সংকুচিত হয়ে আসছে কাপ্তাই হ্রদ, জায়গা দখল মুক্ত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
তিন পার্বত্য জেলার নদী-নালা, খাল-বিলের জায়গা নিত্য দখলেই যাচ্ছে। এক শ্রেণীর দখলবাজ এবং রাজনৈতিক মদদে এসব জায়গা দখল করার কারনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে নদী-নালা, খাল-বিল। পার্বত্য জেলাগুলোর কোন কোন স্থানে বর্ষার সময় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। আবার খড়া মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নামার কারনে দেখা দেয় পানির সংকট। নদী-নালা, খাল-বিলের অবস্থান নির্দিষ্ট গতি থেকে সরে যাওয়ার কারনে এসব পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রত্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চলে যেখানে বনজঙ্গলের আচ্ছাধনে থাকা পাহাড়গুলো ঘেমে ঘেমে তার থেকে পানি নিঃসৃত হচ্ছে সে নিঃসৃতি পানির নির্ভর মানুষগুলোর পরিস্থিতিতো আরো ভয়াবহ হয়ে পড়ছে। এরপরও পার্বত্য চট্টগ্রামে দিন, মাস, বছর ধরে অবৈধ দখল চলছে নদী-নালা, খাল-বিলের উপর। এখানে আরো লক্ষ্য করা যাচ্ছে চরমভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে ঝিরি-ঝর্ণাগুলো। এসব ঝিরি-ঝর্ণা নির্ভর ছোট ছোট মাছ আর কীটপতঙ্গগুলো তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। প্রকৃতিকে নষ্ট করার কারনে প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়ে উঠছে চরমভাবে তারমতো মারমুখী। এভাবেই ধীরে ধীরে মানুষ নিজ দোষে হোক আর অন্রের দোশেই হোক চরম বিপদেই পড়তে যাচ্ছে।
পার্বত্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের জায়গা কমতে কমতে এখন চরম আকার ধারন করছে। পুরো শহর ঘুরলে দেখা যাবে পরিস্থিতি কতঠুকুতে গিয়ে ঠেকছে। হ্রদের জায়গা শহর এলাকার এমন কোন স্থান নেই যে দখর হয়নি। মুল শহরের অনেকে স্থানে এখন আর পানিও থাকে না। তারমানে সেখানে দখল হতে হতে এখন হ্রদের অনেক খালি জায়গা যেন লুটের তালিকায়। স্থানীয় প্রশাসন কঠোর না হলে কাপ্তই হ্রদের পরিধি আরো ছোট হয়ে আসবে। একইভাবে বান্দরবানের সাঙ্গু এবং মাতামুহুরীও তার নির্দিষ্ট গতি হারিয়ে ফেলছে। সেখানেই নিত্য দখল হতে হতে পরিস্থি হয়ে উঠেছে ভয়াবহ। বান্দরবানের বেশ কিছু উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানির জন্য ঝিরি-ঝর্ণাগুলোর উপর নির্ভশীল মানুষ খড়া মৌসুমে চরম বিপদে পড়ে। পানির প্রবাহ ঠিক না থাকার কারনে ময়লা আবর্জনা মিশ্রিত পানি পান করে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ঘটনা চরম আকার ধারন করলে অকালে মানুষ মারাও যাচ্ছে। সচেতন প্রত্যেকের উচিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে মুক্ত থাকতে হলে নদী-নালা, খাল-বিলের জায়গা দখলমুক্ত করতেই হবে।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ির অবস্থাও এখ চরম পর্যায়ে। সেখানেও চেঙ্গী নদী জায়গা দখর হতে হতে কোথাও কোথাও তার শাখা প্রশাখাগুলে এখন মরতে বসেছে। দখল হতে হতে তার নিদিষ্ট গতিপথও হারাচ্ছে। আবার বর্ষায় দেখা দেয় বন্যা। সদর উপজেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ গঞ্জ পাড়ার এম এ হক সড়ক সংলগ্ন ছড়াটি সরাসরি চেঙ্গী নদীর সাথে সংযোগ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি পাহাড়ী ঢলের পানি নেমে এই ছড়া দিয়ে চেঙ্গী নদীতে গিয়ে পড়ে। এতে আশপাশের কয়েকটি পরিবার বন্যামুক্ত থাকে। কিন্ত ইদানিং কিছু প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে ছড়া দখল করে নির্মাণ করেছে বসতভিটাসহ দোকানপাট। ভয়াবহ অপতৎপরতা চললেও প্রশাসনের কোনো ধরনের নজরদারিও নেই। ঐ ছড়ার ওপর গত তিনমাস ধরে চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ ও সৃষ্টি হয়েছে। ছড়া-খালটিকে দখল করে সেখানে ভবন নির্মাণ করায় বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এভাবেই চেঙ্গী নদীর পরিধি এখন অনেক ছোট হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ নদী কমিশনের কঠোর আইন থাকা সত্তেও স্থানীয় প্রশাসন কড়া নজর না দেয়ায় দখলই হচ্ছে।