বান্দরবান আর্যগুহা ধূতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারে ধর্মদেশনায় ড.এফ দীপংকর মহাথের
আমরা যদি বহুজনের কল্যাণের চিন্তা করি তাহলে শান্তি সম্মেলন করতে হবে না
॥ মিলটন বড়ুয়া, বান্দরবান থেকে ফিরে ॥
পূজনীয় আর্য্য শ্রাবক সাধনানন্দ মহাস্থবীর বনভান্তের অনুসারী দেব মানব পুজ্য অরণ্য বিহারী,শ্মশানচারী, ত্রি-চীবরধারী পাংশুকুলিক ড. এফ দীপংকর মাহাথের (ধূতাঙ্গ ভান্তে) বলেছেন, আমরা যদি বহুজনের কল্যণের চিন্তা করি তাহলে শান্তি সম্মেলন করতে হবে না। আমরা সম্প্রদায় বিচার করবো না, মানুষ হিসেবেই বিচার করবো। লোভ, দ্বেষ, মোহ, কামনা-বাসনা নিজের থেকে সৃষ্টি হচ্ছে অথচ দায়ি করা হচ্ছে অন্যকে। শুক্রবার (২৪নভেম্বর) বান্দরবান আর্যগুহা ধূতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারে আয়োজিত ১২ তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে বিকালে একক ধর্মদেশনায় এসব কথা বলেন।
ধূতাঙ্গ ভান্তে বলেছেন, আমার সুখ আছে অথচ আপনাদের নেই, কারণ আপনারা ত্যাগ করতে পারছেন না। মানুষের মনে হিংসা, লোভ, দ্বেষ, মোহ, কামনা-বাসনা এই সবের কারনে সে নিজেই যে ডুবে যাচ্ছে তাওতো বুঝতে হবে। তাই নিজেকে বহির্মূখীতে নয় অন্তর্মূখীতেই দেখতে হবে। বুদ্ধ বলেছেন, বহুজনের কল্যাণে বৌদ্ধ ভিক্ষুগন নগরে নগরে ভ্রমন করবেন। বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলিম ও খ্রস্টান রয়েছে আপনারও বহু কারনে অসংখ্য জন্মে আমার পিতা মাতা ভাই বোন ছিলেন। ভাই-বোন কখনো ভাগ হয় না। আমি জীবন রক্ষা করতে পারি কিন্তু হরণ করতে পারি না। ধূতাঙ্গ ভান্তে আরো বলেছেন, দেখুন সূর্য সবার জন্যই উদীত হয় কারো একার জন্য নয়। জ্ঞানী-গুণী শুদ্ধ পরুষরা কারো এককের জন্য হতে পারে না। দেখুন, জেলে বা ডুবুরী সাগরের তলদেশ থেকে মনিমুক্তা নিতে নৌকার সাথে কোমড়ে দড়ি বেঁধে ডুব দেয় যাহাতে তাঁর দেহটা তলিয়ে না যায়। তেমনি আপনারাও ধর্মের সাথে নিজেকে বেঁধে রাখুন যাতে ডুবে না যান।
ড. এফ দীপংকর মাহাথের (ধূতাঙ্গ ভান্তে) বলেছেন, দেখুন বিশ্বে শতবর্ষী পর্যন্ত নিরোগ মানুষ পাওয়া যায় কিন্তু মানসিক রোগ নেই এমন মানুষ পাওয়া যায় না। যারা ধ্যান সাধনায় রয়েছেন তারাই একমাত্র নিরোগ। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনিকে আহ্বান করে বলেছেন, স্কুল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মানসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার, যাহাতে দেশ জাতি ও সমাজকে রক্ষা করতে।
এর আগে আর্যগুহা ধূতাঙ্গ বিমুক্তি বিহার এর প্রধান দায়ক শ্রী প্রসন্ন কন্তি তঞ্চঙ্গ্যা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের প্রধান দায়ক শ্রী অনক বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে সংঘ মাতা পুঁটি রানি বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। প্রধান সেবক এ্যামিলি তঞ্চঙ্গ্যা, প্রধান সেবিকা হ্যাপী চাকমা, এছাড়াও এ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে বিলাইছড়ির ধুপশীলস্থ ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র এর প্রধান সেবক শুক্রসেন তঞ্চঙ্গ্যা, ফারুয়া আর্য ধূতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারের প্রধান দায়ক সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যা (হেডম্যান), প্রধান সেবিকা নূইলা তঞ্চঙ্গ্যা ও জুরাছড়ির সেবক শান্তি প্রিয় চাকমা সহ এসব বিহার পরিচালনার আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান প্রচারে ক্যামেরায় ছিলেন সেবক বিনয় চাকমা ও শান্তনু বড়ুয়া।
এছাড়াও সকাল পর্বে ভোর সাকালে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষু সংঘের পিন্ড চারণ, পঞ্চশীল গ্রহন, অষ্ট পরিস্কার দান সহ ভিক্ষু সংঘের আহার্য-ব্যবহার্য্য নানান দানীয় সামগ্রী উৎসর্গ করা হয়। পরে বিকাল পর্বেও কঠিন চীবর দান উৎসর্গ করা হয়। সন্ধ্যায় ফানুস উত্তোলন করা হয়। অনুষ্ঠানে হাজারো পূর্নার্থী অংশ গ্রহন করেন।