সেনা সদস্য হত্যা, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, মাদক চোরাকারবারী, অস্ত্রধারীদের অত্যাচার
বান্দরবানের ঘটনাবহুল পরিস্থিতি রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকে চরমভাবে আঘাত করা হয়েছে
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পরস্থিতি ছিল সবাই ভালো থাকার চেষ্টা। রাজনৈতিকভাবে বিগত বছরগুলোর মধ্যে জাতীয়দলের সাথে সম্পর্ক ভালো কেটেছে। তবে আঞ্চলিক দলগুলোর একপেশে ও একগুঁয়েমীর কারনে প্রত্যন্ত অনেক অঞ্চলের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, মাদক চোরাকারবারীদের আস্তানা এবং অস্ত্রধারীদের হাতে সেনা সদস্য হত্যা, গ্রামবাসীদের গ্রাম ছেড়ে পালানো সহ বান্দরবানের ঘটনাবহুল পরিস্থিতি রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকে চরমভাবে আঘাত করা হয়েছে। এসব কারনে মন্ত্রী বীর বাহাদুরের দায়িত্বে রাষ্ট্রীয় স্বার্থকতায় পূর্ণতা কতটুকু ছিল তারও প্রশ্ন।
অতীত ফিরে দেখলে এসব ঘটনাগুলো থেকে দেখা যায়, পাশাপাশি অপর দুটি জেলা রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি আনুপাতিক হারে ভালো ছিল। বান্দরবানের বেশ কিছু উপজেলায় মাদক ইয়াবার চোরাকারবারী, মজুদদার ও চালানদার সামাজিক শান্তির পরিবেশকে চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল। তার মধ্যে অস্ত্রধারীদের অত্যাচার জঙ্গী আস্তানা। এসব বিষয়ে কঠোর না হওয়ায় জনসাধারণ কোন কোন সময় অসহায় হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের হাতে একের পর এক, কোটি কোটি টাকার মাদক ইয়াবা জব্দ সহ জড়িতদের আটক বিষয় নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তাই এমন কোন সপ্তাহ, পক্ষ বা মাস যায়নি যে মাদক জব্দ করা হয়নি বলে অনেকের দাবী। সন্ত্রাসীদের আত্যাচারে জেলার আলীকদম, রুমা, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ভয়ে ভিত হয়ে দিন কাটিয়েছে।
এছাড়াও কয়েক দফায় অস্ত্রধারীদের হামলায় সেনা সদস্য হত্যা ঘটনা রাষ্ট্রেকেও চরমভাবে আঘাত করা হয়েছে। অস্ত্রধারীদের অত্যাচারে স্থানীয় প্রশাসনকে দেশী বিদেশী পর্যটকদের বান্দরবানের বেশ কিছু উপজেলায় প্রবেশে বহুবার বিধি নিষেধ জারি করতে হয়। যার কারনে বান্দরবান জেলার পরিস্থিতিও কোন কোন সময় দেশের মানুষের কাছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। কেএনএফ (কুকীচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট), জঙ্গী আস্তানা, নাশকতাকারী, মাদক চোরাকারবারি, ভুমিদস্যু সহ সামাজিক সহাবস্থান নষ্টকারীরা দেদারসে তাদের অপকর্মকান্ডগুলো করেই গেছে। এসবের বিষয়ে তেমন কঠোর কোন ব্যবস্থা নিতে না পারায় ঘটনা বারংবার ঘটিয়ে গেছে। পরে অত্যাচার থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে নিয়ে গত বছরের ২২জুন-২৩ইং তারিখে জেলা পরিষদের সভাকক্ষেই ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি করতেও বাধ্য হয় যার সভাপতি হন বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা এবং দেশের প্রথম শ্রেনীর জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় এক সাংবাদিকও ঐ কমিটির সদস্য হন। এই কমিটি প্রত্যেকের শান্তির কথা চিন্তা করে এটি করনে, কেননা সন্ত্রাসীদের ভয়ে ও অত্যাচার থেকে নিজেদের জীবন জিবীকা রক্ষায় জনসাধারণ শেষমেষ আন্দোলনও করতে বাধ্য হয়েছিল। অসহায় এসব সাধারণ নাগরিক অস্ত্রধারীদের টানা হুমকীতে গ্রাম ছেড়ে পালাতেও বাধ্য হয়।
এদিকে বান্দরবানের বিগত ক’বছরের ঘটনাগুলো বিজ্ঞ রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতি সচেতন মহল এবং প্রশাসনেরও অনেককে ভাবিয়ে তোলে। বিশেষ করে অস্ত্রধারীদের হাতে সেনা সদস্য হত্যা, জঙ্গী সহ মাদক ইয়াবা কারবারিদের আস্তানার ঘটনাঘুলো প্রত্যেকের মধ্যে চরম ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এসব ঘটনাগুলো স্থানীয় প্রশাসন সহ দেশের আইনশৃংখলাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও রাজনৈতিকমহলের কাছে তথ্য সংরক্ষণও রয়েছে। বিজ্ঞ রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতি সচেতন মহল মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী বীর বাহাদুর উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলোর দ্বায়িত্ব পালন করে আসলেও রাষ্ট্রীয় স্বার্থকতায় পূর্ণতা কতটুক তারও প্রশ্ন। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকে চরমভাবে আঘাত করা লাগাতার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হলে এসব আরো পরিস্কার হয়ে আসবে।