[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

পার্বত্য চুক্তির ২৬তম বর্ষপুর্তিতে ঢাকায় পার্বত্য মন্ত্রণালয় সচিব মশিউর

স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিভিন্ন সময় শান্তির পরিবর্তে সংঘাতকে উষ্কে দিয়েছিল

৯৪

॥ পাহাড়ের সময় ডেক্স ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মশিউর রহমান, এনডিসি বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ অঞ্চলকে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিভিন্ন সময় শান্তির পরিবর্তে সংঘাতকে উষ্কে দিয়েছিল। তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ২২ বছরের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসন করেছেন। সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে কয়েক দফা সংলাপের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমেই সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসন হয়।

শনিবার (২ডিসেম্বর) ঢাকার বেইলী রোডে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক এ্যাফেয়ার্স এর যৌথ উদ্যোগে “ঞযব ঈযরঃঃধমড়হম ঐরষষ ঞৎধপঃং পপড়ৎফ ১৯৯৭: টহরয়ঁবহবংং ধহফ টহরঃু” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে সাবেক তথ্য কমিশনার (সচিব) সুদত্ত চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। কী নোট প্রেজেন্টার হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, অধ্যাপক ড. মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মুস্তাকিম বিন মোতাহার এবং সেমিনারে জিজ্ঞাসা পর্বে অংশ নেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন শাহ আলম খান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর ২৬ বছরে পার্বত্য অঞ্চলে কি অর্জিত হলো তার চিত্র তুলে ধরে সচিব মশিউর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য অঞ্চলের সম্ভাবনা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়ে পাহাড়ী জনগণের জীবনকে উন্নত করার প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে। ইতোমধ্যে আরও তিনটি ধারার বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৪টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে বলে জানান সচিব।

সচিব মশিউর রহমান এনডিসি প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, সরকার পার্বত্য এলাকায় সুগারক্রপ, তুলা, কফি ও কাজু বাদাম চাষ, ৭ হাজার মিশ্র ফলের বাগান সৃজন এবং উচ্চ মূল্যের মসলা চাষের ব্যবস্থা করে কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। সচিব বলেন, এডিবির সহায়তায় ওয়াটার সেড ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়ন করে পার্বত্য অঞ্চলের পানির সমস্যার অধিকাংশ নিরসন করা হয়েছে। সচিব আরও বলেন, শিশুদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিশু ও তাদের পরিবারের নিকট মৌলিক সামাজিক সেবাগুলো পৌঁছে দিতে সরকার ৪ হাজার ৮০০ পাড়াকেন্দ্রের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। পাহাড়ি দুর্গম এলাকার জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত ৫২ হাজার ৫০০ পরিবারের জন্য বিনামূল্যে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান সচিব। পার্বত্য অঞ্চলের সড়ক, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সচিব মশিউর রহমান বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় ১ হাজার ২১২ কিলোমিটার পাকাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ৭০০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৬১৪ কিলোমিটার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। সচিব মশিউর রহমান আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করে দুর্গম পাহাড়িদের চলাচলের পথকে সুগম করে দিয়েছে। সচিব বলেন, সরকার ১৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর বেইলী রোডে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র নামে একটি নান্দনিক ভবন প্রতিষ্ঠা করে। তিনি বলেন, ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যানে ছয়টি হটসপট-এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন কাযক্রমকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান সচিব মশিউর রহমান এনডিসি।

পার্বত্য চুক্তির আগের ও চুক্তির পরবর্তী ২৬ বছরে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সচিব মশিউর রহমান বলেন, আগে পার্বত্য তিন জেলায় উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১৯৬টি। চুক্তির ২৬ বছর পর উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০৪। চুক্তির আগে যেখানে পার্বত্য তিন জেলায় কলেজের সংখ্যা ছিল ২৫টি, সেখানে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১টি। সচিব বলেন, পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিন পার্বত্য জেলায় নতুনভাবে গড়ে ওঠেছে তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। রাঙ্গমাটিতে একটি মেডিক্যাল কলেজ এবং বান্দরবান জেলায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের (পিপিপি) মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়। সচিব আরও বলেন, পার্বত্য তিন জেলায় চুক্তির আগে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান ছিল মাত্র ৯১টি। চুক্তির পর স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১২-তে উন্নীত হয়। ছোট-মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল মাত্র ১৭টি। সচিব আরও বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পর মাঝারি-বড় ৪৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ওঠে। ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পের সংখ্যা যেখানে ছিল ২ হাজার ২৬৬টি চুক্তির পর সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ২৯৯টি।

সচিব মশিউর রহমান বলেন, একসময় পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো না। এখন স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বের বিকাশ হচ্ছে। তিনি বলেন, আর এগুলোর সবকিছুরই কৃতিত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার।

এর আগে সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বেইলী রোডে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র প্রাঙ্গনে ফেস্টুন উড্ডয়ন ও কবুতর অবমুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দিবসের শুভ সূচনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিয়ষক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমাসহ পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ ও ঢাকায় বসবাসরত তিন পার্বত্য জেলার অধিবাসীগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।