পরিবেশ অধিদফতরের কঠোর নজরদারিতেও থামানো যাচ্ছে না
পাহাড় কেটে কটেজ নির্মাণের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
॥ আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান ॥
পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড় কাটার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। চলছে পাহাড় কাটার মধ্যে দিয়ে অনেকের কটেজ নির্মাণের মহোৎসব। পরিবেশ অধিদফতরের কঠোর নজরদারিতেও থামানো যাচ্ছে না ওই এলাকায় পাহাড় কাটা। উল্টো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অগোচরে বেড়েই চলেছে একের পর এক পাহাড় কাটার ঘটনা। তাছাড়া নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশ ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
বান্দরবানের লামা-ফাইতং সড়কের পাহাড় কেটে কটেজ নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে লামা গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মারমা বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি লামা উপজেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। পরিবেশ ও প্রশাসনের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই কয়েকদিন ধরে পাহাড় জুড়ে চারিদিকে নির্বিচারে কাটছেন পাহাড়। প্রকাশ্যেভাবে পাহাড় কাটলেও তার বিরুদ্ধে এখনো নেওয়া হয়নি কোনো আইনি ব্যবস্থা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে,গত মাসে ১৯ তারিখ থেকে রিসোর্ট তৈরী করতে পাহাড় কাটা শুরু করেছেন। পাহাড়ের আশাপাশে গজিয়ে উঠা বনাঞ্চল ধ্বসের পর এবার থেমে থেমে চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। সেখানে উন্নত মানের কটেজ কিংবা রিসোর্ট তৈরী করতে এরই মধ্যে কিছু কিছু উচুঁ পাহাড়কে ড্রেসিং করে সমতল করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যন ওমর ফারুক বলেন, নিজ পাহাড়ের উপর তিনি কটেজ ও রিসোর্ট বানাবেন। যাতায়াতের জন্য সড়ক তৈরী করতে পাহাড়কে কিছুটা ড্রেসিং করে লেভেল করে দেয়া হয়েছে। তিনি এখন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ায় পরে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান।
স্থানীয় অনেকের অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার প্রভাব খাটিয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য ধ্বংস করে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। চারিদিকে সবুজ অরণ্যের বনাঞ্চল ধ্বসের পর উচুঁ পাহাড়কে কেটে সমতল করে চলেছেন। এমনকি বড় যন্ত্র এর সাহায্যে দুই পাহাড়কে বিভক্ত করে তৈরী করা হয়েছে সড়ক পথ। তাছাড়া সড়কের পাশ্ববর্তী হওয়াতেই পাহাড় ধ্বসে আশঙ্কাও রয়েছে।
এদিকে পরিবেশ সংরণ আইন, ১৯৯৫ ধারা ৬ এর (খ) স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারী বা আধা- সরকারী বা স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। যা সংশ্লিষ্ট আইনে শাস্তি যোগ্য অপরাধ। পরিবেশ আইন ও উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনা থাকার পরও থেমে নেই পাহাড় কাটা।
সম্প্রীতির গত শুক্রবার সরজমিনে দেখা গেছে, লামা-ফাইতং সড়কের ৮ কিলোমিটার নামক স্থানে সড়ক ঘেষে একটি বিশাল পাহাড়। সে পাহাড়ের উপর কটেজ নির্মাণের প্রস্তুতির নিচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান। বড় যন্ত্রের সাহায্যে চারিপাশে পাহাড় কেটে মাঠ তৈরী করা হয়েছে। সেখানে উচুঁ পাহাড় কেটে সমতল করে স্থাপন করেছেন একটি বাশে বেড়া ঘর। পাহাড়কে সমানতলে পরিণত করতে প্রতিদিনই কাজ করছেন আট থেকে নয়জন শ্রমিক। প্রায় কয়েকদিন যাবত চেয়ারম্যানের নির্দেশনার অনুযায়ী পাহাড় কেটে চলেছেন শ্রমিকরা। এখনো সেটি চলমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকরা জানিয়েছেন, গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মারমা নির্দেশনায় তারা কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে পাহাড় কেটে কটেজ স্থাপন করা হবে।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হয় লামা উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মারমার সাথে। পাহাড় কাটার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি পাহাড় কাটিনি উচুঁ পাহাড়কে লেভেল করার জন্য সমতল করা হয়েছে। কয়েকদশক আগে সেখানে রাস্তাও ছিল। সেখানে পরিদর্শনে এসেছে লামা উপজেলার ইউএনও।
এবিষয়ে লামা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি ধরেননি।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফখর উদ্দিন জানান, সরজমিনে গিয়ে সেটি পরিদর্শন করা হবে। পাহাড় কাটা প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।