[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

আলীকদমে কল্প জাহাজ (রথ) বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে “ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে”

৮৬৯

॥ সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ,আলীকদম ॥

প্রবারণা পূর্নিমার বাঁধ ভাঙ্গা জোসনার আলোতে শতশত ফানুস বাতির ঝিলিক। আঁতশবাজিতে উজ্জল রাতের আকাশ। অন্যদিকে মারমা তরুন তরুনীদের মুখে মুখে “ছংরাসিহ্ ওয়াগ্যোয়াই লাহ্ রাথা পোয়ে: লাগাইমে” (অর্থাৎ ওয়াগ্যোয়াই এসেছে, এসো সবাই মিলে মিশে রথযাত্রায় যাই)। মারমা এই গানের সুরের মুর্ছনায় মুখরিত বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মার্মা পল্লীগুলোতে।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩ ঘটিকা হইতে আলীকদম কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের মাতামুহুরি নদীর ঘাটে ছিল উৎসবের মিলন মেলা। মাঠ থেকে শতাধিক ফানুস বাতি উড়ানো হয়। আলীকদম কেন্দ্রীয় প্রবারণা উৎসব ও জাহাজ ভাসানো উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি অংহ্লাচিং মার্মা হেডম্যানের সভাপতিত্বে এবং প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব উদযাপন কমিটির প্রদান সমন্বয়ক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অংশে থোয়াই মার্মার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ সোয়াইব ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলীকদম সেনাজোনের (৩১বীর) জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মোঃ সাব্বির হাসান পিএসসি,আলীকদম কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত উ ওয়ানিকা মহাথের।

উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জামাল উদ্দীন এমএ, বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য দুংড়ি মং মার্মা, আলীকদম থানার অফিসার ইনর্চাজ ওসি খন্দকার তবিদুর রহমান, ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাত পুং ম্রো, ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিনসহ বিভিন্ন এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আলীকদমে উদযাপিত হয়েছে কল্প জাহাজ ভাসানো উৎসব।

রঙিন কাগজের নান্দনিক কারুকাজে বাঁশ, বেত,কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় কল্পজাহাজ। পাঁচ-ছয়টি নৌকার ওপর বৌদ্ধ প্যাগোডা, জাদী বা চূড়া, ড্রাগন, ময়ূর, সিংহসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতির কল্পজাহাজ গুলো সোমবার বিকেলে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাসানো হয় মাতামুহুরী নদীতে।

বৈচিত্র্য নির্মাণ শৈলীর ৩টি কল্পজাহাজ নাচে- গানে বুদ্ধ কীর্তনে মাতামুহুরী নদীর এপার থেকে ওপারে ভেসে চলে। সম্প্রীতির মহামিলন এ উৎসবে নদীর দু’কূলে আনন্দে মাতোয়ারা হয় বৌদ্ধরাসহ সকল ধর্মের শত শত নরনারী। আলীকদম উপজেলার বাবু পাড়া,নয়াপাড়া, বাজার পাড়া, অংবাই পাড়া, মংচা পাড়া, মংচিং হেডম্যান পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের ৩টি কল্পজাহাজ বাসানো হয় নদীতে। সন্ধ্যায় ফানুস উত্তোলন উৎসব ও নদীতে হাজারো মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে মাতামুহুরী নদীর তীরে।

উল্লেখ্য বৌদ্ধরা প্রায় ২৫০ বছর আগে তৎকালীন ধণার্ঢ্য রাখাইন বৌদ্ধরা প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রাচীন কাল থেকে মাতামুহুরী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসানো প্রচলন শুরু করেন। জাহাজ ভাসানো উৎসবের প্রচলন হয় পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে মুরহন ঘা নামক স্থানে একটি নদীতে মংরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম এ উৎসব উদযাপন করা হয়। শতবছর ধরে প্রবারণা পূর্ণিমায় মার্মা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন নদীতে কল্পজাহাজ ভাসা উৎসব আয়োজন করে আসছে। আলীকদমের এ বর্ণাঢ্য জাহাজ ভাসা উৎসব বৌদ্ধদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হলেও, কালক্রমে সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে সম্প্রীতির মহামিলন উৎসবে উদযাপিত হয় এই দিনটি।