[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

লামায় শ্রদ্ধা ও বিষাদের সুরে প্রিয় শিক্ষকের বিদায়

৯৪

॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥

স্টেজে অতিথি, দর্শক সারীতে দুই শতাধিক অভিভাবক এবং কোমলমতি চার শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত। মধ্যমনি হিসাবে উপস্থিত আছেন বিদায়ী শিক্ষক জাহানারা বেগম। এ যেন অন্যরকম এক পরিবেশ। অতিথি, অভিভাবক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একদম নিস্তব্ধ, নিথর, সুনসান নীরবতা। সবার চোখ জলে টলমল। অশ্রুসিক্ত নয়নে বিষাদের ছায়া নেমেছে পুরো অনুষ্ঠানস্থলে। কারণ, আজ প্রিয় শিক্ষকের বিদায়, তাই বিমর্ষ, মনমরা, করুণ চাহনি চারদিকে।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এমন দৃশ্যেরই অবতারণ হয় বান্দরবানের লামা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অন্যতম সেরা বিদ্যাপিঠ “নুনারবিল সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়” মাঠে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠনে। সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় অত্র বিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী সহকারী শিক্ষক জাহানারা বেগমের অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহেদ সারোয়ার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, লামা পৌরসভার মেয়র ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ জহিরুল ইসলাম। বিদায়ী সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সহকারী শিক্ষক জাহানারা বেগম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক প্রমোদ চন্দ্র বড়ুয়া, সাবেক এসএমসি কমিটির সভাপতি মোঃ সাইফুদ্দিন, লামা মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সাখাওয়াত, সদস্য সুলতান মাহমুদ, বিদ্যালয়ের অভিভাবক মংক্যচিং মার্মা সহ প্রমূখ।

জানা গেছে, ৪০ বছর ৪ মাস ১৭ দিন চাকরি জীবন শেষ করে গত ২৯ জুন ২০২৩ইং নুনারবিল সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসরে যান এই প্রিয় শিক্ষক। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঊনাকে বিদায় জানানো হয়। তিনি ১৯৮৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন। এই প্রতিবেদক ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত লামা পৌরসভার চেয়ারম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গুণী এই শিক্ষকের ছাত্র ছিলেন।

 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন- ‘ঐ ব্যথাতুর আঁখি কাঁদো-কাঁদো মুখ; দেখি আর শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না..’। ব্যথাতুর আঁখি কাঁদো-কাঁদো মুখ নিয়েই বিদায় সংবর্ধনায় উপস্থিত হয়েছিলেন জাহানারা বেগম। অশ্রুসজল নয়নে শিক্ষার্থীরা তাকিয়ে ছিলেন প্রিয় শিক্ষাগুরুর প্রতি। যেন চোখের ভাষাতেই প্রকাশ করছিলেন তাদের মনের আবেগ, অনুভূতি ও প্রিয় শিক্ষাগুরুর প্রতি ভালোবাসাকে। অনুষ্ঠানে অনেক অতিথি, অভিভাবক ও উক্ত বিদ্যালয়ের বর্তমান ৫ জন শিক্ষকই এই বিদায়ী শিক্ষকের ছাত্র। সচরাচর এমন বিদায় দেখা যায়না।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শিক্ষক জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, আমি সময় পেলেই স্কুলে চলে আসি। এইটা আমার দ্বিতীয় বাড়ি। সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়। আমার বিদায়ে এত মানুষ চোখের জল ফেলেছে, যা আমাকে আরো ঋণী করেছে। আমার ভালোবাসার প্রতিদান দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। সবার হৃদয়ে এইভাবে বেঁচে থাকতে চাই। সমাজের বড় বড় স্থানে আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা আছে, এইটাই আমার বড় পাওনা। আরো বলেন, এ বিদ্যালের সবার প্রতি ভালোবাসায় আমার কোন খাদ ছিলোনা। তোমরা সফল হও, সবার সফলতায় আমার কাম্য। এসময় এ শিক্ষকের সাথে কেঁদে উঠেন শিক্ষার্থীরাও। এসময় এক হৃদয়গ্রাহী পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

বক্তারা বলেন, তিনি সমগ্র জীবনে অনেক স্কুলে তার আলো ছড়িয়েছেন। কখনও অভিভাবক, কখন শিক্ষক আবারও কখনও বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছেন। দিয়েছেন উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ভালোবাসা। এমন শিক্ষকের বিদায়ে সবাই মর্মাহত, এটাই স্বাভাবিক। আজকের আবেগঘন এই পরিবেশ বলে দেয় তিনি (জাহানারা বেগম) কতটা সফল ছিলেন।

প্রিয় শিক্ষকের বিদায়ে অতিথি, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীরা অসংখ্য ফুল, ক্রেস্ট, নানা উপহার তুলে দেয় তাঁর হাতে। বিদায়ী অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়।