স্বাধীনতার ৫২ বছরেও নির্মাণ করা হয়নি
খাগড়াছড়িতে কলেজ পড়ুয়া যুবরাই এখন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করছে
॥ দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি ॥
সেতু নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই বাধ্য হয়েই স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ কাজ চলছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে এলাকাবাসীর অর্থায়নে কলেজ পড়ুয়া যুবরা এ সাঁকো নির্মাণ করছেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৯ডিসেম্বর) বিকালে কথা হয় সাঁকো নির্মাণে যারা উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের সাথে। তারা হলেন অম্লান ত্রিপুরা, ইমন ত্রিপুরা, সেলিম ত্রিপুরা, ইতু ত্রিপুরা, দিকন ত্রিপুরা, হৃদয় ত্রিপুরা আরও অনেকে। এরা সকলে জেলার বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রী/অর্নাসে অধ্যয়নরত। সাঁকোটি তৈরির করার ফলে পেরাছড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বেলতলী, খামার পাড়া, ভোলানাথ পাড়ার মানুষেরা অন্তত কিছুটা হলেও ভোগান্তি কমবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বেলতলী পাড়া এলাকায় চেঙ্গী নদীর উপর নির্মিত প্রায় ১শ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকোটি জরাজীর্ণ অবস্থার মাঝেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজারও মানুষ। ভারি বস্তা বা পণ্য সামগ্রী পারাপার করতে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয়রা। বিশেষ স্কুল-কলেজে যাওয়া শিক্ষার্থীরা সতর্কভাবে পারাপার করলেও অনেক সময় শিকার হন দুর্ঘটনার।
নদীতে সারা বছর পানি থাকে। বছরের পর বছর স্থানীয়রা সেতু দাবি করে আসলেও স্বাধীনতার ৫২ বছরেও পারাপারে নির্মাণ করা হয়নি কোনো সেতু। তাই স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে নির্মাণ করছেন বাঁশের সাঁকো। এতে হাজার হাজার মানুষের চলাফেরার কষ্ট আপাতত লাঘব হচ্ছে।
স্থানীয় বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্নেহময় ত্রিপুরা জানান, সাঁকোটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ ফুট। এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজারের অধিক মানুষ পারাপার করে। প্রতিবছর নিজেদের উদ্যোগ সাঁকোটি পারাপারের উপযোগী করা হয়। স্বাধীনতার ৫২ বছরও সরকারিভাবে সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সরকারিভাবে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় আমরা এলাকাবাসী যুগের পর যুগ চরম দুর্ভোগ সহ্য করে আসছি। আমরা প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে সাঁকোটি পার হই। চেঙ্গী নদীর উপর একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
সাঁকো নির্মাণের উদ্যোক্তা অম্লান ত্রিপুরা জানান, বৃষ্টির সময়ে নড়েবড়ে নৌকা দিয়ে পারাপার করেছি। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি বাঁশের সাঁকো আমরা তৈরি করি। কিন্তু এটি ভেঙে যাওয়ায় জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। এবার সাঁকোটি স্থানীয় এলাকাবাসীর অর্থায়নে আমরা প্রায় ১২/১৩জন মিলে আবারো বাঁশের সাঁকো তৈরি করছি। তবে আমাদের এখনো সাঁকো তৈরিতে বাঁশ ক্রয় করা বাবদ ৫হাজারের মতো বকেয়া রয়েছে।
এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ সচিব) নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, শুনে খুশি হলাম। এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র সাথে স্থানীয়রা কথা বলে প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ আছে। তাই তিনি স্থানীয়দের এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা প্রশাসনের নজরে আনার পরামর্শ দেন।
তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা ও ইউএনও নাইমা ইসলামকে মুঠোফোনে কল দিয়ে রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।