[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

কেএনএফ এর ভয়ে গ্রাম ছাড়া ৭০ পরিবার ফিরেছেন

৮ মাস ধরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিলাম এসে দেখি ঘর ভাঙ্গা, হাড়ি-পাতিল সহ সবকিছু নষ্ট

১৪৩

॥ আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান ॥
পাহাড়ের নতুন সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সদস্যদের কতৃক নির্যাতণ, নিপীড়ণ, অত্যাচার ও প্রান হারানোর ভয়ে বান্দরবানের প্রত্যন্ত রুমা, রোয়াছড়ি সহ বেশ কিছু গ্রামের পালিয়ে যাওয়া শত শত পরিবারের মধ্যে গত শনিবার থেকে বুবার পর্যন্ত অন্ত ৭০টি পরিবার নিজ গ্রামে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি এবং আইনসৃংখলা বাহিনী ও সম্প্রতি গঠিত শান্তি কমিটির শংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর নানান দাবি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন সহ সকারের নিকট চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। পরে চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে তারা স্থানীয় গ্রামবাসীর উপর অত্যাচার নীপিড়ন নির্যাতন চালালে ঐ দুই উপজেলার প্রত্যন্ত বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষ প্রানভয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বাধ্য হন। কেএনএফ এর ভয়ে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল নিজ বসতভিটে ছেড়ে পালিয়ে যান দুর্গম এলাকার বসবাসরত মারমা, তচঙ্গ্যা, খিয়াং, খুমী,ম্রো ও বম সহ কয়েক সম্প্রদায়ের মানুষ। কেএনএফর এর সদস্যরা ঐসব গ্রামগুলোতে গোলাগুলি ও আতঙ্কত সৃষ্টি করলে পরে আতঙ্কিত পুরিবারগুলো একে একে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র স্থানে চলে যায়। প্রায় আটমাস নিজের ঘরবাড়ি, জন্মভিটা ছেড়ে কেউ ভয়ে জঙ্গলে, কেউ জুমঘরে কেউ আবার আত্বীয়দের বাসায় আশ্রয় নেন। স্থানীয় গন্যমাণ্য ব্যক্তি এবং আইনসৃংখলা বাহিনী ও সম্প্রতি গঠিত শান্তি কমিটি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সহ গ্রামবাসীকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহন করেন। সম্প্রতি বৈঠকের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষ নিজ নিজ বসত ভিটায় ফিরেছেন অন্তত ৭০ পরিবার। তবে এখনো অনেকেই বাইরেই অবস্থান করছেন। টানা আট মাস পর নিজেদের বসতভিটায় ফিরে আসলেও দেখা দিয়েছে খাবারের চরম সংকট। এতে গ্রামবাসীদের মাঝে কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।

এদিকে, গেল ৫ নভেম্বর রুমা উপজেলার পাঁচকিলো অদূরে মুনলাই পাড়ার গ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এর সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি প্রথম পর্যায়ের সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শান্তি কমিটির সভাপতি ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা এর নেতৃত্বে টানা কয়েক ঘন্টা বৈঠকের শেষে চারটি বিষয় ও দাবি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। এরপরই ক্ষতিগ্রসত গ্রামগুলোর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠে। প্রথম বৈঠক শেষে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গত শনিবার পাইক্ষ্যং পাড়া, থানচি প্রাতা পাড়া বম সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা ফিরে এসেছেন। এছাড়াও মারমা, তচঙ্গ্যা, খিয়াং, খুমী, ম্রোসহ অনান্য পরিবারও ফিরতে শুরু করেছে। জানা গেছে, রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৩৪১ পাইক্ষ্যং মৌজায় ১২টি গ্রাম রয়েছে। সেসব গ্রামের মানুষজন ঐ সময় আতঙ্কিত হয়ে সবাই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ১২টি গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খামতাং পাড়া ও পাইক্ষ্যং পাড়া। তাছাড়া সে সময় সবগ্রাম মিলে ১০টি পরিবার মাত্র জুম চাষ করতে পেরেছিল। পরিস্থিতি বেশী খারাপ হওয়ায় ৭৭টি পরিবার জুমচাষও করতে পারেনি। বর্তমানে বেশ কিছু পরিবারগুলো ফিরে আসলেও এখন গ্রামে গ্রামে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। একই স্বরুপ থানচি দুর্গম এলাকার প্রাতা পাড়াতে যেসব পরিবার ফিরে এসেছেন সেখানেও দেখা দিয়েছে চরম খাবারের সংকট। স্থানীয় প্রশাসন, গঠিত শান্তি কমিটি, আইনসৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা উদ্যোগ না নিলে খাবারের সংকট দ্রুত মোচন করা যাবে না বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

পাইক্ষ্যং পাড়া ও প্রাতাপাড়া কারবারী পিতর বম ও পার্কেল বম জানান, আট মাস ধরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিলাম। এখন এসে দেখি ঘর ভাঙ্গা, হাড়ি-পাতিলসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে মুল সমস্যা হল খাবার। বিভিন্ন সমস্যার কারণে জুম চাষ করতে পারিনি।

মৌজার হেডম্যানরা জানিয়েছেন, গত শনিবার পাইক্ষ্যং পাড়াতে ৯৭ পরিবারদের মাঝে ৫৭ টি পরিবার ফিরে এসেছে। বুধবার আরো ২টি পরিবার এসেছেন। প্রাতা পাড়াতে ২৮টি পরিবারের ১১টি পরিবার ফিরে এসেছেন। সব মিয়ে এ পর্যন্ত ৭০ পরিবার ফিরেছেন। তবে কেউ কেউ শহরে আবার কেউ অন্য গ্রামে বসবাস করছেন। তারা ফিরবেন কিনা সেটি জানাতে পারছেন না। অনান্য গ্রামগুলোতে যোগাযোগের করতে না পারায় খবর নেওয়া যায়নি। তবে এখন সব গ্রামেই খাবারের সংকটে ভুগছে পালিয়ে যাওয়া গ্রামবাসীরা।

বম সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লাল জার লম বম জানান, প্রথম সংলাপ শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াতেই মানুষজন গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে। গ্রামের খাদ্য সংকটের বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এর সাথে কথা হয়েছে। জেলা পরিষদ থেকে সহযোগীতা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রোয়াংছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান চহাইমং মারমা জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পাইংক্ষ্যং পাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া অনেক পরিবার এখন নিজ এলাকায় ফিরে এসেছেন। তবে খাদ্য সংকটের বিষয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। সম্মতি পেলে সেসব এলাকায় সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে থানচি উপজেলায় ইউএনও আবুল মনসুর জানান, ফিরে আসা পরিবারদের মাঝে যেহতু খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে সেহেতু প্রশাসনের পক্ষ থেকেদ্রুত সহযোগিতা করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে বান্দরবানে কেএনএফ নামে নতুন একটি সশস্ত্র সংগঠন তৎপরতা শুরু করে। এই সংগঠনটির সাথে সংঘর্ষে ও তাদের পুতে রাখা বিস্ফোরকে সেনা সদস্যসহ এ পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হয়। গ্রেপ্তার হয়েছে কেএনএফ’র এর ১৭ জন সদস্য। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধি নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন সহ সরকারের পক্ষে উদ্যোগ গ্রহন করলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসছে।