শীতের পিঠা বিক্রি করেই চলে সংসার
মোঃ আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা
ঋতু অনুযায়ী দেশে এখন শীতকাল। যে কারণে পাহাড়ে জেঁকে বসেছে শীত। তাই শীতে একটুখানি উষ্ণতা দিতে ইতিমধ্যে নিজেদের সাধ্যমতো হরেক রকমের শীতবস্ত্র গায়ে জড়িয়েছেন সকলে। একইসাথে বাহারী ধরণের শীতের পিঠাপুলির আয়োজন চলছে সকল স্থানে।
শীতকালে শীতের কুয়াশা ভেজা সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠাপুলির আয়োজন বহুকাল আগে থেকেই চলছে। কিন্তু দিন দিন নানা ব্যস্ততা ও ব্যাপকহারে ডিভাইস আসক্তির কারণে ইচ্ছে থাকলেও এখন অনেকেই ঘরে ঘরে শীতের পিঠা বানিয়ে খেতে পারেন না। বাড়িতে পিঠা বানানোর ঝামেলা এড়াতে পিঠার দোকান থেকে পিঠা ক্রয় করে স্বাদ মিটাচ্ছেন অনেকে।
এদিকে শীতকে কেন্দ্র করে নবান্নের নতুন চালের পিঠার স্বাদ নিতে খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গায় ব্যস্ততম সড়কের পাশে স্বস্ত্রীক ও ছেলেসহ শীতের ভাপা ও চিতই পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে সংসার চালান জয়নাল আবেদিন। পিঠার মৌ মৌ গন্ধ যেন ভরে আছে চারপাশ। কুয়াশা এড়াতে দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকতের ছাতা ব্যবহার করছেন তিনি। জয়নাল তার স্ত্রী ও ছেলে পুরো পরিবার সহ সকলে একই স্থানে পিঠা বানাচ্ছেন। এ চিত্র দেখে অনেকেই কৌতূহল বশত পিঠা খেতে ভিড় জমাচ্ছেন এখানে। জয়নালের বাড়ি মাটিরাঙ্গার মাতাব্বর পাড়ায়। ৫ বছর ধরেই পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। বাকি সময়গুলোতে তিনি একই এলাকায় শ্রমিকের কাজ করে থাকেন। তাদের একটি মাত্র ছেলে, ছেলেটিও তাদের সাথে পিঠা বানিয়ে থাকেন। চক্রাকারে একজন বিশ্রাম নেন অপরজন পিঠা বানান। শীতের পুরো সময় জুড়ে পিঠা বিক্রি করেবেন তারা। বাহারি স্বাদের সরিষা ও সুটকির ভর্তাসহকারে প্রতিটি চিতই ও ভাপা পিঠা ৫ টাকা করে দৈনিক ১৫ কেজি চাউলের প্রায় দেড় দুই হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করা হয়। এ দিয়ে চলে যায় পুরো সংসার।
পিঠা বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, শীতের পিঠা বিক্রি করি ভাল লাগা থেকে। একইসাথে নিজের পারিবারিক চাহিদাও মিটে যায়। এ পিঠা বিক্রি করে ভালই আছি। তেমন কোন পরিশ্রম নাই তাতে। পিঠার মান ও স্বাদ অক্ষুন্ন রাখতে আমরা ঢেঁকিতে চাল গুড়া করে পিঠা বানাই। দামে কম এবং রকমারি স¦াদের ভর্তা দেয়া হয় বিধায় আমার পিঠা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
নানান স্বাদের পিঠা ছাড়া শীত যেন জমেই না জানিয়ে পিঠা খেতে আসা লাভলু জানান, আমি প্রতিদিন এখানে পিঠা খেতে আসি ভাপা পিঠা আমার খুবই প্রিয় তাই দৈনিক চার পাঁচটা করে খাই। যাবার সময় সহকর্মীদের জন্যও নিয়ে যাই। চিতল পিঠার সঙ্গে সরিষা, শুটকির ভর্তা, সাথে ধনেপাতা এ যেন এক ব্যতিক্রম মুখরোচক স্বাদ।
খুব ভোরে বা বিকালে চাদর গায়ে দিয়ে পিঠা খেতে যাওয়া অন্যরকম আনন্দ দেয় মন্তব্য করে পিঠা কিনতে আসা সুমন জানান, এখানকার রকমারি পিঠার সঙ্গে পাওয়া যায় নানান ধরণের ভর্তা এর স্বাদ যেন চিরচেনা। আমি শিতের পিঠা খেতে খুব পছন্দ করি তাই পরিবারের সকলের জন্য কিনতে আসছি।
ঐতিহ্যগতভাবেই শীতের কুয়াশা ভেজা সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা-পুলি বাঙালীর অনন্য আয়োজন জানিয়ে মাটিরাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জয়নাল বলেন, খেজুর গুড় ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠা আর চালের গুঁড়া পানি দিয়ে বানানো হয় চিতই পিঠা পাহাড়ের এ জনপদে বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া শীতের পিঠা মনে এক চিলতে গ্রামে ফেরার আকুলতা তৈরি করে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে এসব পিঠাপুলির বেঁচে থাকুক অনন্তকাল ধরে।