১০২ বছরের বৃদ্ধাও রয়েছেন কেউ হেঁটে আবার কেউ ভ্যান গাড়িতে চড়ে
রাঙ্গামাটি জেলার সবগুলো কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোট প্রয়োগ করলেন নাগরিকবৃন্দ
॥ পাহাড়ের সময় ডেক্স ॥
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ রাঙ্গামাটি আসনে সকাল থেকেই ভোট প্রয়োগ করতে আসেন ভোটারগন। তারমধ্যে চোখে পড়ার মতো ১০২ বছরে বৃদ্ধাও রয়েছেন কেউ হেঁটে আবার কেউ ভ্যান গাড়িতে চড়েই কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন। জেলায় ২১৩টি ভোট কেন্দ্র এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো ছাড়াও প্রায় সব কেন্দ্রগুলোতে ভোট প্রয়োগ করেছেন বলে জেলা সহ উপজেলা প্রশাসন এবং আমাদের প্রতিনিধি ও প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সকালে বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে লক্ষ্য করা যায় ভোটার নাম্বার সংগ্রহে নির্বাচনী এজেন্টদের জড়ো করে রেখেছেন ভোটারবৃন্দ। দেখা যায়, ব্যস্ত সময় কাটায় এজেন্টরা ছাপা কাগজে না থাকলেও তাৎক্ষনিক ওয়েবে সার্চ দিয়ে ভোটারের নাম ও ভোট এর ক্রমিক নাম্বার খুঁজে নিয়ে ভোটারদের দেওয়া হচ্ছে। অনেকে জানিয়েছেন শীতের দিন হওয়াতে কেউ কেউ আসছে ধীরে তবে ভোট দিতে আসছেন এটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
অপর দিকে আমাদের বার্তা বিভাগের প্রধান নুরুল আমিন বেশ কিছু কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, কাউখালী ও বেতবুনিয়ার বেশ কিছু কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা যায় ভোটারগন শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের নাগরিক অধিকার ভোটের মাধ্যমে প্রয়োগ করেছেন। এসব কেন্দ্রের কোথাও কেউ বাঁধা প্রদান করতে দেখা যায়নি। এসব কেন্দ্রের এজেন্টগুলোতে ভোটারদের জটলা ছিল।
এদিকে আমাদের বার্তা বিভাগের পলাশ চাকমা জানান, সকালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ভেদভেদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোধুলী আমানতবাগ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের উপস্থিতি। তবে ভোট প্রদান করতে কোন বাঁধা বা আপত্তি ছিল না বলে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আরিফুর রহমান জানান, রাঙ্গামাটি শহরের সিনিয়র মাদ্রাসা ও শিশু নিকেতন কেন্দ্রে পুরুষদের চাইদের নারী ভোটারে উপস্থিতি ছিল দেখার মত। তবে সিনিয়র মাদ্রাসায় জাল ভোট দিতে গিয়েছেন সন্দেহে এমন একজনকে উপস্থিত পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং সেখানে অবস্থান করিয়ে রাখেন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসলে বিষয়টি সেরকম নয় বলে জানা যায়। এবিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, ঐ কেন্দ্রে জাল ভোট দিতে এসেছেন এমন কাউকে পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগও আসেনি।
এদিকে আমাদের প্রতিনিধি দেবদত্ত মুৎসুদ্দী দুপুরে শহরের আসামবস্তীস্থ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে দেখতে পান ভোট দিতে আসেন ১০২ বছরের শান্তি বালা দে ও ৯০ বছরের রাজমতি দে। তাঁরা উভয়েই ভোট দিয়ে পরে নিজ নিজ ঘরে চলে যান। জানতে চাইলে তারা বলেন, এটি আমার অধিকার ভোট দিতে এসেছি শান্তিভাবেই ভোট দিলাম নিজের পছন্দের প্রার্থীকে।
আমাদের লংগদু উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি বাঙ্গালী সবাই আনন্দ উদ্দিপনায় ভোট দিতে কেন্দ্রে জড়ো হন। যে যার পছন্দমতো প্রার্থীকে নিজের ভোট দিতে পেরেছেন বলে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। তবে কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নি। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনা, বিজিবি, আনসার বাহিনী সহ সকলেই যথেষ্ট সচেতন ছিলেন।
অন্য দিকে রাঙ্গামাটি সদরের রাঙ্গাপানি এলাকার কেন্দ্রগুলোতেও ভোটারদের উপস্থিতি দেখা যায় বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুসুম চাকমা। ভোটের দিন সকালে এ প্রতিবেদককে ফোনে জানান, শান্তিপূর্ন ভাবেই ভোটারগণ তাদের নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে দেখা যায়।
আমাদের বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি ইব্রাহীম জানিয়েছেন, উপজেলার সব ক’টি কেন্দ্রে পাহাড়ি বাঙ্গালি ভোট দিয়েছেন। তবে প্রত্যন্ত কিছু কিছু কেন্দ্রে আঞ্চলিক কিছু দলের বাঁধা আপত্তি থাকায় সেখানের কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিত কম ছিল। সব দিক বিবেচনায় দেখা যায় শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটারগন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।
এদিকে সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কলটি গ্রহন না করায় পরে মোঃ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), এ বিষয়ে জানিয়েছেন, জেলার সবগুলো কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটারগন তাদের ভোট প্রদান করেছেন। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খব পাওয়া যায়নি। সদর উপজেলা সহ অন্যান্য স্ব-স্ব উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সেনা, বিজিবি, আনসার, র্যাব বাহিনীর পদস্ত কর্মকর্তা ও সদস্যগন সার্বিক নিরাপত্তায় সুন্দরভাবেই দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।