গনতন্ত্রের স্বাধীনতায় যারা বাঁধার সৃষ্টি করেছে তাদের কোন ছাড় নয়
খাগড়াছড়িতে শতাধিক ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনে মাঠে তৎপর প্রশাসন
॥ দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি ॥
খাগড়াছড়ি-২৯৮ নং সংসদীয় আসনে এতোদিন শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চললেও শেষ সময়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আতঙ্ক ভর করেছে সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের। গত মঙ্গলবার (২ জানুয়ারী) খাগড়াছড়ির দুর্গম জনপদ লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়িতে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার নির্বাচনীয় প্রচারণায় সমর্থকদের ওপর হামলা এর আগে (২৯ ডিসেম্বর) জেলার পানছড়ি উপজেলার লোগাংয়ের দুদকছড়ায় তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী উশ্যেপ্রু মারমা’র নির্বাচনীয় প্রচারণায় হামলা চালিয়ে ১২ টি গাড়ি ভাংচুর ও ৯ জনকে পিটিয়ে আহত শনিবার (৬জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে দীঘিনালায় যাওয়ার পথে এডিসির গাড়িতেও হামলা, গাড়ি ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
সংগঠিত ঘটনার জন্য প্রার্থী ও সমর্থক এবং সাধারণ নাগরিক পাহাড়ের অনিবন্ধিত আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) কে দায়ী করছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে সংগঠনটি। এদিকে শনিবার সকাল থেকে ৪৮ঘন্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, খাগড়াছড়ির নয় উপজেলা ও ৩৮ ইউনিয়নের ১ শ ৯৬ টি কেন্দ্রের ৮০ টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ৭৭ টি কেন্দ্রকে সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। তন্মধ্যে দুর্গম তিনটি কেন্দ্রে হেলিসটি ব্যবহার করা হবে। কেন্দ্রের দূরত্ব, যাতায়াত ব্যবস্থা ও ভৌগলিক দিক বিবেচনার পাশাপাশি বিগত সময়ের বেশকিছু বিষয় মাথায় রেখে এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়টি সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলায় এবার ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ। যার প্রভাব পড়ছে নির্বাচনীয় প্রচারণায়, শঙ্কা করা হচ্ছে ভোটের দিন ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে। আঞ্চলিক সংগঠনটির আধিপত্য রয়েছে এমন এলাকায় ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি ভয়ভীতি প্রদর্শনের কথাও শোনা যাচ্ছে। পানছড়ি ও মাটিরাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন বলেন, এক পক্ষ বলে ভোট দিতে, আরেক পক্ষ বলে ভোট দিলে ১০হাজার টাকা জরিমানা, ৫০বেত বেত্রাঘাতের হুমকি দিয়েছিল ইউপিডিএফ। তাহলে আমরা কোন পক্ষে যাবো।
খাগড়াছড়ি সদরের এক কার্বারী জানান, এক পক্ষ বলে- কার্বারী আগামীকাল ভোট দিতে আসবেন না, ভোট বর্জন করবেন। কারা ভোট দিতে আসবে, আমরা দেখে নিবো। আরেক পক্ষ বলে, কার্বারী আগামীকাল গ্রামে মানুষ সবাইকে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসবেন, ভোট দিতে না আসলে আমরা দেখে নিবো। এখন আমরা কার পক্ষে যাবো তবে এ বিষয়ে ইউপিডিএফর খাগড়াছড়ি জেলার সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, জনগণকে ভোট কেন্দ্রে না যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এটা সত্য। তবে কাউকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে না। জনগণই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এতে সাড়া দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তাই এবার ইউপিডিএফ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলেও জানান তিনি।
তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী উশ্যেপ্রু মারমা সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে বলেন, শুরুতে যে ভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হয়েছে হামলার পর নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা চান তিনি। এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মিথিলা রোয়াজাও সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের জোরালো সহযোগিতা চান তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, আঞ্চলিক দল নির্বাচন বর্জনের নামে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রভাবিত করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি কঠোর হয় তাহলে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার) জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। র্যা ব, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ব্যাটালিয়ন, আনসার, ভিডিপি সহ সকলকে ব্রিফ করা হয়েছে। এছাড়াও মোবাইল স্ট্রাকিং টিম সহ পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহ এক সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সবাই যেন অবাধ নিবিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে ভোট দিতে পারে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ প্রস্তুত আছে।
খাগড়াছড়ি ২৯৮নং আসনের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে সুষ্ঠু ও নিরাপদে ভোট গ্রহণে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে তৎপর রয়েছেন। আশা করছি ভোটের দিন ভোটাররা ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ইতিমধ্যে জেলার মোট ১৯৬ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে প্রথম ধাপে ৯৮টি কেন্দ্রতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাবে ব্যালট বাক্সগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকীগুলো কাল সকালে পাঠানো হবে।
এবার খাগড়াছড়ি জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪ শ ১৯ জন। তন্মধ্যে মহিলা ভোটার ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩ শ ৭৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬২ হাজার ৪৪ জন। গত বারের চেয়ে ভোটার বেড়েছে ৭৩হাজার ৬০৩জন। আওয়ামীলীগ, তৃণমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চারজন প্রার্থী ভোটের মাঠে প্রার্থী হয়েছেন।
তবে সচেতন মহলের দাবি হলো ভোটাররা তাদের খুশি মত ভোট প্রয়োগ করবেন কিন্ত এ গনতান্ত্রিক স্বাধীনতায় যারা বাঁধার সৃষ্টি করছেন-করেছেন তাদের কোন ছাড় নয়। ভোট প্রদান প্রত্যেকের নাগরিক অধিকার। নির্বাচনে কেউ অংশ গ্রহন করলো আবার কেউ করলো না এসব তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত তবে নাগরিক অধিকারে বাঁধা সৃষ্টি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় নগ্ন আচরণ ছাড়া আর কছিু নয়।