॥ মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা ॥
দেশে এখন পুরোদস্তুর শীতকাল। এ সময়ে, উঁচুনিচু পাহাড় পেরিয়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ঝলমলে রোদে সরিষা ফুলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। মাঠে মাঠে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ আর মৌমাছির মধু সংগ্রহের জন্য দারুন তাগিদ। তাদের গুঞ্জনে মুখরিত সরিষার বিস্তৃত মাঠ। প্রতিটি সরিষার দানায় দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। হলুদের মাঠে কৃষকের ছোট ছোট অপূর্ণ শখ খেলা করছে এখন। এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্যের অবতারণা খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গায়। গোমতী ইউনিয়নের বান্দরছড়ায়।
একই সাথে দূর থেকে ভেসে আসছে সরিষা ফুলের মিষ্টি গন্ধ। মধু সংগ্রহে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল। তাদের গুনগুন সুরে বিমোহিত চারদিক। মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে কৃষকের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন ধাপে প্রায় ৬শত জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়াও ফসল ভাল হওয়ায় ব্যক্তি উদ্যেগে সরিষার আবাদ করেছেন অনেকে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, গত বছর ৩৩ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয় ১শত ৫০ হেক্টর জমিতে। এ বছর ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে ২শত ৫৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর ফলন হয় হেক্টর প্রতি ১.৫৮ মেট্রিকটন। এ বছর সম্ভব্য ফলন বেড়ে হেক্টর প্রতি১.৬০ মেট্রিকটন সরিষা সংগ্রহের আশা করা হচ্ছে। সরিষা মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কিছুদিন বাদেই ঘরে উঠবে সরিষা। বছরখানেক আগেও পানি সংকটসহ নানা কারণে বোরো ধান কাটার পর দীর্ঘ সময় পড়ে থাকত পাহাড়ী অঞ্চলের এসব জমি। তবে এখন পড়ে থাকা সেসব জমিতে এখন চাষ হচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের সরিষা।
উপজেলার গোমতী ইউনিয়নের বান্দরছড়ায় আড়াই একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষক মোশারফ হোসেন এবং শাহেদ। তারা বলেন, গতবার অল্প পরিসরে সরিষার চাষ করি ফলন ভালো হওয়ায় এবার বেশি জমিতে আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সরিষা পাওয়া যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আমির হোসেন বলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজ সারসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছে। আমি আশাকরি খুব দ্রুতই এ উপজেলালায় সরিষা আবাদের বিল্পব ঘটবে কৃষক আর্থিক ভাবে লাভবান হবার পাশাপাশি ভোজ্যতেলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যত্র সরবরাহ করতে পারবে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সবুজ আলী বলেন, সবজি খাওয়ার পাশাপাশি মসলা, ভোজ্যতেল, গবাদি পশুর খাদ্য ও জমির সার হিসেবেও ব্যবহৃত হয় সরিষা। বহুবিধ ব্যবহারযোগ্য এই শস্যের আবাদের খরচ নামমাত্র। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন হয় বাম্পার, হাটে মেলে ভালো দাম। তাই, বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করতে আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি বিনামূল্যে বিভিন্ন জাতের সরিষা বীজ ও সার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আমরা কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।