বান্দরবানে নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যস্ত আওয়ামীলীগ, নিরবতায় জাপা
॥ আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান ॥
আগামী বছরে ৭ই জানুয়ারী শুরু হচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। ৩০০নং বান্দরবানের আসনে জাতীয় নির্বাচনের প্রথমবার নৌকা ও লাঙ্গল দুই প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে। তবে শক্ত প্রতিদ্বন্দী না থাকায় এবার নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রার্থীর পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং’কে আবারও জয় হবে বলে মনে করছেন জেলার বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষজন।
বান্দরবানে সাতটি উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৩৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ৩০০নং আসন। জেলায় মোট জনসংখ্যা রয়েছে ৪ লক্ষ ৪ হাজার ৯৩জন। জেলার আয়তন প্রায় ৪ হাজার ৪শ ৭৯ দশমিক ০১ এবং নির্বাচনী আসনের আয়তন ৪ হাজার ৪শ ৭৯ দশমিক ০১। এই ৩০০ নং আসনের মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ২৯ জন। মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪৪৬ ও পুরুষ ভোটার রয়েছে ১লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৮৩ জন। এবার নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৮২টি। ৭২৭ টি বুথের ভোট গ্রহন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে দুর্গম এলাকার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, ও আলীকদম উপজেলাসহ ১২টি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনে কাজে ব্যবহার করা হবে হেলিকপ্টার।
নির্বাচনকে ঘিরে জেলা শহরের অলিগলি ,পাড়া মহল্লায় ছেয়ে গেছে নৌকা প্রতীকের পোষ্টার। শহর জুড়ে চলছে নৌকা প্রার্থীর মাইকিং। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা নৌকা স্লোগানে বের হচ্ছে মিছিল মিটিং। নৌকার ভোট চেয়ে মাঠে মাঠে নির্বাচনের প্রচারণায় চালাচ্ছে দলের নেতাকর্মীরা। গ্রাম কিংবা মহল্লায় চলছে উঠান বৈঠক। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করে চাইছেন ভোট। উপজেলায় গুলোতে নির্বাচনের জনসভায় যোগ দিচ্ছেন নৌকা প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিং। তবে অনেকটা নীরবতায় রয়েছে জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এটি এম শহিদুল ইসলাম (বাবলু)। জেলা জুড়ে দেখা যায়নি লাঙ্গল প্রতীকের পোষ্টার। লাঙ্গল প্রার্থী দলের কর্মী না থাকায় প্রচার প্রচারণা চলাচ্ছেন নাহ এমনটাই বলছেন অনেকেই।
বান্দরবানের কয়েকটি এলাকায় ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার যে নির্বাচন সেটি হাওয়া অনেকেই পাচ্ছে নাহ। এবার নির্বাচনের কোন শক্ত দল না থাকায় ঢিলেঢালা নির্বাচন হচ্ছে বলে মন্তব্যে করেছেন অনেকেই। তবে ভোটাররা বলছেন যুব সমাজের পরিবর্তন, বেকার মুক্ত, এলাকায় জন্য যে উন্নয়ন করবে সে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবে।
বান্দরবান জেলার একমাত্র সংসদীয় আসনটি তিন দশক ধরে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হাতে। পরপর ছয়বার সংসদ সদস্য হয়েছেন বীর বাহাদুর উশৈসিং, যিনি দলের জেলা কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। বান্দরবান ৩০০নং আসনে বীর বাহাদুর উশৈসিং ১৯৯১ সালে, ১৯৯৬ সালে, ২০০১ সালে, ২০০৮ সালে, ২০১৪ সালে ও সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ষষ্ঠ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দ্বাদশ সাংসদ নির্বাচনে ৭ম বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন। তাছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরই সম্বন্ধী এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। বীর বাহাদুরকে দলের একক প্রার্থী ঘোষণা পর নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেছে।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন এ.টি.এম. শহীদুল ইসলাম (বাবলু)। তিনি মূলত চিকিৎসক ও বীমা কর্মী হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করে থাকেন। সেটির পাশাপাশি জাতীয় পার্টির লামার সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তাকে অন্যতম প্রতিদ্বন্ধী মনে করা হলেও ভোটারদের কাছে তেমন পরিচিত নয় তিনি। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরও তিনি নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় মাঠে নামেননি। নীরবতায় থেকে গেছে জাতীয় পার্টি প্রার্থী।
নতুন ভোটার বাবু মারমা, রেংচ ম্রোসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, এবার নির্বাচনের তারা প্রথমবার ভোট দিবে। তাই প্রথন ভোটার হিসেবে অনেকে আনন্দ পাচ্ছে। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যাকে খুশি তাকে ভোট দিবে। যিনি যুব সমাজের উন্নয়নের যে অগ্রাধিকার দিবে এবং এলাকার জন্য যে উন্নয়ন করবে সে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন বলছেন তারা।
লাঙ্গল প্রার্থী এটিএম শহিদুল ইসলাম (বাবলু) বলেন, এবার নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে সবাই আসবে। পছন্দের প্রার্থীকেই সবাই ভোট দিবেন। যাকে যোগ্য মনে হবে তাকেই ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
নৌকা প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, প্রতিবারের চেয়ে এবার খুব উৎস উদ্দীপনায় ভোট হবে। আমি প্রচারে নামার আগেই এলাকার মানুষ আগে থেকেই আমার প্রচারে নেমে গেছে। আগামী ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে বিপুল ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে। তাছাড়া আশা করছি আগামী নির্বাচনে চেয়ে এবার ভোটার সংখ্যা আরো বাড়বে।
বান্দরবান পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, সুন্দর, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে আইশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদাই প্রস্তুত আছে। নির্বাচনে সাধারণ ভোটকেন্দ্র গুলোতে দুইজন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে তিনজন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বায়িত্বে থাকবে। এর বাইরে মোবাইল টিম ও ষ্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। এই পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের কোন অভিযোগ এখনো পায়নি। আশা করছি শান্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নির্বাচন শেষ হবে।