যে বিশেষ করে বাঁশ পরিবহনে সুবিধা ভোগ করে আসছেন ব্যবসায়ী মহল। সরকারি খাতে নিয়মিত টেক্স দিয়ে তাঁদের ব্যবসার এবং সরবরাহের গতিও বাড়ে। তবে কার্গোটি রক্ষনাবেক্ষনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্তৃপক্ষ ছোটখাটো ত্রুটিগুলো না সারার কারনে সেসব ত্রুটি এখন বড় আকারে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে কার্গোটির খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলারা কারনে ব্যবসায়ী মহল তাদের মালামালগুলি সঠিক সময়ে পারাপার করতে পারছে না। যার কারনে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাঁশ, গাছ সহ আন্যন্য কাঁচা মালামাল পরিবহনে বন বিভাগ সরকারি রাজস্ব খাতে যে সুবিধা আদায় করতো সেটিও হয়ে গেছে ধীর গতি।
পরিবহন ব্যবসায়ীরা জানান, নদি পথে কাঁচামাল পারাপারে টার্মিনালে আনা হলেও দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে কার্গোর ধীর গতির কারনে। বাঁশ গাছ পানিতে ভাসমান থাকায় কোন কোন সময় তা পঁচে ও শুকিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে কাপ্তাই লেকে ভাসমান বাঁশ পারাপার করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা হতাশাগ্রস্ত। তাঁরা বলেন, বাঁশ পারাপারের একমাত্র প্রধান বাহনহল কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রর ঐ কার্গো টলি। এটি ১৯৮৬সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা করার দীর্ঘ ৩৮ বছরেও একটিবারের জন্য সংস্কার করা হয়নি এ কার্গো ট্রলি।
ব্যবসায়ী মহল আরো জাান, পার্বত্য অঞ্চলের বাঁশসহ সকল ধরনের কাঁচামাল কাপ্তাইয়ের কার্গো ট্রলি হতে কর্ণফুলী নদীতে পারাপার হয়ে আসছে। এই বাঁশ রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ, ঢাকা, মিরসরাইসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বাঁশ পরিবহণ করতে বন বিভাগ ও কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্গো ট্রলি কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ সরকারকে প্রতিনিয়ত রাজস্ব দিয়ে আসছে কাঁচামাল ও বাঁশ ব্যবসায়ী মহল। দীর্ঘ বছর যাবৎ কার্গো ট্রলির বিভিন্ন যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় কাঁচামাল পারাপার করতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগছে ব্যবসায়ী সহ কার্গো ট্রলি কর্তৃপক্ষ। দ্রুত পরিবহনের জন্য কাঁচা মালামালগুলি ভিন্ন পথে সরবরাহ করতে গিয়ে অর্থনৈতিক সহ নানান সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এতে করে উভয়েই লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে। পূর্বে কার্গো টলি ভাল থাকা অবস্থায় প্রতি ঘন্টায় ১০/১২টলি বোঝাই বিভিন্ন কাঁচামাল পারাপার করা হতো। এখন ঘন্টায় ৩/৪টি টলি বোঝাই কাঁচা মালামাল করতে হচ্ছে। তাও আবার মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চালকরা মালামাল পারাপার করে আসছে। মালামাল পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগার কারনে ও বাঁশ ব্যবসায়ীরা ঠিকমত সরবরাহ করতে না পাড়ায় নদী ও লেকে কোটি টাকার বাঁশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাঁশ ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আব্দুল গফুর, মোঃ রাশেল প্রকাশ রাশু ও খোরশেদ আলম জানান, দীর্ঘ ৬মাস যাবৎ কার্গো ট্রলি দিয়ে বাঁশ পরিবহন সময়মত পারাপার করতে পারছিনা। কার্গো যান্ত্রিক সমস্যার ফলে মালামাল আগের মত পারাপার করা যাচ্ছে না। ট্রলি চলছে একেবারে মন্তর গতিতে। বাঁশ সঠিক সময়মত সরবরাহ করতে না পাড়ায় নদী ও লেকে কোটি টাকার বাঁশ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের এখন পথে বসে যাওয়া মতো হয়েছে। আমরা বাঁশ পরিবহণ করতে বন বিভাগকে ১৫% এবং কার্গো ট্রলিকে টন প্রতি ২৫টাকা রাজস্ব দিয়ে আসছি। আমরা চাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কার্গো ট্রলি কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুত যান্ত্রিক সমস্যা সমাধান করতে। এতে করে সরকারও বিপুল পরিমান রাজস্ব পাবে। ব্যবসায়ীক খাতে নিজেরাও টিকে থাকার সুবিধা হবে।
এদিকে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এর ব্যবস্থাপক এ.টিএম আব্দুজ্জাহের কার্গো ট্রলির যান্ত্রিক সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, মেসার্স এন্টারপ্রাইজ ও জেবি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান কার্গো ট্রলি সংস্কার করার কাজ পেয়েছে। ইতিমধ্যে মেরামতের সকল যন্ত্রপাতি আমরা বুঝেও নিয়েছি। অতিদ্রুত সংস্কার করে সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানান। ব্যবসায়ীদের কষ্ট দুর করতে জোর চেষ্টা চলছে।