[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

টমেটো চাষে সফল আবু সাইদ: অর্ধ কোটি টাকা বিক্রির সম্ভাবনা

৭৭

॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥

পাহাড়ের মাটিতে কৃষিতে সাফল্যগাঁথার গল্প রয়েছে অনেক। এরই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় সমতল ভূমি থেকে ৩০০ ফুট পাহাড়ের উপরে টমেটো চাষ করে অভাবনীয় সাফল্যের মুখ দেখছেন কৃষক আবু সাইদ।

তিনি গোমতী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেস্ত্রীর চর এলাকায় ৪ একর জমিতে উপজেলায় এই প্রথম স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটো চাষ করে এলাকায় ব্যপক সাড়া ফেলেছেন। পাশাপাশি তিনি বাহুবলী হাইব্রিড টমেটোর চাষ করেন এ জমিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘন কুয়াশার মধ্যে মাচায় ঝুলছে শীতকালীন সবজি টমেটো। পাহাড়ের উপরে মাচায় সবুজ আর পাকা লাল টমেটোগুলো সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। ২০২২সালে বন্ধুত্বের সম্পর্কের সূত্র ধরে মেস্ত্রীর চর এলাকায় আসেন আবু সাইদ। এখানে এসে তিনি দেখলেন পাহাড়ের অনেক জমিতে তামাক চাষ করা হয়। যেখানে তামাক ছেড়ে একই জমিতে অন্য কৃষিজ সবজি উৎপাদন করে কৃষি বিপ্লব আনয়ন করা যায়। তাছাড়া এখানে অনেক অনাবাদি জমি রয়েছে যে জমিতে কৃষির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে পাহাড়ে কৃষি বিপ্লব ঘটানোর লক্ষে আবু সাইদ ২০ একর জমি লিজ নিয়ে ৪ একর জমিতে বগুড়া এগ্রো -১ থেকে সংগ্রহপূর্বক স্মার্ট ১২১৭ হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ শুরু করেন।

এ জমিতে তিনি পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করেন, এত করে মাটির প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ঠিক থাকার পাশাপাশি আগাছা দমন, সারের সঠিক প্রয়োগ এবং পোকামাড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় সেচ খরছ কম লাগে। জমিটি পাহাড়ের উপরে বিধায় পাহাড়ের নিচ থেকে পর্যাপ্ত পানির সেচের ব্যবস্থা করেন তিনি।

অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি চার একর জমিতে স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটোর চারা রোপণ করেন। এ জাতের টমেটো গাছপ্রতি গড়ে ৮-১০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। একর প্রতি গড় ফলন ৪০-৪৫ টন। ফল ডিম্বাকৃতির শক্ত এবং আকর্ষণীয় লাল বর্ণের হয় একই সাথে বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিনের মধ্যেই ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়। স্মার্ট জাতের টমেটোর প্রতিটি গাছ টমেটোর ভারে নুইয়ে পড়ে। গাছ নুইড়ে পড়া ঠেকাতে বাঁশের খুঁটিতে বাঁধ দিতে হয়। আগাম ও সিজনাল চাষ উপযোগী ভাইরাস সহনশীল জাত এটি। একই সাথে বগুড়া এগ্রো -১ লিমিটেডের কর্মকর্তারা তাকে টমেটো চাষের বিষয়ে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়ে আসছেন বলে তিনি জানান।

এ জমিতে ১০/১২ জন শ্রমিক স্থায়ীভাবে কাজ করার পাশাপাশি দৈনিক হিসেবেও চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক কাজ করে থাকেন এই বাগানে। আগামী তে একই জমিতে আরো বিভিন্ন জাতের শবজির উৎপাদন করা হবে বলে জানান আবু সাইদ। বাকি ১৩ একর জমিতে তিনি সামার টমেটো, মরিচ, করলা, ঝিঙ্গা,তরুমুজ ধুন্ধুল, এসব শবজি ফলাবেন তিনি।

এ জমিতে ১ থেকে দেড় লাখ কেজি টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মিড আরলি হবার দরুর টমেটোর দর আশানুরূপ না হলেও চলমান বাজার দর হিসেবে ৪০ থেকে৪৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান। ১৬ লাখ টাকা খরছ বাদে বাকি অর্থে নিজের পরিবারিক ব্যায় মিটানো সম্ভব হবেও বলে জানান এ কৃষি উদ্যেক্তা।

পাহাড়ে কৃষি সম্ভাবনাময় বহু জমি রয়েছে জানিয়ে কৃষি উদ্যেক্তা আবু সাইদ বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানে বর্ষা মৌসুমে জমি তলিয়ে যায় বিধায় ফসলের হানি ঘটে। পাহাড়ের উপর পানি জমে থাকে না বিধায় এখানে সকল ধরনের কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, তার বাগানে উৎপাদিত টমেটো মাটিরাঙ্গার চাহিদা মিটিয়ে শেষে দেশের অন্য স্থানেও এর চাহিদা মেটানো সম্ভব। বাগান থেকে টমেটো ক্রয় করতে আসা আমির হোসেন বলেন, এ বাগানের টমেটো অনেকটা কীটনাশকমুক্ত হওয়ায় আমি ১০ কেজি টমেটো কিনেছি। কৃষি উদ্যক্তা আবু সাইদ’র এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আমির হোসেন আরো বলেন, পতিত জমিতে কৃষি পণ্য উৎপাদনের ফলে এক সময় এ এলাকায় কৃষি বিপ্লব ঘটবে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সবুজ আলী বলেন, আমরা কৃষি সম্পর্কিত যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। অন্য যে কেউ কৃষি কাজ নিয়ে এগিয়ে এলে সব রকমের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা। মাটিরাঙ্গার কৃষকরা কঠোর পরিশ্রমী জানিয়ে তিনি আরো বলেন, নিয়মিত সঠিক পরামর্শ পেলে এ অঞ্চলের কৃষকরা কৃষিতে বিপ্লব সাধন করে দেশের কৃষি পণ্যের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।